শিক্ষকের অর্থেই উন্নয়ন শিক্ষাকেন্দ্রে
ড়, বৃষ্টি কিংবা শরীর খারাপকোনও কিছুই দমাতে পারে না মাস্টারমশাইকে। কালনা ২ ব্লকের অকালপৌষ পঞ্চায়েতের কুতুবপুর গ্রাম। ২০০৩ সাল পর্যন্ত এই গ্রামের কাছাকাছি কোনও উচ্চ বিদ্যালয় ছিল না। এরপর গ্রামে একটি মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র তৈরির অনুমোদন মেলে। সেখানে শিক্ষকতার জন্য আবেদন করে মনোনীত হন সংস্কৃত ও বাংলায় স্নাতকোত্তর স্থানীয় তেহাট্টা গ্রামের গদাধর পাল। সেই শুরু। এরপর অনেক বাধা পেরিয়েছে এই শিক্ষাকেন্দ্র। সব সামলে নিজের বেতনের টাকা গদাধরবাবু ফিরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষাকেন্দ্রকেই।
সহ শিক্ষক মনোজমোহন ঘোষালের সঙ্গে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। সেখানেই জমা হয় তাঁর বেতন। সেই অর্থ খরচ হয় স্কুলের উন্নয়নে। শিক্ষাকেন্দ্র সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই অ্যাকাউন্টের অর্থের পরিমাণ পাঁচ লক্ষ ছাড়িয়ে গিয়েছে। এই তহবিল থেকেই স্কুলে আলো-পাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুরুর দু’বছর শিক্ষাকেন্দ্রের নিজস্ব ঘর ছিল না। ক্লাস হতো স্থানীয় প্রাথমিক ও অঙ্গনওয়ারী কেন্দ্রে। কখনও কখনও গাছতলায়।
গদাধর পাল। —নিজস্ব চিত্র।
২০০৫ সালে শিক্ষাকেন্দ্রের পাকা ঘর তৈরি করতে উদ্যোগী হন গদাধরবাবু। প্রাথমিক ও অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের কাছে ১৬ শতক জমি দান করেন স্থানীয় ঝিকড়া গ্রামের বাসিন্দা মুনসি মহম্মদ ইয়াসিন। প্রয়োজনীয় অর্থ সংগ্রহে গদাধরবাবুর নেতৃত্বে এগিয়ে আসে গ্রামবাসীরা। কেউ কেউ স্বেচ্ছাশ্রমও দেন। কিছুদিন পরে মেলে সরকারি সাহায্য। বর্তমানে এখানে দুই থেকে বেড়ে বর্তমানে শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা আট। ঘরের সংখ্যা ছয়। ছাত্রছাত্রী তিনশোর বেশি। পড়ানো হয়অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। স্থানীয় বাসিন্দা ও শিক্ষাকেন্দ্রের বাকি শিক্ষকেরা এই সাফল্যর জন্য কৃতিত্ব দিচ্ছেন গদাধরবাবুকেই। সেই সাফল্যকেই এ বছর স্বীকৃতি দিয়েছে রাজ্য সরকার। শিক্ষক দিবসের দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে কলকাতায় এক অনুষ্ঠানে গদাধরবাবুকে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার দেওয়া হয়। সম্প্রতি নিজের শিক্ষাকেন্দ্রে তাঁকে সংবর্ধনা দেয় শিক্ষক ও ছাত্রছাত্রীরা।
চার কিলোমিটার সাইকেল ঠেঙিয়ে প্রতিদিন শিক্ষাকেন্দ্রে আসেন তিনি। টানা দশ বছরের শিক্ষকতা জীবনে এখনও পর্যন্ত একদিনই ছুটি নিয়েছেন এই শিক্ষক। সে দিন তাঁর মায়ের চোখে অস্ত্রোপ্রচার ছিল। শিক্ষাকেন্দ্রের ছাত্রছাত্রীদের কথায়, “স্যার আমাদের কখনও বকেন করেন না। ভুল করলে শুধরে দেন। স্যার ছাড়া স্কুলের কথা আমরা ভাবতেই পারি না।” শিক্ষাকেন্দ্রের সম্পাদক শেখ সামসের আলি ও স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পরেশনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “গদাধরবাবুর অবদান আমাদের অনুপ্রাণিত করে।” প্রাথমিক বিদ্যালয়টির অপর শিক্ষক পুষ্পল চক্রবর্তী বলেন, “উনি এক কথায় পরশপাথর।”
নিজের প্রতি মাসের বেতন শিক্ষাকেন্দ্র উন্নয়ন তহবিলে দিয়ে দেন। ছুটি নেন না। ব্যক্তিগত জীবনে সমস্যা হয় না? ভাবলেশহীন গলায় গদাধরবাবু বলেন, “বিয়ে করিনি। পারিবারিক জমি আছে। যেটুকু অর্থের প্রয়োজন হয় সেখান থেকে পেয়ে যাই। শিক্ষাকেন্দ্রকে নিজের সংসার বলেই মনে করি। ছাত্রছাত্রীদের জন্য কিছু করার চেষ্টা করি।”
সেই চেষ্টাতেই আলোকিত হচ্ছে কুতুবপুর মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.