বোর্ড গঠনের দিন আসবে মুখবন্ধ খাম। তা খুলেই জানা যাবে, কাকে পুরপ্রধান বেছেছেন তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
বর্ধমান ও গুসকরার নির্বাচিত সমস্ত কাউন্সিলরকে কলকাতায় তৃণমূল ভবনে ডেকে পাঠিয়েও ঐকমত্য না হওয়ায় এ ভাবেই ওই দুই জায়গার পুরপ্রধানের নাম জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুলবাবু বলেন, “দলীয় স্তরে আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বোর্ড গঠনের দিন খামে করে সংশ্লিষ্ট পুরসভায় নাম পাঠিয়ে দেওয়া হবে।”
রবিবার তৃণমূল ভবনে আয়োজিত ওই বৈঠকে হাজির ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়। ছিলেন দলের বর্ধমানের অন্যতম পর্যবেক্ষক অলোক দাস, জেলার দুই মন্ত্রী মলয় ঘটক ও স্বপন দেবনাথ। তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ৩৫-০ ফলে জেতা বর্ধমান পুরসভার সব কাউন্সিলরের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পরেও পুরপ্রধান নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। শুধুমাত্র বর্ধমান পুরসভায় দলনেতা নির্বাচিত করা হয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জয়ী শৈলকুমার ঘোষকে। কাউন্সিলরদের শপথগ্রহণ সভায় সভাপতিত্ব করবেন ২৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দ্বিতীয় বার জয়ী খোন্দকার মহম্মদ সহিদুল্লাহ। দু’টি পুরসভার বোর্ড গঠনে দলের পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকবেন মলয়বাবু।
এ দিন বৈঠক শেষে অলোকবাবু বলেন, “২৩ অক্টোবর শৈলবাবুর হাতে পৌঁছবে দলের একটি মুখবন্ধ খাম। তাতেই লেখা থাকবে বর্ধমানের পুরপ্রধানের নাম। সমস্ত কাউন্সিলরের শপথ শেষে ওই খাম খোলা হবে।” নিজেদের পছন্দের লোক পুরপ্রধান না হলে তো দলের অনেক কাউন্সিলর ক্ষুব্ধ হতে পারেন। সেই পরিস্থিতি সামলানো হবে কী করে? অলোকবাবুর জবাব, “বর্ধমানের ৩৫ জন কাউন্সিলর এ দিনের বৈঠকে লিখিত ভাবে জানিয়েছেন, ওই পদে দল যাঁকে মনোনীত করবে, তাঁকেই সবাই মেনে নেবেন।”
তৃণমূলের জেলা (গ্রামীণ) সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “২৩ তারিখ প্রথমে স্পন্দন কমপ্লেক্সে দলের ৩৫ জন কাউন্সিলর শপথ নেবেন। তার পরে তাঁরা যাবেন পুরসভার সভাগৃহে। সেখানে একমাত্র কাউন্সিলররা এবং তিন মন্ত্রী মলয় ঘটক, রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়র ও আমি উপস্থিত থাকব। আমাদের সামনে বন্ধ খাম খুলে দেখা হবে দলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী কাকে পুরপ্রধান করেছেন। উপপ্রধান ও পুরপিতা পরিষদ সদস্যদের নাম পরে ঠিক করা হবে।” পুরসভার সভাগৃহে পুরপ্রধানের নাম ঘোষণার সময়ে সংবাদমাধ্যমকেও থাকতে দেওয়া হবে না বলে তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, বর্ধমানের ক্ষেত্রে এই ধরনের সামান্য অগ্রগতি হলেও গুসকরা পুরসভার বোর্ড নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তই হয়নি। কোনও দলনেতাও নির্বাচন হয়নি। এই ঘটনায় গুসকরার প্রাক্তন পুরপ্রধান চঞ্চল গড়াইয়ের অনুগামীরা ক্ষুব্ধ। তাঁদের দাবি, গুসকরায় জনসভায় মুকুলবাবু ঘোষণা করেছিলেন, চঞ্চলবাবু পরবর্তী পুরপ্রধান হবেন। কিন্তু এখন দল এ ব্যাপারে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারছে না। তৃণমূলের এক রাজ্য স্তরের নেতা অবশ্য এ দিন বলেন, “মুকুলবাবু গুসকরার কাউকে পুরপ্রধান বলে ঘোষণা করেননি। চঞ্চলবাবুর ওই পদে বসার সম্ভাবনা কম বলেই আমার মনে হচ্ছে।”
তৃণমূলের একটি সূত্রের খবর, বর্ধমানের পুরপ্রধান হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন স্বরূপ দত্ত। গুসকরার ক্ষেত্রে পাল্লা ভারী বুর্দ্ধেন্দু রায়ের দিকে। যদিও রাজ্য তৃণমূল নেতারা জানান, কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন দলনেত্রী। মুখবন্ধ খাম খোলার আগে তাই এ ব্যাপারে আর কিছু জানার উপায় নেই।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি সেপ্টেম্বরে আরও যে ছ’টি পুরসভা তৃণমূল দখল করেছে, সেগুলির পুরপ্রধান নিয়েও। সব ক্ষেত্রেই বোর্ড গঠনের দিন মুখবন্ধ খামে করে নাম পাঠানো হবে, জানিয়েছেন দলের রাজ্য নেতারা। |