হিটলারেরও কি ভাইরাল জ্বর হত
‘তাকত কি আসলি পাওয়ার উসকো ছুপাকে রাখনে মে হ্যায়!’
দাঁতে দাঁত চেপে ‘সত্য ২’য়ের ট্রেলারে এই লাইনটা বলে চলেন পুনিত সিংহ রত্ন। একগাল দাড়ি। চোখ নামানো। পরবর্তী দৃশ্যে একটা হাত বন্দুকধারী এক ব্যক্তির পিঠ চাপড়ে চলে যায় ফ্রেমের বাইরে। তার পর গুলির শব্দ।
রামগোপাল বর্মা ‘সত্য’ বানিয়েছিলেন মনোজ বাজপেয়ীকে নিয়ে। ১৯৯৮-এ এক সময় বলেছিলেন যে ‘সত্য’ বানানোর আগে তাঁর হাতে যত ‘রিসোর্স মেটিরিয়াল’ ছিল, সে তুলনায় তিনি নাকি একটা মাঝারি মানের ছবি বানিয়েছিলেন।
২০১৩য় বসে ‘সত্য ২’ বানিয়ে তিনি বলেছেন যে এই সিনেমার সঙ্গে আগেকার ছবির কোনও মিল নেই। ‘গ্যাংস্টার’ সিনেমা ঠিকই, কিন্তু ‘সত্য ২’ য়ের মূল নায়ক এমন একজন যার নাকি এর আগে রিল বা রিয়েল লাইফে কোনও রেফারেন্স পাওয়া যায় না। পুনিতের সঙ্গে আরজিভির (রামগোপাল বর্মা) দেখা হওয়ার ঠিক দশ মিনিটের মধ্যে রোলটা তাঁকে দেওয়া হয়।
‘সত্য ২’য়ে পুনিত সিংহ রত্ন ও অ্যানাইকা সোটি
কী দেখেছিলেন আরজিভি এই পুনিতের মধ্যে? উদয়পুরে বড় হয়ে ওঠা পুনিত কোনও ফিল্মি পরিবার থেকে উঠে আসেননি। “একদম বাজে ছাত্র ছিলাম। এতটাই বাজে যে ক্লাস এইটে পড়াকালীন স্কুল থেকে আমাকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। মা তো সেই শুনে একদম ফিল্মি কায়দায় মুষড়ে পড়েন। বলেন, ‘তু মেরা বেটা নহি হো সকতা।’ বাবার খারাপ লাগলেও বলেছিলেন, পড়াশোনা করলে ওঁর ভাল লাগবে। কিন্তু তা না করলেও উনি আমাকে সাপোর্ট করবেন। প্রাইভেটে আমি ক্লাস টেনের পরীক্ষাটা দিই। আসল ব্যাপারটা হল আমার পড়াশোনা দু’চোখের বিষ। আমার একমাত্র ভালবাসা সিনেমা। এমন দিনও গিয়েছে যখন আমি পাঁচটা করে সিনেমা দেখেছি।”
প্রকাশ ঝা যখন ‘রাজনীতি’ পরিচালনা করেন তখন পুনিত তাঁর সহকারী। আরজিভি যখন পুনিতকে দেখেন তখন ওঁর চোখের মধ্যে এক ধরনের হিমশীতলতা খুঁজে পান। “মনে হয়েছিল যেন একটা কুণ্ডলী পাকিয়ে থাকা গোখরো সাপ। চোখ দিয়ে সে কথা বলে। তার ফিসফিস আওয়াজই যেন হুঙ্কার। যা সত্য চরিত্রে প্রয়োজন ছিল,” বলেন আরজিভি।
তা ‘সত্য’র মনোজ বাজপেয়ী আর ‘সত্য ২’ য়ের পুনিতের তফাতটা কোথায়? এর উত্তরে পুনিতের সাফ জবাব, “মনোজ বাজপেয়ীর নাম তো সত্য ছিল না সিনেমায়। ‘সত্য ২’য়ে আমার নামই সত্য। আমি তো ভেবেছি মনোজকে ছবিটা দেখতে অনুরোধ করব। বলব, নতুন কিছু একটা বানিয়েছি এসে দেখে যান।”
তবে রামুর উত্তরটা একটু আলাদা। তিনি বলেন, “‘সত্য’র ভিখু মাত্রে ছিল ভঙ্গুর। কী ভাবে যেন জড়িয়ে পড়ে আন্ডারওয়ার্ল্ডে। আর যখন সেখান থেকে বেরোতে চায় তখন দেখে যে খুব দেরি হয়ে গিয়েছে। ও পরিবেশের শিকার,”
কিন্তু সত্য তা নয়। সে পরিস্থিতি তৈরি করে। একটা পরিকল্পনা অনুযায়ী সব কিছু সাজায়। আর একটার পর একটা গুটি সরাতে থাকে। “কিন্তু ওকে দেখে কখনও ‘গ্যাংস্টার’ মনে হবে না। টাফ লাগে না দেখতে। একটা অদ্ভুত কাঠিন্য রয়েছে চরিত্রের মধ্যে। ‘সত্য’ বানানোর আগে আমি এক জনের কথা শুনেছিলাম। তার চরিত্রের কিছু দিক নিয়ে সৃষ্টি হয় ভিখু মাত্রে। সত্য ইজ এ ফ্যান্টাসি আই ক্রিয়েটেড। ভিখু ওয়াজ রিয়েল। সত্য ইজ আনরিয়েল ইন এ পজিটিভ ওয়ে। আমি ভাবতেই পারব না যে, সত্যের মতো একটা মানুষ সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজে। বা তার সর্দি লাগে। এই ধরুন হিটলারউনিও তো রক্ত-মাংসের গড়া মানুষ। কিন্তু আমরা কি ভাবতে পারি হিটলারের ভাইরাল ফিভার হত? হত নিশ্চয়ই, কিন্তু আমরা ভাবতে পারি না। ওর সম্পর্কে এমন একটা ভীতি তৈরি হয়েছে যে এই সব কথা মাথায়ই আসে না। এই সত্যও তাই। সত্যকে দেখলে আমার সম্ভ্রম জাগে,” বলছেন আরজিভি।
ভিখু মাত্রে দারুণ বাস্তব এক চরিত্র। আর সত্য হল আমার তৈরি এক ফ্যান্টাসি
রামগোপাল বর্মা
‘সত্য ২’ আমার ‘সত্য’র থেকে একদম আলাদা। আমার কাছে ওটা এক বন্ধুর তৈরি ছবি
মনোজ বাজপেয়ী
তা, এমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে একদম আনকোরা একজন অভিনেতাকে নেওয়ার ঝুঁকিটা বেশি হয়ে গেল না? যখন তাঁর আগের ছবি ‘দ্য অ্যাটাকস অব ২৬/১১’ সে ভাবে দাগ কাটেনি। “লোকে কী বলে তাতে আমি ভয় পাই না। প্রতিষ্ঠিত অভিনেতারা অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাগেজ থাকে। নতুনদের ক্ষেত্রে তা হয় না। সিনেমা লোকের ভাল নাও লাগতে পারে,” বলছেন আরজিভি। আরও বলেন, তবে পুনিতকে উপেক্ষা করা কঠিন। “আপাতত আন্ডারওয়ার্ল্ড সম্পর্কে যা কিছু জানি আমি, এই ছবিতে উজার করে দিয়েছি। এই মুহূর্তে মনে হয় না আর কোনও আন্ডারওয়ার্ল্ড ছবি বানানোর রসদ আমার কাছে আছে। লোকে ভাবে অপরাধী মানে তার সব কিছুই খারাপ। কিন্তু তা নয়। প্রত্যেক ক্রিমিনালের কাছে তার প্রতিটা কাজের একটা যুক্তি আছে। পুনিতের চরিত্রটি শিক্ষিত। কর্পোরেটের মতো তার গ্যাং-টা চালায়। কোনও মাওয়ালি গুন্ডা নয়। একদম দার্শনিকের মতো দেখতে। হঠাৎ দেখলে মনেই হবে না যেন এই রকম কিছু কাজ করতে পারে,” বলছেন আরজিভি।
এই কথা শুনে হঠাৎ মনে পড়ে যায় ওসামা বিন লাদেনের কথা। আন্ডারওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তার যোগ নিয়ে কথা হচ্ছে না এখানে। তবু মুখ দেখলে অনেকেই সন্ত্রাসের সঙ্গে তার যোগসূত্র খুঁজে পাননি। “হ্যাঁ, চোখের গভীরে না তাকালে বোঝাই যায় না ও ঠান্ডা মাথায় কী করতে পারত। সত্যও অনেকটা ওই রকম। এমনি দেখলে মনে হবে যেন পাশের বাড়ির শিক্ষিত এক অল্পবয়সি ছেলে,” বলছেন আরজিভি। আর পুনিতের ভাষায়, “এই রকম একটা চরিত্র করতে গিয়ে আমার একটাই ব্রিফ ছিল, এমন কিছু কোরো না, যা আগেকার পরদার ডনেরা করেছেন।”
এই না বুঝতে দেওয়াটাই কি এই চরিত্রের আসল ক্ষমতা? “আলবাত তাই। যে কোনও পাওয়ারহাউজের আসল শক্তিটাই এখানে। সে নিজেকে জাহির করে না। কোনও দেখনদারি নেই। এটা জীবনের সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য,” বলছেন পুনিত।
পুনিত সিংহ রত্ন
আর ফিল্ম-দুনিয়াতে কি একই রীতি? উত্তরে আরজিভি বলেন, “ওখানে একটা অদ্ভুত টানাপোড়েন চলে। নিজের ইগো যা বলে, জাহির কোরো না। আর অন্য দিকে ফিল্ম বিপণনের নিজস্ব প্রয়োজনীয়তা পরিচালকদের এমন কিছু প্রচার করতে বাধ্য করে যাতে শুক্রবার ছবির ভাল ‘ওপেনিং’ পাওয়া যায়। তবে এখানেও একটা যুক্তি প্রযোজ্য। যা প্রচার করা হয় তা তো থাকতেই হবে সিনেমাতে। কিন্তু তা ছাড়াও আরও কিছু থাকা দরকার যা একমাত্র ফিল্মটা হলে দেখার পরই আবিষ্কার করা যায়। সেটাই ফিল্মের আসলি তাকত।”
তবে এই শুক্রবার মুক্তি পেতে চলা ‘সত্য ২’-য়ের ‘আসলি তাকত’টা কোথায়? আরজিভি? পুনিত? না কি গল্পের জোর? আরজিভি বলেন, “না। টাকা রোজগার বা ক্ষমতার লোভ ছাড়া অন্য কীসের জন্য একজন ‘গ্যাংস্টার’ আন্ডারওয়ার্ল্ডের নতুন নিয়ম সৃষ্টি করে? সেই উত্তরই খুঁজছি এই ছবিতে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.