ইশান্তের সঙ্গে কাঠগড়ায় ধোনির স্ট্র্যাটেজিও
হেন্দ্র সিংহ ধোনি আজ নিজের বিখ্যাত কপালকে অক্লেশে দোষ দিতে পারেন। একটা নয়, দু’টো কারণে। প্রথমটা যদি পুরোপুরি ঘোরতর মন্দভাগ্যের নির্দশন হয়, দ্বিতীয়টা অতি অবশ্যই ক্রিকেটীয়।
মোহালির শনিবাসরীয় সেঞ্চুরিটা ধরলে এই নিয়ে ক্যাপ্টেন কুলের শেষ দু’টো মহাকাব্যিক ওয়ান ডে সেঞ্চুরি ভারত মহাসাগরে তলিয়ে গেল। গত ডিসেম্বরের পাকিস্তানের পর অক্টোবরের মোহালির অস্ট্রেলিয়া। সে দিন জুনেইদ খানের ভয়াবহ সুইংকে পাল্টা দিয়ে অপরাজিত ১১৩ করে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ক্যাপ্টেন কুল। ৩০-৫ থেকে দেশকে ভদ্রস্থ অবস্থায় পৌঁছে দিয়ে। এ দিন জুনেইদের সুইংয়ের বদলে জনসনের পেস, শর্ট পিচড ডেলিভারির অক্লান্ত ‘ফায়ারিং’, ১৫৫-৬-এর আতঙ্কের স্কোরবোর্ড, পেশির টান, আঙুলের চোট সব সুদে-আসলে ফিরিয়ে দিল অপরাজিত ১৩৯। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতে দু’বার মহেন্দ্র সিংহ ধোনি আবিষ্কার করলেন, পরাক্রমী ব্যাটসম্যান হিসেবে আবির্ভূত হয়েও শেষ পর্যন্ত তাঁকে পরাভূত হয়েই ফিরতে হচ্ছে!
এবং ডিসেম্বরের চেন্নাইয়ে যদি ভারতীয় বোর্ডের ডিআরএস নিয়ে অহেতুক গোঁয়ার্তুমি ডুবিয়ে থাকে, তা হলে শনিবারের মোহালিতে তাঁকে ডুবিয়ে গেলেন একজন।
নাম চাই? ইশান্ত শর্মা থাকতে আর কাউকে ভাবা যায় নাকি?
রাত সাড়ে ন’টা। একটু আগে ফকনারের শেষ ওভার বাউন্ডারিটা গ্যালারিতে পড়েছে, মোহালি বাইশ গজে অস্ট্রেলীয়দের নাচানাচি তখনও থামেনি। একাকী ভারত অধিনায়ককে আবিষ্কার করা গেল, ড্রেসিংরুমের দিকে আনমনে এগোচ্ছেন। কিপিং গ্লাভসটা খোলেননি, মুখচোখ অসহ্য রাগে থমথম করছে, গ্লাভস-শুদ্ধু হাত মুঠো করে শূন্যে কয়েক বার ঘুঁষিও মেরে বসলেন! একটু পর প্রাইজ ডিস্ট্রিবিউশনে এসে রবি শাস্ত্রীকে বলেও গেলেন, “আন্তর্জাতিক বোলারদের কি আর চামচ দিয়ে খাইয়ে দেওয়ার মতো করে বোঝানো যায়! বোলারদের সঙ্গে ওভারের মাঝে আর কী কথা বলব?”
ফকনার: ২৯ বলে ৬৪*

ফকনারের ছক্কায় ম্যাচ অস্ট্রেলিয়ার। হতাশ বিনয় কুমার। শনিবার মোহালিতে। ছবি: পিটিআই।
ক্যাপ্টেন কেন আর ‘কুল’ নেই, সেটা দুর্বোধ্য নয়। টিমের তথাকথিত এক নম্বর পেসার যদি মোক্ষম সময়ে এক ওভারে তিরিশ গিলে বসেন, বিপক্ষকে নির্ঘাৎ হারা ম্যাচ প্লেটে করে তুলে জিতিয়ে দেন, কোনও অধিনায়কেরই উর্ধ্ববাহু হয়ে উৎসবের ইচ্ছে হবে না। কিন্তু ধোনি নিজেও দায় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যেতে পারেন কি? চলতি সিরিজে ইশান্তের ‘ভুবনভোলানো’ ফর্ম চলছে। কোনও ম্যাচেই ওভার পিছু আট-সাড়ে আটের কম কিছু দিতে পারছেন না, তবু ঘাড়ে করে বয়ে বেড়ানো দিল্লি পেসারকে মোহালিতেও নামিয়ে দেওয়ার যুক্তি কোথায়? এ দিনের পর টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ান ডে ধরে করলেন ২৮ ওভার। দিলেন ২৪১ রান। পেলেন মোটে দু’টো উইকেট। অথচ বাংলার মহম্মদ সামি মোটামুটি ‘পর্যটক’ হিসেবে ম্যাচের পর ম্যাচ টিম ইন্ডিয়ার সঙ্গে ঘুরছেন। জয়দেব উনাদকটকে প্র্যাক্টিসে প্রবল উৎসাহ দেওয়া যাচ্ছে, কিন্তু নামানো যাচ্ছে না। আজ শেষ আঠারো বলে অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিল ৪৪। উনাদকট বা সামি থাকলে দিল্লি পেসারের চেয়ে কত খারাপ করতেন? ইশান্তের মতো ওঁরা দু’জনও এক ওভারে তিরিশ দিয়ে যেতেন, নিশ্চিত করে বলতে পারবেন কি ভারত অধিনায়ক?
আর ইশান্তের আটচল্লিশ নম্বরের হিসেব যদি চরম আশ্চর্য লাগে, তা হলে ধোনির স্ট্র্যাটেজিকেও কম অদ্ভুত দেখাবে না। আটচল্লিশতম ওভারের ছ’টা বলে ইশান্তের হিসেব৪, ৬, ৬, ২, ৬, ৬! কখনও পরপর শর্ট দেওয়ার ব্যর্থ প্রচেষ্টায় গিয়ে, কখনও বা অতি সাধারণ লেংথ বল ফেলে। ভারতীয় পেস ব্যাটারির সিনিয়রতম সদস্য হয়ে প্রয়োজনের সময় ইশান্ত আজ যা বল করলেন, তার পাশে একটা শব্দই বসে‘ছিঃ’। পঞ্চনদের দেশে নবতম দুর্দশার পর বাকি সিরিজে ইশান্তের আর টিমে থাকা উচিত নয়। পরে মাথা ঠান্ডা করে ধোনি যতই প্রেস কনফারেন্সে এসে বলে যান না কেন, “ও তো প্রথম সাত ওভার ভাল বল করেছে, তিরিশের বেশি দেয়নি...একটা ওভারে এ রকম হতেই পারে,” চলতি সিরিজে ইশান্তের টানা লাঞ্ছনা দেখে গোটা ভারতবর্ষ কিন্তু তাঁর টিমে অর্ন্তভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে।
ঠিক যেমন ভ্রূ কুঁচকোচ্ছে ধোনির ক্যাপ্টেন্সি নিয়েও। কেউ কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না, কোন যুক্তিতে রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে দিয়ে পুরো দশ ওভার করানো গেল না। রাতের মোহালির শিশির সামলে ডেথে খারাপ বল করছিলেন না অশ্বিন। রাউন্ড দ্য উইকেট এসে এক-দুইয়ে আটকে রাখছিলেন ফকনার-ভোজেসকে। মাঝে মধ্যে এক-আধটা বাউন্ডারি। এক ওভারে তিরিশের বাজারে খুব খারাপ? উল্টে ম্যাচে ‘মৃত্যু’-র আশঙ্কা নিয়েও ডেথ ওভারে ইশান্ত-বিনয়কে বেছে ফেলা হল। মাঝে একটা সময় আবার হাজির করানো হল বিরাট কোহলিকে। যিনি আদতে পার্ট টাইমারের বেশি কিছু নয়। এক ওভারে আঠারো রান দিয়ে গেলেন কোহলি। যখন নিয়মিত বোলারদের ওভার হাতে ছিল। বলা হচ্ছে, ধুরন্ধর অধিনায়ক হয়েও ধোনি কেন এই ভুলগুলো করবেন?
একা কুম্ভ

ব্যাটে ভাঙলেন বহু রেকর্ড। মোহালিতে এক দিনের ম্যাচে প্রথম ভারতীয় হিসেবে শতরান।
অধিনায়ক হিসেবে দ্রুততম পাঁচ হাজার। তবু বাঁচল না ম্যাচ। ছবি: পিটিআই।
সবচেয়ে দুঃখের ব্যাপার, ঘটল এমন দিনে যে দিন সিংহাসনে ফকনার নয়, তাঁর নিজের বসার কথা ছিল। আজ পর্যন্ত মোহালিতে ভারতের কেউ ওয়ান ডে সেঞ্চুরি পাননি। এত দিন সর্বোচ্চ ছিল সচিন তেন্ডুলকরের ৯৯। এমএসডি মোহালিতে টিম ইন্ডিয়ার সংসারে সেঞ্চুরি আনলেন। ভারত অধিনায়ক হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ স্কোরটাও আজকের পর তাঁর নামের পাশে লেখা হয়ে রইল। ওয়াটসনের বাউন্সারে একটা সময় যন্ত্রণায় মাঝে মাঝেই গ্লাভস খুলে ডান হাতের তর্জনী মুখে ঢোকাতে হচ্ছিল, প্রথম বল খেলার আগেই পায়ের পেশির টানে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু তার পরেও ইচ্ছেমতো হেলিকপ্টার শট বেরিয়েছে, ১৫৫-৬ থেকে তিনশো পার করে দিয়েছেন একা, কমেন্ট্রি করতে করতে কপিল দেব খুঁজে পেয়েছেন চোট পেলে মহেন্দ্র ধোনির ‘আহত’ সিংহ হয়ে ওঠার লুকনো রেকর্ড, তাঁর অগ্রজ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় মুগ্ধ গলায় আনন্দবাজারকে বলে গিয়েছেন, “দুর্ধর্ষ ওয়ান ডে প্লেয়ার বলেই ওই অবস্থা থেকে এ ভাবে বেরিয়ে এল ধোনি।” এত কিছুর পরেও স্রেফ একটা ওভার তাঁর ক্রিকেটীয় রোমান্সকে মর্যাদা দিল না।
তবু যদি এর পর তাঁর নিজের ঘরের মাঠে ভারতকে অক্সিজেন নিতে হয়, নিতে হবে ক্যাপ্টেনের আরও একটা কালজয়ী ইনিংস থেকে। কিন্তু তাতেও কতটা কী হবে, সন্দেহ। বোলিংয়ের টানা অভিশাপ তো আছেই। সঙ্গে অজিদের ‘প্রোজেক্ট ইন্ডিয়া’ আবার কাজ করছে পুরোদমে।
খুব সহজে শর্ট বল থিওরি। রোহিত-রায়না-জাডেজা, কেউই তো শনিবার বাঁচতে পারলেন না!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.