|
|
|
|
নোটের বিছানায় নেতা, অস্বস্তিতে ত্রিপুরা সিপিএম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • আগরতলা |
লক্ষ লক্ষ টাকার নোটের বিছানায় শুয়ে নিজের স্বপ্নপূরণের কথা বলেছিলেন ত্রিপুরার এক সিপিএম নেতা। মোবাইল ক্যামেরায় ছবি তুলেছিলেন তাঁরই কোনও বন্ধু। সংবাদমাধ্যমে সেই ছবি প্রচারিত হতেই চূড়ান্ত অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়ল রাজ্যের শাসক দল। পরিস্থিতি সামলাতে দলের ওই সদস্যকে বহিষ্কার করার সিদ্ধান্ত নিল সিপিএম নেতৃত্ব।
ঘটনার সূত্রপাত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেলে দেখানো হয়, সমর আচার্য নামে সদর ডুকলি বিভাগের যোগেন্দ্রনগর এলাকার সিপিএম বিভাগীয় কমিটির ওই সদস্য লক্ষ লক্ষ টাকার নোটের বান্ডিলের উপর শুয়ে রয়েছেন। পেশায় আবাসন ব্যবসায়ী সমরবাবুর মাথায়, বুকের ওপরও টাকার বান্ডিল রাখা। অভিযোগ, ওই ‘ফুটেজে’ তাঁকে বলতে শোনা যায়, “ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে ২০ লক্ষ টাকা তুলেছি। টাকার বিছানায় শুয়ে থাকার স্বপ্ন দেখতাম। এ বার তা পূর্ণ হল। আমি অন্য কমরেডদের মতো নই, যাঁরা সামনে ভালোমানুষ সাজলেও আসলে প্রচুর টাকার মালিক।”
দলীয় নেতার এই মন্তব্যে বিব্রত ত্রিপুরার সিপিএম নেতৃত্ব। ঘটনাটির সত্যতা স্বীকার করে রাজ্য কমিটির সম্পাদক বিজন ধর আজ বলেন, “উনি স্থানীয় একটি বেসরকারি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সেই সুবাদে বহু টাকা হয়তো উপাজর্ন করেছেন। কিন্তু এ কাজ দলের নীতি বিরুদ্ধ।’’ সিপিএম সূত্রের খবর, স্থানীয় বিভাগীয় কমিটি এ নিয়ে প্রাথমিক তদন্ত করে। সমরবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলে। রাজ্য সম্পাদক জানিয়েছেন, বিভাগীয় কমিটি এ বিষয়ে রাজ্য কমিটির কাছে রিপোর্ট পাঠাবে। তারপরই, দলবিরোধী কাজের জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কমিটির নেতা সুব্রত চক্রবর্তী বলেন, “দলের ভাবমূর্তি নষ্ট এবং অনৈতিকভাবে অর্থ উপার্জনের জন্য তাঁকে বহিস্কার করা হয়েছে।”
সিপিএম কেন্দ্রীয় কমিটির এক নেতার কথায়, “লোকসভা ভোটের জন্য তৈরির সময় এমন ঘটনায় দল অস্বস্তিতে। উনি কী ভাবে এই টাকা জোগাড় করলেন তা দেখতে হবে। এ নিয়ে স্থানীয় নেতৃত্বই ব্যবস্থা নেবে।”
সিপিএম সদস্যের এই কার্যকলাপে শাসক দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী কংগ্রেস। প্রদেশ কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী সভাপতি আশিসকুমার সাহা বলেছেন, “সিপিএম নেতাদের কাছে হিসেব-বহির্ভুত টাকা থাকার সবচেয়ে বড় প্রমাণ এটাই। বছরের পর বছর ধরে সিপিএম নেতা-কর্মীরা যে ভাবে দুর্নীতি করছেন, তার তদন্তের দাবি আমরা অনেকদিন থেকেই করে চলেছি।” কংগ্রেস নেতা রতনলাল নাথ বলেন, ‘‘ত্রিপুরার সিপিএম দলে ছোট, কিন্তু অধিকাংশ নেতাই দুর্নীতিগ্রস্ত।”
ওই ভিডিও-তে সমরবাবু জানিয়েছেন, আগরতলা পুর-এলাকায় ২৪০০টি স্বল্প খরচের সাধারণ শৌচাগার তৈরির সরকারি বরাত পেয়েছিলেন। তার থেকেই ২ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা আয় করেন।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, রাজ্যের একটি বেসরকারি সংগঠনেরও সদস্য সমরবাবু। সংগঠনটি শৌচাগার তৈরির কেন্দ্রীয় প্রকল্পের দায়িত্ব পেয়েছিল।
কেন্দ্রীয় বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় হচ্ছে, অনেক দিন ধরেই এ অভিযোগ তুলছে রাজ্য কংগ্রেস। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা রতনলালের ফের দাবি, সিপিএম নেতাদের সম্পত্তির হিসেব প্রকাশ্যে দাখিল করতে হবে। ক্ষমতায় বসার আগে তাঁদের কত সম্পত্তি ছিল এবং বর্তমানে তাঁদের সম্পত্তি কত হয়েছে, তা রাজ্যের মানুষকে জানাতে হবে।
সিপিএম-এর দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে রাজ্য তৃণমূল শিবিরও। তৃণমূল নেতা জওহর সাহার বক্তব্য, “এই ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টের কোনও বিচারপতিকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে।’’
রাজনৈতিক মহলের বক্তব্য, মাসিক আয় অনুযায়ী সিপিএম সদস্যদের দলকে ‘লেভি’ দিতে হয়। দলের নিয়ম অনুযায়ী, ৩০০ টাকা পর্যন্ত আয়ে মাসিক ২৫ পয়সা লেভি দিতে হয়। তা ক্রমে বাড়তে থাকে। ৮ হাজার টাকার ওপরে আয়ের ক্ষেত্রে লেভির পরিমাণ হয় ৫ শতাংশ। |
|
|
|
|
|