পুজোর ক’টা দিন হাতেগোনা যা-ও বা কয়েকটি বাসের দেখা মিলছিল, এ বার তারাও উধাও! সৌজন্যে সরকারের ভাড়া না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত।
লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যা থেকে কলকাতা ও তার লাগোয়া এলাকায় কার্যত রাস্তায় কোনও বাস নেই। তার পর দিন শনিবারও তার ব্যতিক্রম হল না বলে যাত্রীদের অভিযোগ। আজ, রবিবারও এই পরিস্থিতি বদল হওয়ার কোনও ধরনের সম্ভাবনা নেই বলেই জানিয়ে দিয়েছেন বাসমালিকদের অনেকেই।
পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র এই প্রসঙ্গ বলেন, “রাতারাতি পরিস্থিতি বদলাবে না। পরিবহণ শিল্পের সর্বনাশ ৩৪ বছরে যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতি বেশি দিন থাকবে না। অবস্থা বদলাবে।”
লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় ধর্মতলা, ভবানীপুর, রবীন্দ্র সদন, শ্যামবাজার, শিয়ালদহ, হাজরা, গড়িয়াহাট-সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে নিত্যযাত্রীদের। অনেককেই বেশি টাকা খরচ করে শেয়ার গাড়ি বা ট্যাক্সি ভাড়া করে বাড়ি ফিরতে হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যাতেও দেখা গেল একই চিত্র। এ দিন সন্ধ্যায় রাসবিহারী অ্যাভিনিউ মোড়ে বাসের জন্য দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে শেষে ক্লান্ত হয়ে ফুটপাথেই বসে পড়েন মিনতি সরকার। পঞ্চান্নগ্রামের বাসিন্দা বছর চল্লিশের মহিলা বলেন, “পৌনে এক ঘণ্টা ধরে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছি। গুটিকয়েক বাস। তাতে ওঠাও যাচ্ছে না। বাড়ি পর্যন্ত অটোরিকশা যায় না। ট্যাক্সি নিতে হলে তো অনেক টাকা লাগবে। সুযোগ বুঝে অনেক ট্যাক্সিচালকই বাড়তি ২০-৩০ টাকা চাইছে।”
শিয়ালদহ মোড়ে বাসস্টপে এ দিন রাত আটটা নাগাদ দাঁড়িয়ে কমপক্ষে শ’খানেক মানুষ। কারও বাড়ি দক্ষিণ শহরতলিতে। কারও বাড়ি হাওড়ায়। কেউ আবার টবিন রোডে ফিরবেন। তাঁদের অনেকেই জানালেন, বাড়ি ফেরার নির্দিষ্ট বাসের দেখা পাননি আধ ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও। ঠাকুরপুকুরের নেপালগঞ্জের বাসিন্দা রেখা সামন্ত বলেন, “দু’একটা রুটের বেসরকারি বাস বাড়ির কাছে যায়। সওয়া এক ঘণ্টা অপেক্ষা করছি। বাস নেই। এই অবস্থায় বাড়ি পৌঁছতে হলে তিনটে বাস বদলাতে হবে। সেই সব বাসেও ভিড়ের চাপে উঠতেই পারছি না।” কেন মিলছে না বাস?
বাসমালিকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ক্ষতির বোঝা বাড়িয়ে যে বাস চালানো অসম্ভব, সে কথা তাঁরা বারবারই জানিয়ে এসেছেন। তাঁর কথায়, “একে ছুটির মরসুম। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত টানা বাস চালালেও যাত্রী মিলবে না। তেলের দামও উঠবে না। যাত্রী না হলে বাসকর্মীদের কমিশনও মিলবে না। কর্মীরাও বাস চালাতে চাইছেন না।” তপনবাবুর দাবি, গত ১০ মাসে ১৩ বার ডিজেলের দাম বেড়েছে। কিন্তু বাসের ভাড়া সরকার বাড়াতে দিচ্ছে না। এমন ভাবে চললে খুব শীঘ্রই দেখা যাবে, রাস্তায় একটিও বেসরকারি বাসের দেখা মিলছে না।
তা হলে রাস্তায় এত যাত্রী কেন? তপনবাবুর বক্তব্য, “বিক্ষিপ্ত ভাবে কয়েকটি বাসস্টপে হয়তো কিছু যাত্রী ছিলেন। সেই ক’জন যাত্রীর জন্য বাস চালিয়ে লাভ নেই।” |