মাঝে মধ্যেই মন্দার চোখরাঙানি ও গৃহঋণে সুদ বাড়ার সম্ভাবনা। সঙ্গে চাহিদার তুলনায় বেশি জোগান। ত্রিমুখী এই সমস্যার জেরে বাজার বাড়াতে বিকল্প পথ খুঁজছে আবাসন শিল্প। আর সেই সূত্রেই সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট-এর চল বাড়ছে। যার ব্যতিক্রম নয় কলকাতাও।
সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট কী?
সাধারণত এ ধরনের ফ্ল্যাটের মাপ হয় ৫০০-১০০০ বর্গ ফুট। যা দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দিয়ে সাজানো থাকে। অর্থাৎ যে কোনও দিন জামাকাপড় নিয়ে বাড়িতে ঢুকে পড়লেই হয়। বাসনপত্র, আসবাব বওয়ার ঝামেলা নেই। কারণ রান্না, জামাকাপড় ধোওয়া, ঘর পরিষ্কারের মতো যাবতীয় পরিষেবা ফ্ল্যাটেই পাওয়া যাবে।
এ ক্ষেত্রে আবাসন তৈরি করেই হাত গুটিয়ে নেয় না সংস্থা। নিজেদের তৈরি ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য ফেলে না-রেখে স্বল্প বা দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তিতে ভাড়া দিচ্ছে নির্মাণ সংস্থাগুলি। এবং সেই চুক্তিতে থাকছে পরিষেবা দেওয়ার শর্তও। মূলত তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প ক্ষেত্রে এ ধরনের সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট-এর চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে বলে দাবি সংস্থাগুলির। কারণ ব্যয়ের বহর কমাতে আগ্রহী সব সংস্থাই। এবং ভিন্ রাজ্য থেকে আসা কর্মীদের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা একই সঙ্গে সুবিধাজনক ও সাশ্রয়ী বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এত দিন স্বয়ংসম্পূর্ণ ফ্ল্যাটের চাহিদা ও সরবরাহ, দুই সমান ছিল বেঙ্গালুরু, গুড়গাঁও ও পুণের মতো শহরে। এ বার এই বাজার তৈরি হচ্ছে কলকাতাতেও। নতুন এই বাজার ধরতে ঝাঁপাচ্ছে স্থানীয় নির্মাণ শিল্পমহল। ইতিমধ্যেই এ ধরনের প্রকল্প চালু করেছে সিদ্ধা, মার্লিন ও সৃষ্টি ইনফ্রাস্ট্রাকচার গোষ্ঠী।
মূলত রাজারহাট অঞ্চলেই এ ধরনের প্রকল্প শুরু হয়েছে। সেখানে জানাডু প্রকল্পের ৭০% ফ্ল্যাট বিক্রি করেছে সিদ্ধা গোষ্ঠী। বাকি ৩০% ফ্ল্যাটে চালু করেছে সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট। সংস্থার প্রধান সঞ্জয় জৈনের দাবি, এই প্রকল্পের সাফল্য দেখে আরও দু’টি এ ধরনের প্রকল্প গড়িয়া ও সল্টলেক সেক্টর ফাইভে তৈরি করতে চলেছে সংস্থা। তিনি জানান, পরিষেবা দেওয়ার দায়িত্ব পেশাদার সংস্থার হাতেই তুলে দিচ্ছেন। জানাডুতে যা দিচ্ছে কফি পাই সংস্থা।
শুধু তথ্যপ্রযুক্তি বা পরিষেবা শিল্প নয়। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, অবসরপ্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের মধ্যেও এ ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা তৈরি হচ্ছে। সাংসারিক ঝুট-ঝামেলা থেকে রেহাই পেতে এ ধরনের ফ্ল্যাটে থাকতে আগ্রহী তাঁরাও।
তবে শুধুই সার্ভিস অ্যাপার্টমেন্ট নয়, ব্যবসা বাড়াতে আরও নতুনত্ব আনতে মরিয়া নির্মাণ সংস্থাগুলি। দুর্গাপুরে ২০০ কোটি টাকার প্রকল্পে সেই ছোঁয়া আনতে জৈন গোষ্ঠীর বাজি পরিবেশ-বান্ধব স্থাপত্য। সংস্থার অন্যতম কর্তা ঋষি জৈনের দাবি, যে-ভাবে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, তাতে জল, আলো পেতে ন্যূনতম শক্তি খরচ হবে। দূষণের মাত্রা শূন্যে আনতে ব্যবহার করা হবে বিশেষ ধরনের গাছ, যে-গাছ দ্রুত বাতাস শুদ্ধ করে কিন্তু কম জলে বাঁচতে পারে। |