কয়েক দফায় দু’টি এলাকায় বোমা, গুলি, ধারালো অস্ত্র নিয়ে লড়াইয়ের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে মালদহ জেলার বৈষ্ণবনগর। দুটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক বোমাবাজি হয়েছে বলে অভিযোগ। এ ছাড়াও গুলি, বাড়ি ভাঙচুর, ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানোর মত ঘটনাও ঘটে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈষ্ণবনগরের বাখরাবাদে বৃহস্পতিবার সিপিএম-তৃণমূলের সংঘর্ষ শুরু হয়। ব্যাপক বোমাবাজি ছাড়াও ৪ রাউন্ড গুলিও ছোঁড়া হয় বলে অভিযোগ। সংঘর্ষে হাঁসুয়ার কোপে দুই দলের ২ সমর্থক-সহ ৫ জন আহত হন। হাঁসুয়ায় জখম দুজনকে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গত মঙ্গলবারও এলাকায় দুই দলের সংঘর্ষ হয়। গ্রাম পঞ্চায়েত এক সিপিএম সদস্য-সহ দুপক্ষের ১১ জন জখম হন। গুলিতে জখম হন দুই তৃনমূল কর্মী। তাঁরা মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এলাকা দখল কেন্দ্র করে কংগ্রেস ও তৃণমূলের সমর্থক দুই প্রতিবেশীর বিবাদ গড়ায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্য়ন্ত দফায় দফায় বোমাবাজি, বাড়ি ভাঙচুর ও সংঘর্ষের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মালদহের বৈষ্ণবনগর থানার বাজেয়াপ্তিপাড়া এলাকা। সংঘর্ষে জখম হয়েছে দুপক্ষের ১২ জন। বোমার আঘাতে হাতের কব্জি উড়েছে এক তৃণমূল সমর্থকের। আহতদের ৪ জন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ২ জন কালিয়াচক হাসপাতালে ভর্তি।
পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শবদলপুরে মঙ্গলবার রাতের ঘটনার জেরে ফের এলাকায় উত্তেজনা ছড়ায়। তদন্ত শুরু হয়েছে। অন্য দিকে, বাজেয়াপ্তি পাড়ায় গ্রাম্য বিবাদকে ঘিরে সংঘর্ষ হয়েছে। ৫ মহিলা সহ ১০ জন গ্রেফতার হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৩ আসনের বাখরাবাদে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে কংগ্রেস ৫, সিপিএম-৫ ও তৃণমূল ৩টি আসন পায়। কিন্তু তৃণমূল ছেড়ে সিপিএমে যোগ দিয়ে প্রধান হন শ্যামাচরণ মণ্ডল। সিপিএম তৃণমূল সদস্যদের দলে টেনে দল ভাঙছে বলে অভিযোগ তোলে তৃণমূল। তার পর থেকে দুই দলের বিরোধ বাঁধে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, এ দিন শবদলপুর কুম্ভিরা বাজারে স্থানীয় তৃণমূল নেতা নন্দ সিংহকে সিপিএম কর্মীরা মারধর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। নন্দবাবুর স্ত্রী ববিতাদেবী পঞ্চায়েত নির্বাচনে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হলেও হেরে যান। বাধা দিতে যাওয়ায় মারধর করা হয় তাঁর ছেলে জয়ন্ত সিংহকেও। ঘটনার কথা চাউর হতেই এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএমের তরফে ৪ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। যদিও গুলিতে এ দিন কেউ আহত হননি। দলীয় সমর্থক বিক্রম সিংহ ও সিপিএম সমর্থক সুবোধ সিংহকে হাঁসুয়া দিয়ে কোপানো হয়।
তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী তথা নারী ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “ওঁরা সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করতে চাইছে। আমি পুলিশকে বলেছি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।” সিপিএম জেলা সম্পাদকমন্ডলী সদস্য বিশ্বনাথ ঘোষ বলেন, “তৃণমূল কর্মীরা বাড়িতে চড়াও হয়ে আমাদের কর্মীদের কোপাচ্ছে। উল্টে বোমাবাজি, গুলি চালোনোর অভিযোগ তুলছে।”
বাজেয়াপ্তিপাড়া এলাকাটি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি। এলাকার কর্তৃত্ব দখলকে কেন্দ্র করে দুই প্রতিবেশী মানিরুল ইসলাম ও হাজি ইসলামের মধ্যে বিবাদ রয়েছে। চার বছর আগে বিবাদকে কেন্দ্র করেই খুন হন মানিরুলের দাদা আনারুল শেখ। মাঝেমধ্যেই বোমাবাজি ও গণ্ডগোলের ঘটনা ঘটে। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে দলবল নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন মানিরুল ইসলাম। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই হামলা ও পাল্টা হামলায় এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তৃণমূলের অভিযোগ, সানাউল হক নামে এক দলীয় সর্মথকের বোমার আঘাতে হাতের কব্জি উড়ে গিয়েছে। কোদালের কোপে পেট কেটেছে মোক্তার হোসেনের। ইংরেজবাজারের বিধায়ক পর্যটন মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, “কংগ্রেসের পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। তাই তৃণমূলের উপর হামলা করছে।” বৈষ্ণবনগরের কংগ্রেস বিধায়ক ঈশা খান চৌধুরী বলেছেন, “পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক। তৃণমূলের লোকজনই এলাকায় সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে।”
|