সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার ভরাডুবির জেরে এবার পুজোর বাজার মার খেয়েছে গোটা কোচবিহার জেলায়। ব্যবসায়ীদের হিসাব বলছে, এর প্রত্যক্ষ প্রভাবে জেলায় এ বছর প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা কম হয়েছে। সব মিলিয়ে এবার জেলায় পুজো এবং ঈদের মরশুমে ব্যবসা হয়েছে ৩৫০ কোটি টাকার। কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের পরিসংখ্যানে ওই তথ্য উঠে এসেছে। জামাকাপড়ের দোকান থেকে জুতো, প্রসাধনী সামগ্রী, অলঙ্কার, রেঁস্তোয়া মিলিয়ে মহালয়া থেকে ঈদ অবধি পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন বাজার মিলিয়ে ওই টাকার ব্যবসা হয়েছে।
ব্যবসায়ী সংগঠন সূত্রে জানা যায়, গত বছর উৎসবের কোচবিহারে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এ বার সারদা-সহ নানা অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা রেখে বাসিন্দাদের বড় অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জেরে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার ব্যবসা কমেছে। কোচবিহার ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার্স অ্যান্ড কমার্সের সম্পাদক রাজেন বৈদ বলেন, “পুজো ও ঈদের মরসুমে জেলার ব্যবসা ভাল হয়নি। গতবারের তুলনায় এবার ১৫০ কোটি টাকা কম।” মহালয়ার পর থেকেই সাধারণত পুজোর বাজার জমে ওঠে। ঈদ পর্যন্ত দোকানপাটে ক্রেতাদের ভিড় থাকে। গত বছর সারদা সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্ট কর্মী থেকে শুরু করে আমানতকারীরা মেয়াদ ফুরানোর পর হাতে টাকা পাওয়ায় কেনাকেটায় বাড়তি উৎসাহ দেখান। এ বার ওই সব সংস্থা অধিকাংশই বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কোচবিহারে অন্তত এক লক্ষ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। রাজ্য সরকার কিছু টাকা ফেরানো শুরু করলেও বড় সংখ্যক মানুষের হাতেই টাকা ছিল না। পুজোর বাজারে তার প্রভাব পড়েছে। সঙ্গে মূল্যবৃদ্ধির চাপও। ব্যবসায়ীরা জানান, জেলার পাট ও তামাক চাষিরা ভাল দাম পাননি। অসমে ক্রেতাদের একাংশও রাস্তাঘাটের বেহাল দশায় ভোগান্তি থেকে যাতায়াতের বাড়তি খরচ এড়াতে কোচবিহারে কেনাকাটা না করে স্থানীয় বাজারগুলিকেই বেছে নেন। জেলা ব্যবসায়ী সমিতি সম্পাদক সুব্রত সাহা জানিয়েছেন, গত বছর উৎসবের মুখে পাকা বাড়ি তৈরি রঙ করে সাজানোর মত সামগ্রীরও দেদার বিক্রি হয়েছিল। এবছর সেসব বিক্রি হয়নি। ৩০ শতাংশ ব্যবসা কম হয়।
সংগঠন কর্তারা জানান, গত বছর জেলাজুড়ে জামাকাপড়ের দোকানগুলি প্রায় ২০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে। জুতোর দোকানে ১২০ কোটি টাকা এবং প্রসাধনী ও খাবারের দোকানে গড়ে ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। এছাড়াও অলঙ্কার, ফল, মুদি দোকান থেকে আসবাব সহ অন্য দোকানে প্রায় ৮০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়। প্রতিটি ক্ষেত্রে লেনদেন কমেছে।
কোচবিহার জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম কুণ্ডু বলেন, “একে অসমের ক্রেতাদের তেমন ভিড় ছিল না। তার উপরে অর্থলগ্নি সংস্থার ব্যবসা মারাত্মক ভাবে মার খেয়েছে। শুধু জামাকাপড় বিক্রেতাদের ক্ষেত্রেই গত বছরের থেকে প্রায় ১০০ কোটি টাকার ব্যবসা কম হয়েছে।” দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী জানিয়েছেন, গতবছর পুজোর আগে পাট গড়ে ৩ হাজার টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল দামে বিক্রি হয়। তামাকের দাম ছিল গড়ে ১০ হাজার টাকা কুইন্ট্যাল। এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় উৎপাদন মার খায়। তার ওপর এবার পাট গড়ে ২৪০০ টাকা ও তামাক গড়ে ৮ হাজার টাকা প্রতি কুইন্ট্যাল ছিল। |