দিল্লিতে ছাত্রীকে গণধর্ষণের প্রতিবাদে রাজ্যে যে আন্দোলন হয়েছিল তাতে সামিল হয়েছিল গঙ্গারামপুরও। অথচ গঙ্গারামপুরের পুজো মন্ডপ থেকে নির্যাতিতা এক তরুণীর ক্ষতবিক্ষত দেহ মেলার পরেও নানা সংগঠন নীরব থাকায় বিস্মিত নিহতের পরিবারের লোকজনদের অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, ঘটনার পরে ৬ দিন কেটে গিয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দল কিংবা সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের লোকজনকে সমবেদনা জানাতে কেউ যাননি। নিহত তরুণীর বাবাও মানসিক ভারসাম্যহীন। নিহত তরুণী অসহায় ও হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য। তবে তরুণীর আত্মীয়েদর কয়েকজন আশা প্রকাশ করেন, দোষীদের সাজা দেওয়ার ব্যবস্থা করবে পুলিশ। জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ওই ঘটনায় ধৃত ঢাকি এবং নৈশপ্রহরী মূল অভিযুক্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে ধর্ষণের চেষ্টা ও খুনের অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। শীঘ্রই দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে।”
অষ্টমীর রাতে গঙ্গারামপুরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালদিঘি হাসপাতাল মোড়ে একটি বারোয়ারি দুর্গাপুজো মন্দিরের মন্ডপের ভেতর থেকে এলাকার ২৬ বছরের এক মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। শারীরিক অত্যাচারের পর প্রমাণ লোপাট করতে দুষ্কৃতীরা তাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে বলে মৃতার আত্মীয় এবং এলাকাবাসীর অনেকের সন্দেহ। ঘটনার দিন রাতে পুজো মন্ডপে ধৃত ঢাকি এবং নৈশপ্রহরী ঘুমিয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। ফলে নবমীর দিন, গত রবিবার ঢাকি ও নৈশপ্রহরীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। বর্তমানে আদালতের নির্দেশে ধৃতরা গঙ্গারামপুর থানার পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের একাংশ জানান, ঢাকি ও নৈশপ্রহরী যতই অস্বীকার করুন না কেন, পারিপাশ্বিক সাক্ষ্যপ্রমাণ তাঁদের বিরুদ্ধেই রয়েছে।
এ দিন ওই পুজো কমিটির সম্পাদক তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি সন্তোষ দাস বলেন, “ধৃত ঢাকি ও নৈশপ্রহরীও ঘটনার কিছুই জানেন না বলে আমাদের বলেছেন। আমরা যতদূর শুনেছি, মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও মহিলা জড়বুদ্ধি ছিলেন না। শারীরিক অত্যাচারের পরে তাঁকে খুন করা হয়েছে বলে সকালে দেহ দেখে মনে হয়েছে।” পুলিশের কাছে সন্তোষবাবু লিখিত অভিযোগ করে জানিয়েছেন, অষ্টমীর রাত সাড়ে ১০টা নাগাদ মন্ডপ থেকে তাঁরা সকলে বাড়ি চলে যান। রাতে কে বা কারা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানা নেই। তবে অভিযুক্তদের তিনি কঠোর শাস্তি দবি করেছেন। তাঁর বক্তব্য, “ঢাকি ও নৈশপ্রহরীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে ঠিক। তবে আমরাও ঘটনাটি নিয়ে ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছি।” এদিনও ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কংগ্রেস এবং সিপিএমের মহিলা সংগঠন। আগামী সোমবার বিষয়টি নিয়ে তারা পুলিশ সুপারের কাছে স্মারকলিপি দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এ দিন গঙ্গারামপুরে ঘটনার তদন্তে যান দক্ষিণ দিনাজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এস সালেভ মুরুগন। ধৃত ঢাকি এবং নৈশপ্রহরীকে জেরা করার পরে তিনি পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের থানায় ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পাশাপাশি মৃতা মহিলার জেঠুর সঙ্গেও বাড়িতে গিয়ে কথা বলেন তিনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।” |