|
|
|
|
প্রেরণা সোনাগাছি, কালীপুজোয় উৎসব দিনবাজারের গলিতে |
অনির্বাণ রায় • জলপাইগুড়ি |
পুলিশের অনুমতি না মেলায় কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে এ বছর দুর্গাপুজো করার অধিকার পেয়েছিলেন সোনাগাছির যৌনকর্মীরা। তাঁদের সেই লড়াইকে সামনে রেখেই এ বার কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছেন জলপাইগুড়ির দিনবাজারের যৌনকর্মীরা। দীপাবলির রাতে দিনবাজারের অন্ধকার গলিটিকে আলোয় ভরিয়ে তুলতে চান তাঁরা।
শহরের অন্যতম ব্যস্ত এলাকা দিনবাজার। বাজারের তিনকোনিয়া মোড় থেকে সরু অপ্রশস্ত গলিতে বাস প্রায় তিনশো যৌনকর্মীর। গলির ভিতরে রয়েছে একটি কালীমন্দির। সেই মন্দিরেই প্রতি বছর নিজেদের মতো করে কালীপুজোর আয়োজন করেন বাসিন্দারা। কিন্তু এ বার সোনাগাছির পুজো দেখতে কলকাতার সাধারণ বাসিন্দারাও গিয়েছেন শুনে তাঁরাও স্থির করেছেন ওই মন্দিরেই বড় করে পুজো করবেন।
লক্ষ্মীপুজো মিটে গেলেই কালীপুজোর জন্য মণ্ডপ ও আলোকসজ্জার অনুমতি দেওয়ার কাজ শুরু করবে প্রশাসন। শহরের এই ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়প্রকাশ সাহা বলেন, “মন্দিরেই পুজো হবে। সেই সঙ্গে যদি তাঁরা অতিরিক্ত কোনও মণ্ডপসজ্জার জন্য আবেদন করেন, তা হলে তার অনুমতি নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না।”
ওই পল্লির বাসিন্দা মানু সরকার বড়ুয়া জানান, পুজো দিতে বা দশমীর দিন দেবীকে বরণ করতে আশপাশের পুজো মণ্ডপে তাঁরা লজ্জায় যান না। শহরের কোনও মন্দিরে গিয়েই পুজো দেন। তাঁর কথায়, “কিন্তু এ বার সোনাগাছি আমাদের সাহস জুগিয়েছে। আমরাও অনেক জাঁকজমক করে কালীপুজোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছি। সামনের বার দুর্গাপুজোও করা হবে।”
দিনবাজারের এই উদ্যোগে খুশি দুর্বার সংগঠনও। সংগঠনের প্রাক্তন সচিব স্বপ্না গায়েন জানান, এই পুজো অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইও। তাঁর কথায়, “এত দিন যাঁরা ব্রাত্য ছিলেন, তাঁরা সমাজের মূল উৎসবগুলিতে যোগ দিতে পারছেন।” বর্তমান সচিব ভারতী দে-র কথায়, “আমাদের দুর্গাপুজোয় সাধারণ দর্শকও অনেক ছিলেন। এখন জলপাইগুড়ির ক্ষেত্রেও এটাই দেখার যে, শহরের সাধারণ মানুষ ওই পুজো দেখতে যান কি না।”
দিনবাজারের গলিতে ২২টি বাড়ি রয়েছে। সামান্য যে পরিমাণ অর্থ চাঁদা ওঠে তাতে সাধারণত মন্দিরের গায়ে কয়েকটি টুনির মালা জড়িয়েই সেরে ফেলা হয় আলোকসজ্জা। এ ছাড়া আর আনন্দ বলতে সাউন্ডবক্স ভাড়া করে গান শোনা। এ বার ঠিক হয়েছে পুরো গলিটাকেই কালীপুজোর সময়ে আলোর মালা দিয়ে সাজা হবে।
সাধারণ বাসিন্দাদের ঠাকুর দেখতে স্বাগত জানানোর জন্য গলির মুখে তোরণ তৈরি করার কথাও ভাবা হয়েছে। এমনকী, গলির ভিতরে ঢুকতে যাতে কাউকে কোনও রকম সমস্যা পোহাতে না হয়, সে খেয়াল রাখতে এলাকার যুবকরাও নজরদারি চালাবেন। কেন এ বার এমন বিশেষ আয়োজন? গলির মুখেই দাঁড়িয়ে ছিলেন টুম্পা। তিনি বললেন, “পুজোর জন্য প্রত্যেক বার নতুন শাড়ি কিনি। চুড়ি, লিপস্টিকও কিনি। কিন্তু গলি ছেড়ে বার হতে পারি না। এ বার সোনাগাছির পুজোর কথা শুনেই ঠিক হয়েছে আমাদের পুজোতেও জাঁকজমক বাড়ানো হবে।”
দিনবাজারের গলির শুরু থেকেই দু’পাশে অসংখ্য বৈধ-অবৈধ দেশি মদের দোকান। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সেখানে চলছে কেনাবেচার আসর। টিউব আর দোকানের বাল্বের স্বল্প আলোয় সন্ধ্যার পরেই গলিতে আলো-আধাঁরি পরিবেশ।
এই পরিবেশটাই কয়েক দিনের জন্য হলেও অন্য রকম দিতে চাইছে মানু-টুম্পা-অতসীরা।
|
পুরনো খবর: যৌনকর্মীদের পুজো করতে দেওয়া উচিত, বলল হাইকোর্ট |
|
|
|
|
|