আরও এক ধাপ এগোল রাজ্য সরকারের নিজস্ব সঞ্চয় প্রকল্প। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সরাসরি টাকা তোলার ব্যাপারে রাজ্য পরিকাঠামো উন্নয়ন বিত্ত নিগমকে (আইডিএফসি) অনুমতি দিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।
গত মাসের শেষ দিকে এই অনুমতি চেয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি পাঠিয়েছিল নিগম। গত বৃহস্পতিবার, দুর্গাপুজোর ষষ্ঠীর দিন মুম্বইতে আরবিআই-এর সদর দফতর থেকে অনুমতির চিঠি এসেছে কলকাতার আঞ্চলিক দফতরে। কিন্তু তার পর রাজ্য সরকারের সব দফতরে ছুটি পড়ে যাওয়ায় সেই চিঠি এখনও নিগম ও অর্থ দফতরের কাছে পাঠানো যায়নি। ২১ তারিখ ছুটি শেষের পরে চিঠিটি পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে আরবিআই সূত্রের খবর।
সারদা-কাণ্ড ঘিরে রাজ্য জুড়ে তোলপাড়ের পরে সরকারি স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প চালু করার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সাধারণ মানুষকে বেআইনি লগ্নি সংস্থার ফাঁদে পা না-দিতে অনুরোধ করে তিনি বলেছিলেন, সরকার হয়তো বেশি সুদ দিতে পারবে না। কিন্তু টাকা সুরক্ষিত থাকবে। এ ব্যাপারে সরকারি ওয়েবসাইট মারফত সাধারণ মানুষের মতামতও চেয়েছিলেন তিনি।
মতামত দেওয়ার ব্যাপারে অবশ্য বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি আম-জনতা। প্রকল্প নিয়ে নানা প্রশ্নও তোলেন বিশেষজ্ঞরা। তা সত্ত্বেও এই প্রকল্প চালু করার পথে এগিয়েছে সরকার।
রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তা বলেন, “সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহের ক্ষমতা সেই বাম আমল থেকেই বিত্ত নিগমের রয়েছে। কিন্তু এত দিন সেই অনুমতি কাজে লাগিয়ে কোনও টাকাই তোলা হয়নি। বিত্ত নিগম টাকা তুলত বিভিন্ন ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে।”
কিন্তু অনুমতি যদি আগে থেকেই থাকে, তা হলে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে নতুন করে চিঠি লিখতে হল কেন?
ওই কর্তার কথায়, “বাজার থেকে টাকা তোলার জন্য নন-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল কোম্পানির (এনবিএফসি) তকমা লাগে। বিত্ত নিগমের সেই তকমা থাকলেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লগ্নি সংগ্রহের জন্য আরও কিছু শর্ত পালনের দরকার হয়। সেই সব শর্ত পূরণ করা হয়েছে জানিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে চিঠি পাঠানো হয়।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক সূত্রে বলা হচ্ছে, যে সংস্থা টাকা তুলবে, তার ব্যাপ্তি (নেটওয়ার্ক) কতটা, সমাজের যে অংশের কাছ থেকে লগ্নি সংগ্রহ করা হবে, সেখানে সংস্থা কতটা পৌঁছতে পারে, প্রাথমিক ভাবে সেটা খতিয়ে দেখা হয়। তার পর দেখা হয় ওই সংস্থার আর্থিক স্বাস্থ্য কেমন। ওই সব দিক খতিয়ে দেখে দিল্লিতে অবস্থিত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ‘ডিউ ডিলিজেন্স’ দফতর ছাড়পত্র দেয়। তার পরেই মুম্বইতে ব্যাঙ্কের সদর দফতর থেকে অনুমতির চিঠি পাঠানো হয়।
তবে বিত্ত নিগমকে অনুমতি দিলেও বাস্তবে সেটা কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সন্দিহান রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কর্তাদের একাংশ। নিগমের ব্যালান্স শিট বলছে, এ পর্যন্ত তারা যে টাকা তুলেছে, তার সবটাই বিনিয়োগ করেছে সরকারের ঘরে। মূলত রাস্তা, সেতু ইত্যাদি পরিকাঠামো তৈরির জন্য সরকারকে ঋণ দিয়েছে তারা। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে তোলা টাকাও স্বাভাবিক ভাবেই সরকারের কাছে যাবে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তাদের মতে, “বিত্ত নিগম লাভের জন্য ব্যবসা করে না। পেশাদার ব্যবসায়িক সংস্থার মতো শেয়ার বাজারেও বিনিয়োগ করে না। ফলে শেষ পর্যন্ত সরকারি কোষাগারের উপরেই চাপ বাড়বে।” বিত্ত নিগমের তরফে অবশ্য দাবি করা হচ্ছে যে, তাদের আর্থিক স্বাস্থ্য খুবই ভাল। সরকারকে নিয়মিত লভ্যাংশও দেওয়া হয়। ফলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা তুলে সুদ দেওয়া মোটেই কঠিন হবে না।
কী ভাবে টাকা তুলবে নিগম? রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে লেখা চিঠিতে তারা বলেছে, সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিনিয়োগ আনতে সরাসরি কোনও লোক নিয়োগ করা হবে না। সাহায্য নেওয়া হবে বেসরকারি এজেন্সির। সেই এজেন্সির লোকেরাও অবশ্য গ্রামে গ্রামে গিয়ে টাকা সংগ্রহ করবেন না। তাঁদের কাজ হবে মূলত উৎসাহ দাতার। তাঁরা লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করে কাছের ব্যাঙ্কে নিয়ে গিয়ে অ্যাকাউন্ট খুলতে সাহায্য করবেন। এবং ব্যাঙ্কই টাকা পৌঁছে দেবে নিগমের কাছে।
কয়েক মাস আগে স্টেট লেভেল ব্যাঙ্কার্স কমিটির বৈঠকে বিত্ত নিগমের সঞ্চয় প্রকল্পটি নিয়ে কথা হয়। অর্থ দফতর সূত্রের দাবি, ব্যাঙ্ক-প্রতিনিধিরা এই উদ্যোগকে সমর্থন করেন। যদিও রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বক্তব্য, এই প্রকল্পের জেরে ব্যাঙ্কের খরচ বিপুল বাড়বে। |