বিশ্বব্যাঙ্কের টাকা পাচ্ছে না ৬৫ পঞ্চায়েত
রীক্ষায় বারবার অকৃতকার্য হচ্ছে রাজ্যের সেরার তালিকায় থাকা ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত। ফলে বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদান পাওয়ার যোগ্যতামান অর্জন করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচন মিটেছে। ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি অন্তত যাতে বিশ্বব্যাঙ্কের অনুদান পায়, তার জন্য নতুন উদ্যমে মাঠে নামছে রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর।
২০১০ সাল থেকে এই রাজ্যে শুরু হয়েছে ‘গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাতিষ্ঠানিক সশক্তিকরণ প্রকল্প’ (আইএসজিপি)। প্রকল্পটিতে রাজ্যের সেরা পঞ্চায়েতগুলিকেই বিশ্বব্যাঙ্কের পাঁচ বছরে কয়েকটি কিস্তিতে মোট এক হাজার কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার কথা। এর জন্য প্রাথমিক ভাবে ২০১০ সালে সেরা এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতকে নির্বাচন করে রাজ্য পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতর। ২০১০ সালে প্রকল্পটি চালু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত চার বার অনুদান দেওয়া হয়েছে। চতুর্থ কিস্তির টাকা দেওয়ার কথা ছিল মে-জুনে। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ওই টাকা দেওয়া যায়নি। অগস্ট থেকে চতুর্থ কিস্তির বরাদ্দ টাকা দেওয়া হচ্ছে।
তবে টাকা পেতে গেলে শুধু সেরার তালিকায় নাম থাকাই যথেষ্ট নয়, প্রতি বার অনুদান পাওয়ার আগে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে কিছু আবশ্যিক শর্ত পালন করতে হয়। এ ছাড়াও দিতে হয় ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা। বিশ্বব্যাঙ্কের প্রতিনিধিরাই পরীক্ষা নেন। দেখা গিয়েছে, প্রতি বারই যে এক হাজার গ্রাম পঞ্চায়েতের সবাই যোগ্যমান পেরোতে সক্ষম হয় তা নয়। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ হয়ে টাকা পেতে ব্যর্থ হয় অনেক পঞ্চায়েত। ফের পরের কিস্তি পাওয়ার আগে পরীক্ষায় বসে তারা এবং উত্তীর্ণও হয়। এই ভাবে ৯৩৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া শর্ত পালন করে এবং পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কোনও না কোনও কিস্তির টাকা পেলেও, বারবার অকৃতকার্য হওয়ায় ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত একটি কিস্তিও অনুদান পায়নি।
রাজ্যের মোট ৯টি জেলায় আইএসজিপি প্রকল্পটি চলছে। যে ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রথম থেকেই অকৃতকার্যদের তালিকায় আছে, সংখ্যার বিচারে তার জেলাওয়ারি হিসাবটি এই রকম বাঁকুড়ায় ৭টি, বীরভূমে ৩টি, বর্ধমানে ১২টি, কোচবিহারে ৬টি, হাওড়ায় ২টি, নদিয়ায় ৪টি, পশ্চিম মেদিনীপুরে ২২টি এবং পূর্ব মেদিনীপুরে ৯টি গ্রাম। আইএসজিপি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের উপসচিব সৌম্য পুরকায়স্থ বলেন, “অনুদান পেতে কী করণীয়, সে বিষয়ে ওই ৬৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বছরভর প্রশিক্ষণ দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত দেখা গিয়েছে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে আইএসজিপি প্রকল্পটি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তার আগে অন্তত কিছু অনুদান যাতে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি পায়, সে বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে হবে। ওই সব গ্রাম পঞ্চায়েতে নতুন যাঁরা ক্ষমতায় এসেছেন, তাঁদের নিয়ে জোরকদমে প্রশিক্ষণ চলবে।”
অনুদান পাওয়ার আগে যে চারটি বাধ্যতামূলক শর্ত গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিকে পূরণ করতে হয় তা হল: যে বছরের জন্য অনুদান দেওয়া হবে তার আগের বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে বিভিন্ন খাত থেকে পাওয়া টাকার ৬০ শতাংশ খরচ করা, গ্রাম পঞ্চায়েতের উপসমিতিগুলি থেকে উঠে আসা সুপারিশের ভিত্তিতে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে উন্নয়নের পরিকল্পনা রচনা করে ফেলা, অডিট রিপোর্টের ফল প্রথম শ্রেণির মানের হওয়া এবং কম্পিউটারের মাধ্যমে সব হিসাব-নিকাশের কাজ করতে পারা। এ ছাড়া সারা বছর গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি কী কী কাজ করেছে সে বিষয়ে ১০০ নম্বরের প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। এর মধ্যে অন্তত ৬০ পেতেই হবে। জনসংখ্যার ভিত্তিতে অনুদান দেওয়া হয়। এক-একটি কিস্তির জন্য মাথাপিছু ৯০ টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়। বেশি জনসংখ্যার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি গড়ে পায় ৩০ লক্ষ করে টাকা। ছোট ও মাঝারি গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি পায় গড়ে ১০-১৫ লক্ষ করে টাকা।
বর্ধমানে প্রথম থেকেই অকৃতকার্য ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে রয়েছে রানিগঞ্জের এগারা। প্রধান ছাড়া কোনও সদস্যই কার্যালয়ে আসতেন না। তবে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পরে পরিস্থিতি পাল্টেছে। জেলার আইএসজিপি সেলের এক আধিকারিক জানান, জেলা প্রশাসনের সহায়তা নিয়ে এগারা-সহ নবনির্বাচিত ১২টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক করা হচ্ছে যাতে তারা পরবর্তী কিস্তির টাকা পায়। পশ্চিম মেদিনীপুরে অনুদান না-পাওয়া ২২টি গ্রাম পঞ্চায়েতের অধিকাংশই রয়েছে জঙ্গলমহল এলাকায়। এদেরই অন্যতম বিনপুর ১ ব্লকের সেঁজুয়া গ্রাম পঞ্চায়েত। দীর্ঘদিন ধরে অচলাবস্থা চলছিল এখানে। সদ্য নতুন বোর্ড গঠিত হয়েছে এখানেও। জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত আইএসজিপি সেলের এক আধিকারিক জানান, সেঁজুয়া-সহ ২২টি নবনির্বাচিত গ্রাম পঞ্চায়েতকে নিয়ে নিয়মিত বৈঠক ও কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.