সারা বছর মেরামতি, তাই বাঁধ অটুট খানাকুলে
ল ছেড়েছে ডিভিসি, অথচ বাঁধ ভাঙছে না। এ দৃশ্য দেখেও বিশ্বাস করতে পারছেন না খানাকুলের বাসিন্দারা। ছত্রশাল গ্রামের শঙ্কর দাসের কথায়, “নদী ভর্তি জল যাচ্ছে, অথচ উদনার বাঁধে ফাটল ধরছে না এমন আগে দেখিনি।” সংলগ্ন কনকপুর গ্রামের দিলীপ ঘোষ বলেন, “বংশানুক্রমে আমরা জেনে আসছি ডিভিসি জল ছাড়লেই বাঁধ ভাঙবে। এ বারই তা ঘটল না।”
খানাকুল ২ ব্লকে সোমবার রাত থেকে বাঁধ ছাপিয়ে যে জল ঢুকেছিল, বৃহস্পতিবারও তা সম্পূর্ণ নেমে যায়নি। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে, দাবি প্রশাসনের। কী বলছেন এলাকার মানুষ? “প্রশাসনের সদিচ্ছা থাকলে যে কাজ হয়, তা এ বার বোঝা গেল,” বললেন দিলীপবাবু।
আরামবাগ মহকুমার মানুষের অভিজ্ঞতা, বর্ষা নামার কয়েক দিন আগে পড়িমরি করে শুরু হত বাঁধ মেরামতির কাজ। যার প্রায় সবটাই ধুয়ে যেত জলে। যেটুকু টিঁকত, নদীর জল ফুলেফেঁপে উঠলে সেটুকুও তলিয়ে যেত নদীগর্ভে। কিন্তু এ বছর চিত্রটা অনেকটাই আলাদা। ডিভিসির ছাড়া ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কিউসেক জলের তোড় সামলে মহকুমার বিভিন্ন নদীবাঁধ অটুট। ফলে নদীর কূল ছাপিয়ে খানাকুলের দু’টি ব্লকে জল ঢুকলেও তা ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি করেনি। মাঠেঘাটে জল দাঁড়িয়ে গিয়ে ফসলের ক্ষতি করলেও বাড়ি-ঘর ভাঙার সংখ্যা নগন্য। প্রাণহানিও হয়নি হুগলির এই মহকুমায়। ২০০৯ সালের বন্যায় আরামবাগে ১৮১টি জায়গায় নদী বাঁধ ভেঙেছিল। আর এ বছর? এখনও পর্যন্ত একটিও জায়গায় ভাঙেনি বাঁধ।
কী করে এমন হল? প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, শেষ মুহূর্তে বাঁধ মেরামতির ঘরানা থেকে সরে এসে বছর দু’য়েক ধরে সারা বছরই কমবেশি বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণ হয়েছে। কোথাও একশো দিনের প্রকল্পে, কোথাও সেচ দফতরের নিজস্ব উদ্যোগে বাঁধের কাজ হয়েছে। সেই সঙ্গে, নদীবাঁধে ভেটিভার ঘাসের চারা পুঁতেও সাফল্য মিলেছে। মাটির বহু নীচ পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে ভেটিভারের শিকড়-বাকড় বাঁধের মাটি ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়িয়েছে।

শক্তপোক্ত বাঁধ। আরামবাগ মহকুমায়। ছবি: মোহন দাস।
এ বারের বন্যা থেকে রেহাই মেলার কৃতিত্ব দাবি করতে তাই দ্বিধা করছেন না সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “নিয়মিত বাঁধ সংস্কার হয়েছে বলে বন্যা ভয়াবহ আকার নেয়নি হুগলিতে।” মুণ্ডেশ্বরী সেচ বিভাগের সহকারী বাস্তুকার আশিসকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “আরামবাগ ব্লকের মুণ্ডেশ্বরী নদী বাঁধে মজফ্ফরপুর ও পূর্বকৃষ্ণপুরে আমাদের বাঁধ সারাইয়ের দুটো কাজ বন্যা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর হয়েছে। দামোদর নদের ধারে খেয়ালিতেও মেরামতির বড় কাজ হয়েছে।” ওই আধিকারিক জানান, পুড়শুড়ায় দামোদরের বাঁধে ১১টি এবং খানাকুল এলাকার ৭-৮টি জায়গায় ২০১০ সাল থেকেই পর্যায়ক্রমে কাজ হয়েছে। আরামবাগ সেচ বিভাগের সহকারী বাস্তুকার প্রিয়ম পালও জানান, দ্বারকেশ্বরের ধারে খানাকুলের এবং আরামবাগের অন্তর্গত ১৯টি জায়গায় মেরামতির কাজ হয়েছে নিয়মিত। আরামবাগের মহকুমাশাসক অরিন্দম রায় বলেন, “বাঁধে ভেটিভার ঘাস চাষ করেও সাফল্য মিলেছে।”
হুগলিতে সেচ দফতর সফল হলেও, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে হাওড়া এবং পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়ে। উদয়নারায়ণপুরে ১১টি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা, এবং আমতার দুই ব্লকের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকা এখনও জলমগ্ন। সেচ দফতর সূত্রে খবর, দামোদরের পূর্ব পাড়ের দিকটি যে হেতু শহরাঞ্চল, তাই সে দিকেই সেচ দফতর বাঁধ সংস্কার ও মেরামতি করে। ডিভিসি-র নিয়ম মেনে পশ্চিম পাড়টি খোলা রাখা হয়েছে। এই দিকেই পড়ে আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুর ব্লকের বেশির ভাগ এলাকা। ডিভিসি দেড় লক্ষ কিউসেকের উপর জল ছাড়লেই তা পশ্চিম পাড়ের খোলা অংশ দিয়ে এসে এই দু’টি ব্লককে ভাসিয়ে দেয়। এ বারেও তাই হয়েছে।
সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদার বলেন, “দামোদরের পশ্চিমে বাঁধ করা যাবে না জেনেই বামফ্রন্ট সরকার ২২ কোটি টাকা খরচ করে ১৩ কিলোমিটার লম্বা খাল (শর্টকাট চ্যানেল) কেটেছিল। বর্তমান সরকার আড়াই বছরে কী করেছে?” সেচমন্ত্রীর অবশ্য দাবি, সাড়ে চার কোটি টাকা খরচ করে ওই খাল সংস্কার করেছে তৃণমূল সরকারই। সেই জন্যই এলাকা ভয়াবহ বন্যা থেকে রেহাই পেয়েছে। একই সঙ্গে তাঁর দাবি, “ডিহিভুরসুট থেকে বকপোতা পর্যন্ত দামোদরের পশ্চিম পাড় এবং জমিদারি বাঁধের প্রচুর সংস্কার করা হয়েছে। ডিভিসি যদি এত বেশি জল ছাড়ে, তা হলে কিছু করার নেই।” সেচমন্ত্রী জানান, আমতা, উদয়নারায়ণপুরের বন্যা নিয়ন্ত্রণে একটি মাস্টার-প্ল্যান তৈরি হচ্ছে। তা নিয়ে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে কথা বলবেন।
প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে পশ্চিম মেদিনীপুর নিয়েও। ঘাটালে বাঁধ ভেঙে এলাকা ডুবেছে, দাঁতন, কেশিয়াড়ি, গোপীবল্লভপুর এ বছরও প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে পূর্বতন জমিদারি বাঁধগুলির অবস্থা এই জেলায় খুবই খারাপ। ঝাড়খন্ডের গালুডি ব্যারাজের ছাড়া জলে পাঁশকুড়ার গড়পুরুষোত্তমপুরে মঙ্গলবার রাতেই সেচ দফতরের প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙেছে। ফলে পাঁশকুড়ার ৮টি অঞ্চল ও পুরসভার ৭টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছে। বুধবার রাত থেকেই সেখানে বাঁধ মেরামতি শুরু করেছে সেচ দফতর ও সেনাবাহিনী। এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি সেচমন্ত্রী। তবে স্থানীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে ওই এলাকায় বাঁধ মেরামতের কাজ শুরুই করা যায়নি। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ার এবং শ্রমিকরা মাটি মাফিয়াদের হাতে মারও খেয়েছে বলে অভিযোগ।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও ডিভিসি ৩২ হাজার কিউসেক জল ছেড়েছে। এর মধ্যে পাঞ্চেত থেকে ২০ হাজার ও মাইথন থেকে ১২ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ডিভিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়, জলাধারগুলির বিপর্যয় এড়াতেই এই জল ছাড়া হচ্ছে।
এ দিন হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে ত্রাণ নিতে গিয়ে বৃহস্পতিবার জলে ডুবে প্রাণ হারিয়েছেন শৈলেন্দ্রনাথ মালিক (৪৬) নামে এক ব্যক্তি। রাজ্যের সাম্প্রতিক দুর্যোগ ও প্লাবনে বুধবার পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিপর্যয় মোকাবিলা মন্ত্রী জাভেদ খান। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, মৃতদের পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফ থেকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.