কিংবদন্তি বরণের প্রস্তুতি তুঙ্গে। যে মুহূর্তে ইডেনে পা রাখবেন সচিন তেন্ডুলকর, সেই মুহূর্তে ইডেনের গ্যালারি হয়ে উঠবে সচিনময়। সেখানে তখন শুধু সচিন আর সচিন।
গ্যালারিতে থাকা প্রায় সত্তর হাজার মানুষের মুখে তখন থাকবে সচিন-মুখোশ। যে দিকেই তাকান না কেন, সচিন তখন দেখবেন শুধু নিজেকে। এমন ভাবেই বিদায়ী মহানায়ককে বরণ করে নেবে ইডেন।
সচিন তেন্ডুলকরের শেষ টেস্ট বলে কথা। বাহুল্যে ওয়াংখেড়েকেও হারিয়ে দিতে তৎপর সিএবি কর্তারা। পরিকল্পনার পাহাড় জমছে ইডেনের ক্লাব হাউসে। সচিন-মুখোশ ছাড়াও রয়েছে সচিন-প্ল্যাকার্ডের পরিকল্পনা। যা মাঠে ঢোকার আগে তুলে দেওয়া হবে দর্শকদের হাতে। গ্যালারিতে ভরা থাকবে সচিনের ছবি ও তাঁকে নিয়ে স্লোগানে ঠাসা প্ল্যাকার্ড। এক এক দিন এক এক রকমভাবে সচিনকে সম্মান জানাবেন ইডেনের দর্শকরা। উদ্যোক্তা সিএবি। কোনও দিন সচিনের ছবি দেওয়া বেলুন ঝাঁকে ঝাঁকে উড়তে দেখা যাবে ইডেনের আকাশে। দর্শকদের সচিনের ছবি দেওয়া গেঞ্জি পরিয়ে বসানো হবে টেস্টের কোনও এক দিন। এ ভাবেই ভারত-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের প্রথম টেস্টকে নিছক কোনও টেস্ট নয়, একেবারে সচিন-উৎসবে পরিণত করার পরিকল্পনা চলছে সিএবি-তে।
ইডেনে সচিনের শেষ ম্যাচের টিকিটই যাতে ভাগ্যবান ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে সবচেয়ে দামি স্মারক হয়ে থাকে, সেই চেষ্টাও চলছে। বৃহস্পতিবার খোদ জগমোহন ডালমিয়া বসে পড়েছিলেন সচিনের কোন ছবি টিকিটে ছাপা হতে পারে, তা ঠিক করতে। আপাতত ঠিক হয়েছে, পাঁচ দিনের টিকিটে সচিনের পাঁচ রকম ছবি ছাপা হবে। তার মধ্যে এক দিনের টিকিটে থাকতে পারে কোনও বিখ্যাত শিল্পীর আঁকা সচিনের ছবিও। শিল্পী যোগেন চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয়েছে সিএবি-র। সনাতন দিন্দার সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়েছে।
এই মহার্ঘ টিকিট অবশ্য সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরা লাইনে দাঁড়িয়ে গলদঘর্ম হয়েও কেনার সুযোগ পাবেন কি না সন্দেহ। অনুমোদিত সংস্থাগুলির কোটার টিকিট পড়ে থাকলে তবেই তার গেট সেল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া মাত্র সাড়ে তিন হাজারের মতো টিকিট ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিক্রি হবে ২৪ অক্টোবর। ২৯ অক্টোবর থেকে অনুমোদিত সংস্থাগুলিকে টিকিট বন্টন করা হবে। তারা কোটার টিকিট পুরো তুলে নেবে বলেই সিএবি কর্তাদের ধারণা। তাই কোনও টিকিট পড়ে থাকার সম্ভাবনা কম। |
সচিন-বরণের আবহে ইডেনের পিচ পরিচর্যা। ছবি: উৎপল সরকার।
|
ইডেনে এই টেস্টকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে কোনও দিক থেকেই আপস করা হবে না বলে জানালেন সিএবি যুগ্মসচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে। যে টেস্টে মাঠের বাইরে সচিনের প্রতিটি মুহূর্তের এক্সক্লুসিভ ছবির স্বত্ব পাওয়ার জন্য যে কোনও অঙ্কের চেক দিতে রাজি সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলগুলি, সেই টেস্ট যাতে ক্রিকেটের ঈশ্বরেরও চিরকাল মনে থাকে, সে জন্য এক নৈশভোজের আয়োজন করে তাতে সচিনকে এক রাজকীয় সংবর্ধনা দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। মাঠের ভিতর সত্তর হাজার মানুষের সামনে সংবর্ধনা তো দেওয়া হবেই, মাঠের বাইরে আরও জমকালো অনুষ্ঠান করে তাঁকে ফেয়ারওয়েল দিতে চান ডালমিয়ারা। কিন্তু আগের বার যেমন ভারত-পাক ম্যাচের আগে ডিনার পার্টি বাতিল করে দিয়েছিল বিসিসিআই-এর দূর্নীতি দমন বিভাগ, এ বারও তেমন হবে কি না, সেটাই খতিয়ে দেখছেন তাঁরা। তবে বিষয়টা যেহেতু সচিনকেন্দ্রিক, তাই সেই বাধা আসবে বলে মনে করেন না বিশ্বরূপ। বললেন, “আমরা চাই ইডেনের টেস্ট হয়ে উঠুক সচিন-উৎসব। সে জন্য যা যা করা দরকার, সবই করা হবে।” |
ভারতরত্ন পাওয়ার দৌড়ে সাময়িক ভাবে ‘হকির জাদুকর’ ধ্যানচাঁদের থেকে পিছিয়ে পড়েও আবার সগৌরবে সেই দৌড়ে ফিরে এলেন ‘ক্রিকেটের ভগবান’ সচিন তেন্ডুলকর।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ দিন হকির একটি অনুষ্ঠানে এসে এই ইঙ্গিত দিয়ে গেলেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ। “সচিন তেন্ডুলকর দেশের একজন আইকন প্লেয়ার। আমি নিজেও ওঁর একজন বড় ফ্যান। ক্রিকেটকে বিদায় জানানোর পর আমরা সচিনকে দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে উন্নতির জন্য কাজে লাগাবার জন্য একটা বড় পরিকল্পনাও নিয়েছি। আর ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রথম ভারতরত্ন পাওয়া নিয়ে মন্ত্রালয়ের কাজকর্ম ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে। ভারতরত্নের দৌড়ে রয়েছেন সচিন এবং ধ্যানচাঁদ,” বললেন দেশের ক্রীড়ামন্ত্রী। সচিনের ২০০তম তথা শেষ টেস্ট ম্যাচ ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে হাজির থেকে দেখতে জিতেন্দ্র সিংহ সাধারণ দর্শকদের মতোই আগ্রহী। আগামী ১৪ নভেম্বর মুম্বই টেস্ট ম্যাচের প্রথম দিনটিতে নিজের সরকারি কাজকর্ম সম্পূর্ণ ফাঁকা রাখার চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। বললেন, “আপনারা যতই বলুন সচিন ওঁর শেষ টেস্ট ইনিংস খেলতে চলেছেন, তবে আমি মনে করি তিনি একটি নতুন ইনিংস শুরু করতে চলেছেন।” |