এএফসি-র আগে আতঙ্কের হার ইস্টবেঙ্গলের

ডেম্পো: ৩ (ক্লিফোর্ড, বেটো-পেনাল্টি সহ ২)
ইস্টবেঙ্গল: ১ (বলজিৎ)
স্টবেঙ্গল কোচ হিসেবে যা কখনও করেননি পিকে, অমল, সুব্রত, মনোরঞ্জন, সুভাষরা বৃহস্পতিবার কল্যাণীতে আই লিগে ডেম্পোর কাছে ১-৩ হেরে সেটাই করলেন ইস্টবেঙ্গল কোচ।
রেফারি প্রতাপ সিংহ সবেমাত্র খেলা শেষের বাঁশি বাজিয়েছেন। শুনেই মাঠে ছেলেদের ফেলে ড্রেসিংরুমের দিকে ছুটতে শুরু করলেন কথায় কথায় ‘পেলে’ ‘তেলে সান্তানা’ আওড়ানো লাল-হলুদের ব্রাজিলীয় কোচ মার্কোস ফালোপা।
ড্রেসিংরুমের উপরের গ্যালারি থেকে ততক্ষণে কোচের উদ্দেশে ভেসে আসছে চোখা চোখা সব তীর্যক মন্তব্য। যার ভেতর একটা— “কথা কম, জয় চাই। মিস্টার ফালোপা বাই বাই।” ফালোপা বাংলা বোঝেন না। জানলে বুঝে যেতেন গ্যালারি থেকে ভেসে আসা ছড়াটা এ দিনের প্রেক্ষিতে ভীষণই প্রতীকী। এ রকম লোক হাসানো স্ট্র্যাটেজি নিয়ে চললে লাল-হলুদ তাঁবু থেকে তাঁকে অচিরে ‘বাই বাই’ শুনতে হতে পারে।
এই কারণেই যে, ইস্টবেঙ্গলের নতুন বিদেশি কোচ লাল-হলুদ সমর্থকদের তীব্র আবেগ এখনও যেন বুঝে উঠতে পারেননি। আট ম্যাচ পর ইস্টবেঙ্গল হারল ডেম্পোর কাছে। উত্তেজিত সমর্থকেরা মাঠে পটকা ছুড়লেন (ম্যাচ কমিশনার রিজওয়ান উল হক কড়া রিপোর্ট পাঠাচ্ছেন ম্যাচের সংগঠক ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে)। অথচ ফালোপা সাংবাদিক সম্মেলনে এসে সটান বলে দিলেন, “আরে, এ দেশে তো এটাই আমার প্রথম হার। ব্রাজিলও অনেক সময় হেরেটেরে যায়। আর ইস্টবেঙ্গল তো এই প্রথম হারল না! আগেও হেরেছে।”
যা শুনে হাসছেন এমনকী প্রতিদ্বন্দ্বী দল ডেম্পোর কোচ আর্থার পাপাস। বললেন, “লোকটা অদ্ভুত। খেলা শেষে হাত না মিলিয়েই ছুটে পালাল! ইস্টবেঙ্গলের দুর্বলতা অ্যারোজে কোচ থাকার সময় থেকেই জানি। তখন আমার তরুণ দলের অভিজ্ঞতার অভাবে হারতাম। এখন ডেম্পোয় বেটোদের অভিজ্ঞতা জেতাচ্ছে।”

কাকভোরে জগিং নয়। ইস্টবেঙ্গল হারতেই
ফালোপার দৌড়। কল্যাণীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস।
“আরে, এ দেশে তো এটাই আমার প্রথম হার। ব্রাজিলও অনেক সময় হেরেটেরে যায়।
আর ইস্টবেঙ্গল তো এই প্রথম হারল না! আগেও হেরেছে।” —
হাইভোল্টেজ হাসিমুখে পাপাস বড় বড় কথা বলতেই পারেন। কারণ বেটোকে নিয়ে তিনি এ দিন এক রকম নাস্তানাবুদ করে দিলেন ফালোপার দলকে। যারা কিনা পাঁচ দিন পরেই এএফসি কাপ ফাইনালে ওঠার ইতিহাস গড়ার স্বপ্ন নিয়ে নামবে কুয়েতের ক্লাবের বিরুদ্ধে।
তার আগে দেশি দলের বিরুদ্ধে কী রকম নাস্তানাবুদ ইস্টবেঙ্গল? শুরুতেই দল বাছায় ভুল। প্রথম একাদশে তুলুঙ্গা। ভূ-ভারতের সব কোচ এখন তুলুঙ্গাকে শেষ তিরিশ মিনিট খেলাতেই পছন্দ করেন। ফালোপা নামালেন গোড়া থেকেই। যে জোয়াকিম ডেম্পোর ওপর গোঁসা করে ইস্টবেঙ্গলে এসেছেন, পুরনো দলের বিরুদ্ধে তাঁর সেই জোশটাকে কোচ কাজেই লাগালেন না!
নওবা সিংহ রাইট ব্যাকে নামলেই সেমেন পাদাং থেকে ডেম্পো— সবাই এ মরসুমে ইস্টবেঙ্গলের ডান দিকটাকেই নিশানা বানাচ্ছেন। এ দিনও শুরু থেকেই নড়বড়ে নওবা। তাঁর দোষেই তিন মিনিটেই প্রথম গোল ক্লিফোর্ডের। নওবার পাশ দিয়ে গোল করে গেলেন তিনি। কোচ যদি অনুশীলনকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেন তা হলে অভিষেক দাস নয় কেন নওবার জায়গায়? ছিয়াত্তরের শিল্ড ফাইনালে অমল দত্তর থেকে মাত্র পঁয়তাল্লিশ মিনিটের নোটিসে রাইট ব্যাকে নেমে জীবনের প্রথম বড় ম্যাচে মোহনবাগানের উলগানাথনকে নড়তে দেননি চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়। সেই চিন্ময় এ দিনের খেলা দেখে বললেন, “দুটো সাইড ব্যাকই তো বারবার ভেতরে ঢুকে আসছিল! সুযোগ নিয়ে গেল জেজে, ক্লিফোর্ড।” নওবাকে তুলে গুরবিন্দরকে শেষ পর্যন্ত নামালেন কোচ। যখন ওপারা দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠের বাইরে। দশ জনের দল থেকে তখন আবার নওবাকে বরং তোলার দরকার ছিল না।

হতোদ্যম চিডি। —নিজস্ব চিত্র।
বেটো, বিলিদের দাপটে দুই সাইড ব্যাকের মতোই এই ম্যাচে কাঁপলেন অর্ণব, উগাও। অনেক দিন পর খুব খারাপ খেললেন মেহতাবও। দায়িত্ব নিয়ে কবে ম্যাচ জেতাবেন ওঁরা। তবে মাঝমাঠের অঙ্কেও হারলেন ফালোপা। ৪-১-৩-২ ছকে তাঁর মাঝমাঠকে শুরু থেকেই প্রেসিং ফুটবল দিয়ে চেপে ধরেছিল ৪-২-৩-১ ছকে মাঠে নামা ডেম্পো। মাঝমাঠ দখলের লড়াইতে ডেম্পোর পাঁচ জন মিডিও মেহতাবদের চার জনকে এক সঙ্গে তিনটে পাস যেমন খেলতে দিচ্ছিলেন না, তেমনই তাড়া করছিলেন প্রতিটা বল। আর বেটো যেন যা খুশি তাই করলেন। রিজার্ভ বেঞ্চে বসে যা দেখেও ফালোপা না লাগালেন মার্কার। না করলেন মাঝমাঠ পুনর্দখলের চেষ্টা। উলটে বলজিৎকে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে নামিয়ে চলে গেলেন ৪-৩-৩ ছকে। যেটা শেষের পনেরো মিনিটের জন্য বেশি কার্যকরী হতে পারত। এই সুযোগে মাঝমাঠ আরও দাপালেন জুয়েল, কার্ভালহোরা।
নিজেদের রক্ষণ থেকেই তাই মোগাদের উদ্দেশে বল ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছিল বারবার। আর চিডিরা সেই এরিয়াল বল ধরতেই পারলেন না। প্রয়োজনীয় ফিটনেসটাই যেন নেই। এমনকী মিস করা পেনাল্টি মারার আগে অহেতুক কয়েকটা মিনিট নষ্ট করতে দেখা গেল চিডিকে। যার সুযোগে বিপক্ষ গোলকিপার মনস্তাত্বিক যুদ্ধে হয়তো এগিয়ে গিয়েছিলেন। অন্য দিকে অভিজিৎ দ্বিতীয় গোল হজম করলেন আউটিংয়ের ভুলে।
জোড়া গোল করে বেটো বললেন, “এএফসি সেমিফাইনালের কথা ভেবে ওরা বোধহয় এই ম্যাচকে গুরুত্ব দেয়নি।” কিন্তু কুয়েত এসসি-র বিরুদ্ধে এ রকম খেললে ইতিহাসে নাম তোলার আগে ফালোপা নিজেই না মরসুমের মাঝপথে ‘ইতিহাস’ হয়ে যান এটাই চিন্তা ময়দানের!

ইস্টবেঙ্গল: অভিজিৎ, নওবা (গুরবিন্দর), অর্ণব, উগা, সৌমিক, মেহতাব, তুলুঙ্গা (বলজিৎ), লোবো (জোয়াকিম), লালরিন্দিকা, চিডি, মোগা।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.