১৯৯তম টেস্টটা ইডেনেই খেলব, ফোনে চেয়ে নিলেন সচিন নিজেই
ভারতীয় ক্রিকেটের প্রশাসনিক ইতিহাসে এমন ঘটনা ঘটেছে কি না, সন্দেহ। যেখানে ট্যুর অ্যান্ড ফিক্সচার্স কমিটির অস্তিত্ব প্রায় অবলুপ্ত! রোটেশন নামক নিয়মের কচকচি উড়ে যাচ্ছে নিমেষে! এবং এক মহানায়কের ক্রিকেট রোমান্সের সর্বশেষ দুই কেন্দ্রস্থল ঠিক করছে যুক্তি নয়, আবেগ!
আগামী ১৪ নভেম্বর থেকে ওয়াংখেড়েতে ক্রিকেটজীবনের শেষ টেস্ট খেলতে নামছেন সচিন রমেশ তেন্ডুলকর। দু’শো টেস্টের মহাগৌরব তো বটেই, মহানায়কের চিরপ্রস্থানের বেদীও ওখানে। মুম্বই কেন? কারণ মায়ের জন্য সচিন তেন্ডুলকরের আবেগ। শেষ টেস্টে মাঠে মা-কে আনতে চান সচিন।
তার আগে, নভেম্বরের ৬ তারিখ থেকে ইডেন দেখবে অবসরের প্রাক্-লগ্ন। বেঙ্গালুরু নয়, গত পাঁচ দিনের জল্পনামতো নয়াদিল্লিও নয়। ওটা দেখবে কলকাতা। কেন? কারণ কলকাতার সমর্থককুলের প্রতি মহানায়কের আবেগ। প্রস্থানের আগে সচিন চান, কলকাতাকে এক অনন্য ইতিহাসের সাক্ষী করে যেতে। একশো নিরানব্বইও তো কিছু কম নয়! আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ওই টেস্ট যদি পাঁচ দিন গড়ায়, তা হলে ১০ নভেম্বর এক বিরল অভিজ্ঞতার সাক্ষী হবে কলকাতা। ওই দিনে একই সঙ্গে শহরে থাকবেন তিন কিংবদন্তি সচিন, অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খান। শেষ দুই মহারথী থাকবেন ফিল্মোৎসবের উদ্বোধনে।
মায়ের টানেই মুম্বইয়ে শেষ টেস্ট খেলবেন সচিন। —ফাইল চিত্র।
ঘড়ি বলছে, সকাল সওয়া এগারোটা। জয়পুরের সওয়াই মান সিংহ স্টেডিয়াম। আরসিএ অ্যাকাডেমির মাঠে তখন চুটিয়ে ফুটবল খেলছে টিম মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। কিন্তু সে সব কে দেখছে? উপস্থিত সাংবাদিকদের বরং দেখা গেল, মোবাইলে বোর্ডের মেল ঘাঁটতে ব্যস্ত। সচিন তেন্ডুলকরের ক্রিকেটজীবনের অন্তিম দু’টো টেস্ট স্টেশন ততক্ষণে চূড়ান্ত। একটা ওয়াংখেড়ে, একটা ইডেন। সিদ্ধান্ত সরকারি ও সর্বসম্মত। যা দেখে সাংবাদিককুলের কেউ কেউ বলেও ফেললেন, ‘ওয়াংখেড়েটা বোঝা গেল। কিন্তু কলকাতা কী করে ঢুকে পড়ল? রোটেশনেও তো আসে না!’
ঠিক। রোটেশন ধরলে, সচিনের একশো নিরানব্বইতম টেস্টের কেন্দ্র হয় আমদাবাদ। কলকাতা নয়। কিন্তু সচিন তেন্ডুলকর নিজে ফোন করে চাইলে কী করা যাবে!
সোমবার, বিজয়ার বিকেল নাগাদ রীতিমতো হইচই পড়ে যায় সিএবি-তে। কী ব্যাপার? না, সচিন সরাসরি ফোন করেছেন সিএবি প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়াকে! এবং ফোন করে বলেছেন যে, ওয়াংখেড়েতে তিনি দু’শোতম টেস্টটা খেলতে চান তাঁর মা-কে মাঠে আনার ইচ্ছে আছে বলে। কিন্তু একশো নিরানব্বইতম টেস্ট তিনি খেলতে চান ইডেনে। ওয়াংখেড়ে তাঁর আঁতুড়ঘর হলে, ইডেনও তাঁর ক্রিকেটজীবনে কম সুখকর স্মৃতির জন্ম দেয়নি। কলকাতার ভালবাসাও তাঁর কাছে কম নয়।
এবং আশ্চর্য শোনালেও সত্যি যে, ওই এক ফোনে সচিন যেমন শীতের কলকাতাকে ইতিহাসের সাক্ষী থাকার সুযোগ করে দিলেন, ঠিক তেমনই কোথাও যেন বিসিসিআই-সিএবি-র হালফিল সম্পর্কের শৈত্যপ্রবাহে কিছুটা উষ্ণতার আমদানি করে ফেললেন! প্রত্যক্ষ ভাবে নয়, কিন্তু পরোক্ষ ভাবে তো বটেই।
বোর্ড নির্বাচনের পর থেকেই সিএবি-র সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হতে থাকে শ্রীনিবাসনের। সিএবি কর্তাদের মনে হয়েছিল যে, বোর্ড প্রেসিডেন্টের চরম দুঃসময়ে তাঁর পাশে থাকলেও সিএবি-র যতটা মর্যাদা পাওয়া উচিত ছিল, তার সিকিভাগও দেননি শ্রীনিবাসন। কোনও কোনও সিএবি কর্তা তো শ্রীনিবাসনের নাম করে প্রচারমাধ্যমে ক্ষোভ দেখাতেও ছাড়েননি। জানা গেল, বেগতিক দেখে নাকি ড্যামেজ কন্ট্রোলে নেমেছিলেন বোর্ড প্রেসিডেন্ট। ডালমিয়াকে বারবার ফোন করে শ্রীনি বলতে থাকেন, সচিনের একশো নিরানব্বইতম টেস্ট আপনারা করুন, অন্য কেউ নয়। কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। বিজয়ার সকালেও নাকি ফের সিএবি প্রেসিডেন্টকে ফোন করেন শ্রীনি। তখনও তাঁকে শুনতে হয়, করলে সিএবি সচিনের দু’শোতম টেস্ট করবে। কোনও ভাবেই একশো নিরানব্বই নয়। তখন পর্যন্ত বোর্ড-সিএবি কোনও রফাসূত্রই পাওয়া যাচ্ছিল না।
যা পাওয়া গেল বিকেল নাগাদ। সচিনের ফোনের পর। মহানায়ক নিজে ইডেনে একশো নিরানব্বইতম টেস্ট খেলতে চাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশের পর সিএবি-র শীর্ষ কর্তাদের কয়েক জনকে ফোন করেন ডালমিয়া। পরবর্তী স্ট্র্যাটেজি ঠিক করার জন্য। কারণ, চব্বিশ ঘণ্টারও কম সময়ে বোর্ডের ট্যুর অ্যান্ড ফিক্সচার্স কমিটির বৈঠক। সিএবি-র শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ডালমিয়ার কথাবার্তার পর ঠিক হয় যে, ইডেন নিয়ে সচিনের ব্যক্তিগত ইচ্ছে প্রকাশের পরে বোর্ডের সঙ্গে দ্বন্দ্ব টেনে যাওয়ার মানে অন্তত এ ক্ষেত্রে হয় না। বরং হিতে-বিপরীত হতে পারে। সমালোচনার ঝড় উঠতে পারে। লোকে বলতে পারে, ওয়াংখেড়ের সঙ্গে যুদ্ধে যাচ্ছে কেন ইডেন? সচিনের তো ওটা ঘরের মাঠ। একান্ত ব্যক্তিগত ক্রিকেট-পীঠ। সিএবি কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে বলছিলেন, “বোর্ডের যে রিলিজ আমরা পেয়েছি তাতে বলা আছে, ওয়াংখেড়ে আর ইডেনকে ‘আউট অব টার্ন’ ম্যাচ দেওয়া হল। অর্থাৎ, সচিনের ইচ্ছেকে এখানে মর্যাদা দেওয়া হল। আমরা গর্বিত।” আর সিএবি-র যুগ্ম-সচিব সুবীর গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, “এই আয়োজন সফল করতে মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রশাসন, সকলের সাহায্য আমাদের দরকার।”
বলা হচ্ছে, মঙ্গলবারের পর দু’শোর কেন্দ্র নিয়ে ওয়াংখেড়ের সঙ্গে যুদ্ধ থেকে ইডেন দৃশ্যত সরে গেল। কিন্তু অদৃশ্য একটা যুদ্ধ এখনও চলবে। সংবর্ধনার জাঁকজমকে, আয়োজনের মোহিনী আলোয়। ইতিমধ্যেই বলা হচ্ছে যে, মা-সহ সচিনের পুরো পরিবারকে ইডেনে আসার আমন্ত্রণ জানানো হবে। আসতে রাজি হলে রাজকীয় ভাবে তাঁদের হাজির করা হবে ইডেনে। টেড ডেক্সটারদের ক্ষেত্রে যেমন হয়েছিল।
দু’শো টেস্টের মহাসন্ধিক্ষণ আসতে মাসখানেক এখনও বাকি। কিন্তু কোথাও যেন একটা মায়াজাল তৈরি হয়ে গিয়েছে। প্রশাসক থেকে ক্রিকেটার সবাই যেন এক অদ্ভুত ঘোরে আচ্ছন্ন। মহেন্দ্র সিংহ ধোনি যেমন আশাবাদে ডুবে যে, বহু দিন পর তিনি পরপর দু’টো হাউসফুল টেস্ট ম্যাচ দেখতে পাবেন! যা আবার কবে দেখবেন, জানেন না। সিএবি কর্তারা আবার শুনিয়ে রাখছেন, দু’শো টেস্টের আগে ইডেনেই এমন কিছু একটা ঘটবে, যা দেখলে ওয়াংখেড়ের পাশাপাশি ইডেনকেও লোকে ভুলতে পারবে না! কিন্তু সেটা কী জানতে চাওয়া হলে, ‘দেখিয়ে দেব’ বাদে উচ্চবাচ্য নেই। বিরাট কোহলির মতো স্ট্রিটস্মার্ট ক্রিকেটার পর্যন্ত সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে থতমত খেয়ে গেলেন। বলে ফেললেন, “সচিন পাজি যে দিন অবসর নেবে, আমার ঠিক কী মনে হবে? হতাশ লাগবে...সেটা ঠিক। কিন্তু ঠিক কী মনে হবে, বুঝতে পারছি না!”
আগামী ৬ থেকে ১৮ নভেম্বর কী যে হবে, বোধহয় শুধু ঈশ্বর জানেন!

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.