পুজোয় পড়বে ভোটের প্রভাব, জল্পনা কৃষ্ণনগরে
শারদোৎসবের শেষ পর্বেই কৃষ্ণনগরের সব থেকে জাঁকজমকপূর্ণ উৎসব জগদ্ধাত্রী পুজো। তার ঠিক পরেই এই শহরের পুরভোট। মঙ্গলবার শহরের পুরসভায় যে রাজনৈতিক পালাবদল ঘটল, তা পুজো ও তার পরপরই পুরভোটে প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন শহরের মানুষ। একই ধারণা রাজনীতিকদেরও।
কৃষ্ণনগর পুরসভার ২২ জন কাউন্সিলরই এই মুহূর্তে তৃণমূলের। ২২ নভেম্বর শহরে পুরভোট। তার মাত্র কয়েকদিন আগে নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জগদ্ধাত্রী পুজোর সময় তাই ভোটের প্রচার তুঙ্গে থাকবে। সেই প্রচারের ক্ষেত্রে পুজোর মঞ্চ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনীতিকরাও। জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের কথায়, “পুজো সহ যে কোনও সামাজিক অনুষ্ঠান মানুষের সঙ্গে মেলামেশার অন্যতম মাধ্যম। আর রাজনীতি মানুষকে বাদ দিয়ে নয়। মানুষের সঙ্গে আমাদের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজোয় সেই সম্পর্ক নিবিড়তম হবে।” সদ্য কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন পুরপ্রধান অসীম সাহা। তাঁরও বক্তব্য, “এই রাজনৈতিক পালাবদলের প্রভাব কিন্তু পুজোয় এ বার পড়বে।”
শহরের বেশিরভাগ বড় পুজোর সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে কৃষ্ণনগরের রাজনৈতিক নেতাদের। অনেকেই নানা পুজোর আয়োজক সংস্থা বা ক্লাবের প্রধান কর্তাব্যক্তিও। আর সে কারণেই পুরভোটের মুখে শহরের এই প্রধান উৎসবে রাজনীতির প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন কৃষ্ণনগরের মানুষ। যেমন শহরের গোলাপট্টি বারোয়ারির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্করবাবুর নাম। হাতারপাড়া বারোয়ারির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর দিলীপ বিশ্বাসের নাম। চৌধুরীপাড়া বারোয়ারির সঙ্গে আর এক কাউন্সিলর প্রদীপ দত্ত এবং চাষাপাড়ার পুজোর সঙ্গে প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতম ঘোষের নাম জড়িয়ে রয়েছে। গৌতমবাবুর স্ত্রী মিঠুদেবী এখন কাউন্সিলর। শহরের অন্যতম দুই প্রধান পুজো পাঁচমাথা মোড় বারোয়ারি ও মন্দির নেতাজি বাগের পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পুরপ্রধান অসীমবাবুর নাম।
সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষ্ণনগরেরই বাসিন্দা এসএম সাদি বলেন, “কৃষ্ণনগরের বিভিন্ন এলাকার বারোয়ারি পুজোগুলোর সঙ্গে সেই সেই এলাকার মানুষের ভাবাবেগ প্রচণ্ড ভাবে জড়িয়ে থাকে। পুজোগুলো অবশ্য দলমত নির্বিশেষেই করা হয়। কিন্তু তার মধ্যে স্থানীয় নেতাদের কর্তৃত্ব করার প্রবণতা রয়েছে। সম্প্রতি শাসক দল এই ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানগুলি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে বলেও লক্ষ করছি। জগদ্ধাত্রী পুজোও তার ব্যতিক্রম নয়। কিন্তু এর ফলে পুজোর সর্বজনীন ভাবটি আঘাত পাচ্ছে।” অসীমবাবুর অবশ্য সোজা কথা, “পুজোয় এলাকার সব মানুষের সম্পর্ক থাকে। রাজনৈতিক প্রভাব থাকলেও তাই তার জন্য পুজোর সর্বজনীন প্রকৃতি আঘাত পাবে না।”
পুজোর সঙ্গে রাজনীতির এই সম্পর্ক শহরবাসী আগেও দেখেছেন। শহরের কালীনগরের ‘রেনবো’ ক্লাবের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে শহরের দীর্ঘদিনের কাউন্সিলর দিলীপ শর্মা বা ‘দিলুদা’র নাম। প্রয়াত দিলীপবাবু ছিলেন কংগ্রেসের প্রভাবশালী ও দাপুটে কাউন্সিলর। এই পুজোও তাই কংগ্রেসের পুজো বলেই পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০০৮ সালে দিলুবাবু পুরভোটের মুখে তৃণমূলে যোগ দিলে এই পুজোতেও তার প্রভাব পড়ে। শহরের কংগ্রেসের পরিচিত নেতা-কর্মীদের পরিবর্তে আনাগোনা বাড়ল তৃণমূল নেতাদের। পুজোর এক কর্তার কথায়, “দিলুদা’র সঙ্গে এলাকার অনেক কংগ্রেস কর্মীও তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তাই মুখ দেখে রং পাল্টে যাওয়াটা বোঝা যেত না। কিন্তু এলাকার মানুষ দেখলেন, আগে যে পুজোয় সমাদরে ডেকে নিয়ে আসা হত কংগ্রেসের তাবড় নেতাদের, সে বার সেখানে ভিড় বাড়ল শহরের তৃণমূল নেতাদের।”
প্রাক্তন কাউন্সিলর গৌতমবাবুর কথায়, “পুজো সরাসরি রাজনৈতিক মঞ্চ নয়। কিন্তু কেউ দীর্ঘদিন ধরে কাউন্সিলর থাকলে এলাকায় তাঁর প্রভাব তৈরি হয়ে যায়। তাঁর দলেরও প্রভাবও বাড়ে। পুজো তার ব্যতিক্রম নয়। কোনও নেতা দলবদল করলে তার প্রভাবও তাই এলাকার উপরে পড়ে। এটাই স্বাভাবিক। এ বারও তাই হবে বলেই মনে করি।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.