সামনের নভেম্বরেই পুরসভার ভোট। তার ঠিক আগে কংগ্রেসের হাত থেকে কৃষ্ণনগর পুরসভার বোর্ডের দখল নিল তৃণমূল। চেয়ারম্যান-সহ পুরসভার কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা যোগ দিলেন তৃণমূলে। সেই সঙ্গে সমাজবাদী পার্টির দুই কাউন্সিলরও তৃণমূলে চলে আসায় নদিয়ার জেলা সদরে এই পুরসভা এখন বিরোধীশূন্য ভাবে রাজ্যের শাসক দলের হাতে!
গত পুর নির্বাচনে কৃষ্ণনগরে ২৪টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৪টিতে জিতেছিল কংগ্রেস। তৃণমূল পেয়েছিল ৮টি। বামফ্রন্টের তরফে সমাজবাদী পার্টির ঝুলিতে গিয়েছিল ২টি আসন। পরে ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোপালকৃষ্ণ কর পদত্যাগ করেন। গত বছর মে মাসে আত্মঘাতী হন তৃণমূল কাউন্সিলর দিলীপ শর্মা।
তার আগেই অবশ্য খুনের ঘটনার গ্রেফতার হওয়া তৃণমূল কাউন্সিলর দেবানন্দ শর্মা জেল থেকে ছাড়া পেয়ে কংগ্রেসে যোগ দেন। ফলে বর্তমানে ২২ জন কাউন্সিলরের মধ্যে কংগ্রেসের ছিল ১৫ জন, তৃণমূলের ৬ ও সমাজবাদীর এক। এখন সকলেই তৃণমূলের! প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে বীরনগর পুরসভার চেয়ারম্যান কংগ্রেসের পার্থ চট্টোপাধ্যায় ৯ জন কাউন্সিলরকে নিয়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। পরে একই ঘটনা ঘটেছে কোচবিহারে।
চেয়ারম্যান অসীম সাহা-সহ কংগ্রেসের কাউন্সিলরেরা মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তৃণমূল ভবনে এ দিন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় দাবি করেছেন, “গত দু’বছর ৪ মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্যে যে উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চলছে, তাতে সামিল হতে চেয়েই নানা দল থেকে সকলে তৃণমূলে আসছেন।” আগামী পুরভোটেও মানুষের রায় তাঁদের দিকেই যাবে বলে আশাবাদী মুকুলবাবু। পক্ষান্তরে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের অভিযোগ, কোচবিহার থেকে কৃষ্ণনগর একই রকম ‘ঘৃণ্য চক্রান্তে’ কংগ্রেস ভেঙে বোর্ড দখল করা হচ্ছে! প্রদীপবাবুর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী এক দিকে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর কথা মুখে বলছেন। অন্য দিকে, তাঁর দল অন্য কোনও দলের হাতে পুরসভার মতো স্থানীয় প্রশাসন থাকতে দিচ্ছে না! নদিয়ায় যে ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে, সেই ষড়যন্ত্রে জেলা পুলিশের একাংশও যুক্ত।” এমন পরিস্থিতিতে কিছুতেই সুষ্ঠু পুরভোট সম্ভব নয় বলে এ দিনই রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার মীরা পাণ্ডেকে চিঠি দিয়েছেন প্রদীপবাবু।
কাউন্সিলরদের দলবদলের জেরে জন্মলগ্ন থেকে তাদের দখলে থাকা কৃষ্ণনগর পুরসভা এই প্রথম হাতছাড়া হল কংগ্রেসের। দল ভাঙানোর প্রক্রিয়া অবশ্য শুরু হয়েছিল বেশ কিছু দিন আগেই। বাকি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হল এ দিন। কংগ্রেস ছেড়ে চেয়ারম্যান অসীমবাবুর বক্তব্য, “শহরের উন্নয়নের স্বার্থেই আমরা শাসক দলে যোগ দিলাম। রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে তৃণমূল। আমরা তৃণমূলের সঙ্গে থাকলে আরও ভাল করে শহরটাকে সাজানোর সুযোগ পাব।” তবে দলত্যাগের আগে অসীমবাবু তৃণমূলকে দু’টি শর্তের কথা বলেছিলেন। তৃণমূল দু’টি শর্তই মেনে নিয়েছে বলে দাবি অসীমবাবুর। তাঁর কথায়, “বর্তমানের সমস্ত কাউন্সিলরকেই আসন্ন পুরভোটে টিকিট দিতে হবে। আমার নেতৃত্বেই কৃষ্ণনগরে তৃণমূল পুরভোটে লড়বে।”
জেলা রাজনীতিতে অসীমবাবু বরাবর কংগ্রেস নেতা শঙ্কর সিংহের বিশ্বস্ত অনুগামী হিসেবে পরিচিত। তাঁর দলত্যাগে শঙ্করবাবু বড়সড় ধাক্কা খেলেন বলেই মনে করা হচ্ছে। শঙ্করবাবু বলেন, “আবারও প্রমাণিত হল, রাজনীতিতে নৈতিকতা ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্যই এই সিদ্ধান্ত! কেউ আর ক্ষমতা থেকে দূরে থাকতে রাজি নয়।” প্রদেশ নেতৃত্বের অবশ্য বক্তব্য, দুবরাজপুরে এ ভাবে গোটা বোর্ড তৃণমূলে চলে যাওয়ার পরেও গত মাসে সেখানকার ভোটে কংগ্রেস ভাল লড়াই করেছিল। কৃষ্ণনগরেও তা-ই হবে। |