বিজয়া সম্মিলনীতে থাকত ঢালাও খাবার
দেশ স্বাধীন হল আর লালগোলার রাজবাড়ি থেকে বিজয়া সম্মিলনীও উধাও হয়ে গেল। কারণ লালগোলার দানবীর রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায় দেশ স্বাধীন হওয়ার বছর প্রয়াত হয়েছেন। “তাঁর প্রয়াণের সঙ্গেই রাজাবাড়ির পুজোর জৌলুস কমতে থাকে। কমতে কমতে সেই জৌলুস বর্তমানে তলানি এসে ঢেকেছে। অথচ মহারাজা বেঁচে থাকতে কেবল রাজবাড়িতেই জাঁকিয়ে পুজো ও পুজো মিলনী হত তাই নয়, রাজার অর্থে, রাজার তদ্বিরে লালাগোলা থেকে বেশ কয়েক কিলোমিটার দূরে বাঁশগাড়া, দেওয়ানসরাই ও যশোইতলাতে তিন তিনটে দুর্গাপুজো হত। আসলে ওই সব এলাকার আমজনতাও যাতে উত্‌সব উপভোগ করতে পারেন সেই জন্যই তিনি ওই তিনটি পুজোর আয়োজন করতেন” বললেন, অতীন্দ্রনারায়ণ রায়। রাজা যোগীন্দ্রনারায়ণ রায়ের নাতির মেয়ের ছেলে অতীন্দ্রনারায়ণবাবু অবশ্য চন্দনবাবু নামেই বেশি পরিচিত।
সত্তরোর্ধ্ব চন্দনবাবু বলেন, “বিজয়া সম্মিলনীতে ভারতীয় মার্গ সঙ্গীতের আসর বসত রাজবাড়িতে। নাটমন্দিরে হত যাত্রাপালা ও নাটক। অবারিত দ্বার ছিল ভিক্ষাজীবী থেকে সম্পন্ন ব্যক্তি পর্যন্ত সবার। পুজোর সময় রাজবাড়িতে যেই পা রাখুন না কেন তিনি না খেয়ে যেতে পারবেন না। পুর্বপুরুষদের কাছ থেকে শুনেছি বিজয়া সম্মিলনীতেও ঢালাও খাবারের আয়োজন থাকত।” এখন সেই রাজাও নেই, সেই সুদিনও আর নেই।
বীরভূম লাগোয়া মুর্শিদাবাদ জেলার বড়ঞা থানার পাঁচথুপি গ্রামটি আয়তনে বিশাল, বয়সে বেশ প্রাচীন, ঐতিহ্যেও বর্ধিষ্ণু। বৌদ্ধধর্মের পাঁচটি স্তূপের অবস্থানের কারণে ওই গ্রামের নাম পাঁচথুপি। নবাব ও ইংরেজ আমলে ওই গ্রামে প্রায় ডজন খানেক জমিদার ছিলেন। যেমন বড় তরফ অর্থাত্‌, বল্লীকান্ত ঘোষ মৌলিক। মধ্যম তরফ অর্থাত্‌, রামকানাই ঘোষ মৌলিক। ন’ তরফ অর্থাত্‌, নৃসিংহমোহন ঘোষ মৌলিক, ছোট তরফ অর্থাত্‌ গোবিন্দদেব ঘোষ মৌলিক। নাট্যসংস্থা ‘উদয়ন পাঁচথুপির’ কর্ণধার বাসুদেব ঘোষ বলেন, “ঘোষ মৌলিকরা ছাড়াও পাঁচথুপিতে জমিদার হিসাবে যথেষ্ট খ্যাতি রয়েছে ঘোষ হাজরা ও ঘোষ রায় পরিবারের। বেণীনাথ ঘোষ হাজরার ৭ ছেলের মধ্যে জমিদার হিসাবে ৩ জনের প্রভাব ও প্রতাপ ছিল বেশি।” ওই তিনটি জমিদার পরিবার হল— ভারতীবর ঘোষ হাজরা অর্থাত্‌, বাঁটির বাড়ি। বৈকুণ্ঠনাথ ঘোষ হাজরা অর্থাত্‌, বৈকুণ্ঠ বাড়ি। কমলনয়ন ঘোষ হাজরা অর্থাত্‌, পুরাতনবাড়ি।
এই জমিদার বাড়িগুলিতে দুশো থেকে তিনশো বছর আগে দুর্গাপুজোর প্রতিষ্ঠা হয়। বাসুদেববাবু বলেন, “দশমীর বিকালে দেবীদুর্গাকে মিষ্টি মুখ করানো পর মণ্ডপ চত্বরেই শুরু হত সিঁদুর খেলা। তারপর প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হত। বিসর্জনের পর দু’দিন ধরে গ্রামের বিভিন্ন জমিদার পরিবার অন্য জমিদার পরিবারে গিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজয়া পালন করত।” মধ্যম তরফ অর্থাত্‌, জমিদার রামকানাই ঘোষ মৌলিকের বর্তমান বংশধর শ্রীজীবেন্দ্র ঘোষ মৌলিক আই আই টি-র অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। সত্তর বছর বয়সী শ্রীজীবেন্দ্রবাবু বলেন, “এক পরিবারের সঙ্গে অন্য পারিবারের বিজয়ামিলনীর পাট চুকলে দ্বাদশীর দিন গ্রামের বাণীমন্দিরে বসত সর্বজনীন বিজয়া সম্মিলনী। তারপর কোজাগরী রাতে ঘোষ হাজারদের সিংহমন্দিরে বসত পূর্ণিমা সম্মিলনী।” দুর্গাপুজোকে ঘিরে বাণীমন্দিরের উদ্যোগে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত তিন দিন আঁকা, গান ও আবৃত্তি-সহ বিভিন্ন বিষয়ের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত। বাসুদেববাবু বলেন, “বিজয়া সম্মিলনী ও পূর্ণিমা সম্মিলনীতে নাচ, গান ছাড়াও যাত্রা ও নাটক পরিবেশন করা হত। বহরমপুর থেকে অনেক শিল্পী ওই সম্মিলনী অনুষ্ঠানে গান গাইতে যেতেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যাঁর সফল হতেন তাঁদের সম্মিলনী মঞ্চ থেকে পুরস্কৃত করা হত।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.