দুর্গাপুজোর নিরঞ্জনের ঢাকের আওয়াজের সঙ্গেই এ বার মিশে গিয়েছে ঈদুজ্জোহার নমাজে সামিল হওয়ার জন্য আহ্বান।
আজ বুধবার, আত্মত্যাগের উত্সব ঈদ-উল-আযহা। যার পোশাকি নাম ঈদুজ্জোহা। ওই উত্সব পালনের জন্য জেলা জুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে তুমুল ব্যস্ততা, তেমনই অন্য এক ব্যস্ততা রয়েছে ভাগীরথীর বিসর্জনের ঘাটগুলিতে।
মঙ্গলবার দশমীর পরে বুধবারও চলেছে শেষ মুহূর্তে প্রতিমা বিসর্জন। তবে দুর্গাপুজোর সমাপন আর ঈদুজ্জোহা উদযাপনের আগে টেলিফোনে, এসএমএসে, ফেসবুকের পাতায় ‘বিজয়ার শুভেচ্ছা’ ও ‘ঈদ মুবারক’ জানানোর সুযোগ পেয়ে দুই সম্প্রদায়ের মানুষ অবশ্য বেজায় খুশি। কেননা, এই মাহেন্দ্রক্ষণ সচরাচর দেখা যায় না!
মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “সরকারি ভাবে আগামী ১৭ অক্টোবর বিসর্জনের শেষ দিন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ইদুজ্জোহা উপলক্ষে বুধবার কোনও প্রতিমা নিরঞ্জন হবে না পুজো কমিটিগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির প্রতিমা বিসর্জন করা যেতেই পারে।” বহরমপুরের পুরপ্রধান নীলরতন আঢ্য অবশ্য বলেন, “বহরমপুরের যে সমস্ত পুজো কমিটি এদিনও প্রতিমা বিসর্জন করেননি, বিসর্জনের শেষ দিন বৃহস্পতিবার হওয়ায় তারা শুক্রবার বিসর্জন করবে বলে স্থির করেছে। এর পাশাপাশি ঈদুজ্জোহার দিন কোনও প্রতিমা বিসর্জিত হবে না বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
এদিকে মুসলিম প্রধান মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ যাঁরা রাজমিস্ত্রি-দিনমজুরের কাজের জন্য বা বিভিন্ন কর্মসূত্রে বাইরে রয়েছেন, তাঁরা ঈদুজ্জোহার উত্সবে সামিল হওয়ার জন্য বাড়ি ফিরছেন। সেই জন্য গত কয়েক দিনে বাস-ট্রেনে তিলধারণের জায়গা নেই। লালগোলাগামী প্রতিটি ট্রেনের কামরায় যাত্রীরা বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন। আসন না পেয়ে বহরমপুরগামী বাসের ছাদে বসেও অনেকে বাড়ি ফিরেছেন। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা মানুষ জনকে উত্সবের আগে বাড়ি পৌঁছে দিতে গত দু’দিন ধরে মারুতি ভ্যান ডোমকল মহকুমা এলাকার বিভিন্ন বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকছে। বাস থেকে নামতেই যাত্রী তুলে নিয়ে বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত ওই সব গাড়ি।
সেই সঙ্গে ঈদুজ্জোহা উপলক্ষে জেলার ২৬টি ব্লকের বেশ কিছু ঈদগাহ সাজানো হয়েছে। কোনও কোনও মুসলিম মহল্লাগুলিও সেজে উঠেছে। বিভিন্ন গ্রাম আলো দিয়ে সেজেছে। তৈরি হয়েছে তোরণ। বিভিন্ন এলাকার দোকানপাটও অনেক রাত পর্যন্ত খোলা রয়েছে। কর্মসূত্রে বাইরে থাকা মানুষজন কেনাকাটার জন্য স্থানীয় বাজারের উপরেই নির্ভর করেন। জেলা চেম্বার অফ কমার্সের যুগ্ম সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, “ত্রয়োদশী পর্যন্ত বহরমপুরের বাজার বন্ধ রয়েছে। কিন্তু লালবাগ, ইসলামপুর, ডোমকলের বাজারে ভাল বেচাকেনা হয়েছে বলে শুনেছি। জেলার অন্যান্য মহকুমা এলাকা ধরলে বাইরে থেকে প্রায় কয়েক লক্ষ মানুষ উত্সবে সামিল হতে জেলায় ফিরেছেন। তারা জমানো অর্থ নিয়ে ফেরায় ব্যবসা ভাল হওয়ারই কথা।” |