টিকিট কেটে প্রতিমা দর্শন। চাঁদার ঘাটতি মেটাতে এমন সিদ্ধান্তই নিয়েছিল রঘুনাথগঞ্জ কিশোর বাহিনীর সদস্যরা। তাতে সাড়াও মিলেছিল ভালই। সপ্তমী, অষ্টমীতে দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে পুজো কর্তারা আশ্বস্ত হয়েছিলেন যে বাজেটের আশি হাজার টাকার ঘাটতি মিটে যাবে। কিন্তু বাদ সাধল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ঝড়-বৃষ্টিতে নবমী ও দশমীতে লোকজন সেভাবে পথে না নামায় বাজেটে বেশ কিছুটা ঘাটতি এখনও থেকেই গিয়েছে। তবে টিকিট কেটে প্রতিমা দর্শনের এই ব্যবস্থা থেকে তাঁরা যে সরে আসছেন না তা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন কিশোর বাহিনীর সদস্যরা।
ম্যাকেঞ্জি কলোনীতে কিশোর বাহিনীর এই পুজো এবারে ছয় বছরে পা রাখল। প্রতি বছরই নিত্য নতুন থিম নিয়ে প্রতিমা ও মণ্ডপকে সাজিয়ে তোলেন ক্লাব সদস্যরা। এবারের থিম ছিল রামচন্দ্রের অকাল বোধন। সেই থিমকে সাজিয়ে তুলতে বেছে নেওয়া হয়েছিল ম্যাকেঞ্জি পার্ক সংলগ্ন একটি পুকুরকে। এক দিকে সাগরে বানর সেনাদের সেতু বন্ধন, অন্য দিকে রামচন্দ্রের অকালে দুর্গার বোধন। ২১ টি পুতুল দিয়ে সাজানো সেই থিম আর বাহারি আলোক সজ্জায় এবারের পুজো দর্শনার্থীদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। এবারের থিম পুজোর পরিকল্পনা করেছিলেন ক্লাব সম্পাদক কাতির্ক হালদার। তিনি বলেন, “এতদিন বাজেটের বেশিরভাগ টাকাটাই দিতে হত ক্লাবের দেড়শো সদস্যকে। এবারের পুজোর বাজেট বেশি হওয়াতে সকলেই চিন্তার মধ্যে ছিলেন। তাছাড়া বিজ্ঞাপণও এখন বাড়ন্ত। এমন অবস্থায় ক্লাব সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকা হয়।”
ক্লাবের অন্যতম কর্তা বাবলু হালদার বলেন, “ওই সভাতেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে এই পুজো দেখার জন্য দর্শনার্থীদের কাছ থেকে ২ টাকা করে নেওয়া হবে। তবে এই আশঙ্কাটাও ছিল যে টিকিট কেটে মানুষ আসবেন তো ঠাকুর দেখতে? ঝড়-বৃষ্টিতে শেষের দিকে লোকজন সেভাবে আসতে পারেননি ঠিকই। তবে আমাদের প্রচেষ্টা কিন্তু ব্যর্থ হয়নি।”
ক্লাব কর্তারা জানাচ্ছেন, চাঁদা তোলার নানা ঝামেলা আছে। চাঁদা তুলতে গিয়ে অপ্রিয় অবস্থার মধ্যেও পড়তে হয়। এত কিছু করেও যা চাঁদা ওঠে তা দিয়ে দুর্গা পুজো করা কঠিন হয়ে পড়ে। আমাদের লক্ষ্য ছিল আশি হাজার টাকা তোলার। সপ্তমী, অষ্টমীতে আসা দর্শনার্থীদের টিকিট বিক্রি করে আমরা ত্রিশ হাজার টাকা তুলেছি। বৃষ্টি বাধ না সাধলে বাকি টাকাটাও উঠে যেত।” কিশোর বাহিনীর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন জঙ্গিপুরের উপ পুরপ্রধান অশোক সাহা। তাঁর কথায়, “চাঁদা তোলার থেকে এই ভাবে ২ টাকা করে আদায় করে পুজো কর্তারা যদি তাদের পুজোর থিম মানুষের সামনে তুলে ধরে তাহলে সেটা তো ভালই।” জঙ্গিপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কাশীনাথ ভকত বলেন, “কর্পোরেট যুগে এই ধরণের ভাবনা অত্যন্ত সঠিক। আগামি দিনে হয়ত এটাই সর্বত্র চালু হয়ে যাবে।” |