|
|
|
|
‘পাশে আছি’ বার্তা নিয়ে দুর্গতদের দরবারে দিদি |
সুমন ঘোষ • গোপীবল্লভপুর |
‘সাথে ছিলাম, পাশেই আছি’ এই বার্তা নিয়ে দুর্গতদের কাছে ত্রাণ নিয়ে হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে মানুষজনও দাবি জানাতে কসুর করলেন না। কেউ চেঁচিয়ে উঠলে, ‘রাস্তা খারাপ। ঠিক করে দিতে হবে।’ কারও অনুযোগ, ‘ডোমপাড়ার একেবারে বেহাল। নদীর ওপারের চারটি গ্রামও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’ তবে এই সব দাবি-দাওয়ার মধ্যে তেমন ক্ষোভ মিশে ছিল না। এ যেন দিদির কাছে আবদার। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েও জনতা চেঁচিয়ে উঠল, ‘দিদি জিন্দাবাদ’।
রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন আঠাঙ্গি গ্রামের গৃহবধূ বাদল দোলুই। হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে তাঁকে সঙ্গে নিয়ে হেঁটেই ঢুকলেন গ্রামে। খুঁটিয়ে দেখলেন তাঁর বাড়ি। খবর নিলেন গ্রামের অবস্থার। জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারিকে নির্দেশ দিলেন, গ্রামের সমস্যা খতিয়ে দেখে রিপোর্ট তৈরি করতে। উন্নয়ন করতে। মুখ্যমন্ত্রীকে এ ভাবে হাতের কাছে পেয়ে রীতিমতো হতবাক বাদল বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এভাবে বাড়িতে এসে খোঁজ নেবেন কোনওদিন স্বপ্নেও ভাবিনি। এই না হলে দিদি।” |
|
গোপীবল্লভপুরের বাবুডুমরো হাইস্কুল মাঠে মুখ্যমন্ত্রী। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দু’বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও মমতার ‘দিদি’ ইমেজে যে এতটুকুও ভাটা পড়েনি, বুধবার ফের তার নমুনা দেখল গোপীবল্লভপুর। ঝাড়গ্রাম থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কনভয়ে বাবুডুমরো পৌঁছতে যেখানে বড় জোর দেড় ঘন্টা লাগার কথা, সেখানে সময় লাগল ২ ঘন্টারও বেশি। যাওয়ার পথে কাঁচাআমড়াশোল, শ্যামসুন্দরপুর, সুমিত্রাপুর, বীরসাচক, শাশড়া কোথায় দাঁড়ায়নি তাঁর কনভয়। মুখ্যমন্ত্রী কোথাও গাড়ি থেকে নেমে কথা বলেছেন, আবার কোথাও গাড়িতে বসেই শুনেছেন গ্রামের মানুষের অভাব-অভিযোগ-দাবিদাওয়ার কথা। কাঁচাআমড়াশোল গ্রামের সুধাংশু হাতির কথায়, “আমাদের বিপিএল তালিকায় নাম নেই। বাড়ি নেই। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ বাঁশের কাজ করি। সরকারি সাহায্য মেলে না। সব কথাই দিদিকে বলেছি। উনি শুনে, আমাদের জন্য সব করে দেবেন বলেছেন।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর কার্যত আচমকা। অন্য বারের মতো আগে থেকে প্রচার ছিল না। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রাম পৌঁছন। উদ্দেশ্য পুজোর মরসুমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের অবস্থা খতিয়ে দেখা, তাঁদের সাহায্য করা। একদিকে ‘পিলিন’-এর জেরে বৃষ্টি, সেই সঙ্গে বিভিন্ন জলাধার থেকে ছাড়া জল জোড়া ফলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। অনেকের বাড়ি ভেঙেছে, কোথাও ফসলের ক্ষতি হয়েছে, কয়েকজনের মৃত্যুও হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ত্রাণ শিবির খোলা হয়। |
|
গোপীবল্লভপুরে ত্রাণ বিলি করছেন মুখ্যমন্ত্রী। |
গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের বাবুডুমরো গ্রামের হাইস্কুলে এমনই একটি শিবিরে বুধবার হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে সাহায্য তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রথম ধাপে ৪ হাজার জনকে সাহায্য দেওয়া হবে। এ দিন ৪ হাজারটি ব্যাগ নিয়ে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। ব্যাগে থালা, বাটি, চাল, ডাল, স্টোভ, ত্রিপল-সহ প্রায় ২০ রকম সরঞ্জাম রয়েছে। পরে আরও ৬ হাজার জনকে এই সাহায্য দেওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, “তারপরেও কোনও ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকলে তাঁদেরও সাহায্য করা হবে। যতদিন না ক্ষতিগ্রস্তরা এই সাহায্য পাচ্ছেন ততদিন তাঁদের ত্রাণ শিবিরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে।” ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি যাতে ৫ হাজার নগদ টাকাও সাহায্য করা যায় সে আশ্বাসও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “আমি ফিরে ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে নগদ ৫ হাজার টাকা যাতে হাতে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে চেষ্টা করব।”
এখনও বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির সম্পূর্ণ হিসেব জেলা প্রশাসনের কাছে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেন, “তিন দিনের মধ্যে প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির হিসেব জানাতে হবে।” সাধারণ গরিব মানুষের বাড়ি ভাঙলে তাঁরা কোথায় জানাবেন, কিভাবে অর্থ সাহায্য পাবেন সে বিষয়েও অনেকে জানেন না। যাতে তাঁরা হয়রান বা বঞ্চিত না হন সে জন্য মুখ্যমন্ত্রী বিডিওদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বাড়ি ভাঙার তথ্য সংগ্রহেরও নির্দেশ দেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিডিওরা ডোর টু ডোর সার্ভে করবেন।” এখনও পুজোর ছুটি চলছে। তা সত্ত্বেও বিডিও-রা যাতে অফিস ছেড়ে না যান তার জন্যও বিডিওদের আবেদন জানান মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেই ছিলেন সাংসদ মুকুল রায় ও পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদাও। নয়াগ্রামের ক্ষয়ক্ষতি দেখতে মুকুল রায় ও জেলা সভাধিপতি উত্তরা সিংহকে নয়াগ্রামে পাঠান মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, ঝাড়খণ্ড সরকারের একরোখা মনোভাবের কারনেই এ রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জেলাশাসককে ত্রাণ শিবির করার নির্দেশ দেন। ঘটনাস্থলে মহকুমাশাসককে থাকতে বলেন। নির্দেশ দেন, যাতে সমস্ত গ্রামের মানুষকে তিনি ত্রাণ শিবিরে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। |
পুরনো খবর: উৎসব মিটতেই দুর্যোগে নাকাল দুই মেদিনীপুর |
|
|
|
|
|