একশ্রেণির ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুরসভার একাংশের যোগসাজসেই শিলিগুড়ি শহরে ফের প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগের ব্যাবহার শুরু হয়েছে বলে নানা মহলে অভিযোগ উঠেছে। পুরসভার কাউন্সিলরদের একাংশ ও অফিসার-কর্মীদের কয়েকজনের ভূমিকা নিয়েও শহরে ক্ষোভ দানা বাঁধছে। ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের বক্তব্য, প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুর বর্জন করার সুবাদে একটা সময়ে রাজ্যের মধ্যে শিলিগুড়ি পুরসভা পুরস্কৃত হয়েছিল। ইদানীং যে হারে শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের চল শুরু হয়েছে তাতে আগামী দিনে শিলিগুড়ি পুরসভাকে দূষণে মদতের ঘটনায় অভিযুক্ত করা হতে পারে। যদিও শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত বারেবারেই বলছেন, “পুরসভা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ পুরোপুরি বন্ধ করেছে। তবুও পুরসভাকে হেয় করতে চক্রান্ত শুরু হয়েছে। শীঘ্রই অভিযানে নেমে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারকারীদের জরিমানা করা হবে।” |
মেয়রের আশ্বাসে অনেকেই আশ্বস্ত। পক্ষান্তরে, পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, শুধু আশ্বাস না দিয়ে কেন লাগাতার অভিযান চালানো হচ্ছে না। এমনকী, পরিবেশ বিভাগের বর্তমান মেয়র পারিষদ কাজল (স্বপন) চন্দের ভূমিকা নিয়েও পরিবেশপ্রেমীদের অন্দরে ক্ষোভ বাড়ছে। যদিও স্বপনবাবু বলেন, “কিছু ব্যবসায়ী ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন। আমার ওয়ার্ডে এক মিষ্টির দোকানে কিছুদিন আগে একজনকে ধরেছি। তবে ২১ তারিখের পর থেকে লাগাতার অভিযান করা হবে।” প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ বন্ধ করার ক্ষেত্রে প্রচার হবে বলেও জানান তিনি।
ঘটনাচক্রে, কাজলবাবুর ওয়ার্ডের একাধিক বাজারে খোলাখুলি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। প্রশ্ন করলে কয়েকজন ব্যবসায়ী সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন, কাউন্সিলর যখন অভিযান চালাচ্ছেন না, তখন তাঁরা কেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যগা ব্যবহার করবেন না। শুধু তাই নয়, ঝঙ্কার মোড় লাগোয়া বাজারের একাধিক ফল ব্যবসায়ী ক্রেতাদের জবরদস্তি প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নিতে বাধ্য করছেন বলেও দেখা গিয়েছে। প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহারের কুফল নিয়ে পরিবেশপ্রেমীদের তরফে কেউ ব্যবসায়ীদের বোঝাতে গিয়ে হুমকির মুখেও পড়ছেন বলে অভিযোগ।নয়াবাজার, শিলিগুড়ি ১ নম্বর রেলগেট এলাকার বাজারেও চলছে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে কেনাবেচা। তবে নিজেদের এলাকায় কোন ব্যবসায়ী প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন না বলে দাবি করেন শিলিগুড়ি ১ নম্বর রেল গেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বাবলু পাল। তিনি বলেন, “আমাদের এলাকায় বলে দেওয়া হয়েছে কেউ কোন প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করতে পারবেন না, তবে কেউ যদি করে থাকে তা আমরা দেখব।” |
বাস্তবে উল্টো ছবি দেখছেন বাসিন্দারা। যেন প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করলে তা প্রতিরোধ করার কেউ নেই। ফুলেশ্বরী বাজার, সুভাষপল্লি বাজার, রথখোলা বাজার, রবীন্দ্রনগর মেন রোডের একাধিক দোকানের মালিক, ব্যবসায়ীরা পুরসভার অভিযানের কথা শুনে গুরুত্বই দিতে চাননি। কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, আগেও দু-চার দিন অভিযান হয়েছে। পরে সব ‘ঠাণ্ডা’ হয়ে গিয়েছে বলে ওই ব্যবসায়ীরা কটাক্ষও করেন। এমনকী, কয়েকজন দোকান মালিকের দাবি, একাধিক প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ নির্মাতা সংস্থার তরফে তাঁদের জানানো হয়েছে, নানা ‘বন্দোবস্ত’ করেই তাঁরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন থেকে বলে আসছি যে শহরে প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগে ভরে গিয়েছে। ফলে, বর্তমান বোর্ডের পরিচালনায় থাকা কংগ্রেসের কাউন্সিলরদের একাংশের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ তো হতেই পারে। দ্রুত প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার বন্ধ না হলে সেই সন্দেহ আরও দৃঢ় হবে।”
অবশ্য ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ কিন্তু প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছেন। অনেক জায়গায় ব্যবসায়ীদের দেখা যাচ্ছে, কাপড়ের ব্যাগে ক্রেতাকে জিনিস দিচ্ছেন। ক্রেতাদের একাংশ চাইলেও প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ দিচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা। বিদান মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “এটা শিলিগুড়ির সুনামের ব্যাপার। আমরা প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করে শহরের সুনামহানি করতে পারব না। আমরা চাই পুরসভা নিয়মিত অভিযান চালাক। যে কজন হাতেগোনা ব্যবসায়ী প্লাস্টিক ক্যারিব্যাগ ব্যবহার করছেন, পুরসভা তাঁদের জরিমানা করুক।”
|