হ্যাজাকের আলোয় বন্যা দেখে ত্রাণের
ঢালাও প্রতিশ্রুতি মমতার
শ্চিম মেদিনীপুরের জলবন্দি এলাকা ঘুরে এবং কোলাঘাটে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে যখন মুখ্যমন্ত্রী এলেন হাওড়া, তত ক্ষণে সন্ধ্যে নেমেছে। কথা ছিল আমতা ২ ব্লকের সেহাগড়িতে ফের একপ্রস্ত বৈঠক করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে জন্য নির্ধারিত ছিল একটি বেসরকারি ভবন। মুখ্যমন্ত্রীর কনভয় সেখানে পৌঁছলেও তিনি নামেননি গাড়ি থেকে। জানান, তক্ষুণি যেতে চান প্লাবিত এলাকায়। বৈঠক হবে পরে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই কনভয় ছোটে উদয়নারায়ণপুরের দিকে।
এই ব্লকেই ডিভিসির ছাড়া জলে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ডিহিভুরসুট থেকে কানুপাট-মনসুখা পর্যন্ত দামোদরের বাঁধের অন্তত ১০টি জায়গা থেকে জল এসে গ্রামগঞ্জে ঢুকে পড়ে। ১১টি পঞ্চায়েত আপাতত জলবন্দি। নদী তীরবর্তী গ্রাম পঞ্চায়েত যেমন রামপুর-ডিহিভুরসুট-আসন্ডা (আরডিএ), হরালি (উদয়নারায়ণপুর), কানুপাট-মনসুখা, সিংটি প্রভৃতি গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাগুলি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্যান্য এলাকাগুলিতেও রাস্তাঘাট ডুবে গিয়েছে। উদয়নারায়ণপুর বিডিও অফিসে জল জমে যায় এক কোমর সমান। ৩৩টি ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে।
পরিদর্শনে মুখ্যমন্ত্রী। উদয়নারায়ণপুরে সুব্রত জানার তোলা ছবি।
নদী তীরবর্তী এলাকাগুলি থেকে গ্রামবাসীদের ওই ত্রাণশিবিরে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। হাওড়ার জেলাশাসক শুভাঞ্জন দাস বলেন, “উদয়নারায়ণপুরে লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দুর্গতদের জন্য শিশুখাদ্য, পানীয় জল, শুকনো খাবার মজুত হয়েছে। ত্রাণ পৌঁছনোর জন্য নৌকোর ব্যবস্থা আছে।” এ দিকে, মুণ্ডেশ্বরী এবং রূপনারায়ণের জল বাড়তে থাকায় আমতা-২ ব্লকের ঘোড়াবেড়িয়া-চিৎনান এবং ভাটোরা পঞ্চায়েত এলাকাও জলমগ্ন। এই দু’টি পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে কয়েকটি নৌকার ব্যবস্থা করা ছাড়া কোনও ত্রাণশিবিরের ব্যবস্থা করা হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয় বাসিন্দাদের।
পনেরো কিলোমিটার পথ পেরিয়ে মুখ্যমন্ত্রী পৌঁছন উদয়নারায়ণপুরের ভবানীপুর গ্রামে। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় পৌনে ৮টা। আশপাশে কোথাও বিদ্যুৎ নেই। ঘুটঘুটে অন্ধকার। জমা জল ঠেলে গাড়ি আর এগোয়নি। গোড়ালি ডোবা জলেই নেমে পড়েন মমতা।
চোখে-মুখে তখন উষ্মা স্পষ্ট মুখ্যমন্ত্রীর। স্থানীয় বিধায়ক সমীর পাঁজা গোটা কয়েক হ্যাজাক জোগাড় করে রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে পরিস্থিতি দেখাবেন বলে। সেই আলোতেই আশপাশে দেখেন মমতা। চোখে পড়ে থইথই জল। বিরক্ত মুখ্যমন্ত্রী পরিস্থিতির জন্য দিনভরই দায়ী করেছেন ডিভিসিকে। এখানেও সে কথাই ফের ঝাঁঝিয়ে উঠে বলেন, “বৃষ্টির জন্য এই বন্যা হয়নি। এটা ডিভিসি আমাদের না জানিয়ে বেশি জল ছেড়ে দেওয়ার জন্য ঘটেছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি। ডিভিসি, ঝাড়খণ্ড সরকার এবং কেন্দ্রের কাছে ফের প্রতিবাদ করব।”
মমতার সঙ্গে ছিলেন কৃষি বিপণন মন্ত্রী অরূপ রায়, সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ স্থানীয় সাংসদ-বিধায়কেরা। সমীরবাবুর কাছ থেকে মমতা হুগলির খানাকুল, হাওড়ার আমতা-২ এবং উদয়নারায়ণপুরের ভৌগোলিক অবস্থান জানতে চান।
মিনিট পাঁচেক ভবানীপুরে কাটিয়ে আমতায় ফেরেন মমতা। সেখানে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে জানান, যে দুই ব্লকের যে সব এলাকা প্লাবিত হয়েছে, সে সব এলাকায় বন্যা দুর্গতদের জন্য ত্রাণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। যে সব মানুষ ত্রাণশিবিরে আছেন, তাদের পরিবার-প্রতি ১০ কেজি করে চাল, ১ কেজি চিঁড়ে এবং ৫ কিলো আলু দেওয়া হবে। যাদের বাড়ি ভেঙে গিয়েছে, তাদের এককালীন ১৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে। চাষি, মৎস্যচাষি এবং ফুলচাষিদের ক্ষতিপূরণের জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরকে বলা হবে। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে বাঁধ মেরামত করা হবে। হুগলি ও হাওড়ার চারটি ব্লক ক্ষতিগ্রস্ত। সে কারণে দু’টি জেলার প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয় ঘটিয়ে ত্রাণ ও পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশাসন সূত্রে খবর, এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাংসদ সুলতান আহমেদকে।

পুরনো খবর:





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.