একে দুর্যোগের একটানা বৃষ্টি। তার উপর ডিভিসি-র ছাড়া জলে উপচে পড়া নদ-নদী। দুইয়ে মিলে পাকা ধানে মই দিল হুগলিতে। গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়ে সব্জির দশাও তথৈবচ। নদী লাগোয়া এলাকার চাষির লক্ষ্মী লাভের আশায় আপাতত জল। পুকুর ভেসে যাওয়ায় মাছ চাষেও ক্ষতি হয়েছে অনেকের।
খানাকুলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত। সেখানে কৃষিজমিও জলের তলায়। রাজ্য প্রশাসন সূত্রের খবর, আরামবাগ, খানাকুল ১ এবং ২ ব্লকে ২০০০ হেক্টর আমন এবং সাড়ে ৫০০ হেক্টর আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বুধবার রাতে খানাকুলে গিয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যের কৃষি প্রতিমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তিনি বলেন, “ধানের পাশাপাশি জেলায় আনাজেরও ক্ষতি হয়েছে। রাজ্য পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে।”
উদ্যানপালন দফতর সূত্রের খবর, খানাকুলের পাশাপাশি আরামবাগ, তারকেশ্বর, হরিপাল, বলাগড়ের অনেক জায়গাতেই চাষিরা মুষড়ে পড়েছেন। অপেক্ষাকৃত নিচু জায়গায় ক্ষতির আশঙ্কা বেশি। তারকেশ্বরের কেশবচক গ্রামের কালীপদ দাসের বিঘে কয়েক ধানি জমি জলের তলায়। তাঁর স্ত্রী রাধারানিদেবী বলেন, “ধান পেকে গিয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে ধান তুলতেই পারলাম না। মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে গেল।” |
তিনি যোগ করেন, “অনেক টাকা ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।” পুড়শুড়ার জঙ্গলপাড়া গ্রামের বাসুদেব মাঝি বিঘে তিনেক জমিতে ধান চাষ করেছিলেন। ধান পেকে গিয়েছিল। কিন্তু আরও অনেকের মতোই তিনিও বৃষ্টিতে ফসল তুলতেই পারেননি।
তারকেশ্বর ব্লকে প্রচুর সব্জি চাষ হয়। পুজোর আগে আকাশের অবস্থা দেখে ক্ষতির আশঙ্কা করছিলেন চাষিরা। টানা বৃষ্টির পাশাপাশি ডিভিসি-র ছাড়া জলে দামোদর উপছে পড়ায় তাঁদের আশঙ্কা সত্যি হয়েছে। ফুলকপি, বাঁধাকপি থেকে শুরু করে পালং শাক, মুলো, লাউ, বরবটি, শশা, ঝিঙে, পটল, বেগুনের মতো সব্জির চাষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উদ্যানপালন দফতর এবং চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, তারকেশ্বর ব্লকের কেশবচক, তালপুর, চাঁপাডাঙা পঞ্চায়েতের বিভিন্ন গ্রামে খেতে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে গাছের গোড়া পচে যাচ্ছে। কৃষি বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, খেতে জল জমায় ছত্রাকজনিত গোড়াপচা রোগের সংক্রমণ হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে গাছ। চাষ নষ্ট হওয়ায় বাজারে প্রভাব পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই সব্জির দাম চড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন।
নালিকুলে কানা নদীর জল জমিতে দাঁড়িয়ে গিয়েছিল। হরিপাল পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মাধ্যক্ষ মিলন দে নিজে চাষি। নালিকুলের পূর্ব গোপীনাথপুরে বিঘে খানেক জমিতে ফুলকপি এবং ১০ কাঠা জমিতে বেগুন চাষ করেছিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “সবটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আমাদের গ্রামটা কৃষিনির্ভর। অনেক চাষিরই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।”
দুর্গাপুজোর সময় থেকে ফুলকপি, বাঁধাকপির চাহিদা বাড়ে। সে কথা মাথায় রেখে সাড়ে চার বিঘা জমিতে দু’ধরনের কপি চাষ করেছিলেন গুপ্তিপাড়া ঘোষপাড়ার সোনা ঘোষ। শস্যবিমা করানো নেই। মহাজনের থেকে ঋণ নিয়ে ফসল ফলান। টানা বৃষ্টিতে এখন তাঁর মাথায় হাত। গোড়া পচে প্রায় সব গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। লাভ দূর অস্ত, এখনই বেশ কয়েক হাজার টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানালেন সোনাবাবু। তাঁর মাথায় এখন একটাই চিন্তা, কী করে মহাজনের ধার শুধবেন। বলাগড়ের চরকৃষ্ণবাটি, গোঁসাইডাঙা, সূয্যিপুর, ফতেপুর, মিলনগড়, চর খয়রামারি-সহ বেশ কিছু জায়গায় সব্জি চাষে ক্ষতি হয়েছে। জাঙ্গিপাড়ার রশিদপুরের বিস্তীর্ণ এলাকার কৃষিজমি জলের তলায়। চাষের ক্ষতি হয়েছে সেখানেও। |