বাড়ি থেকে বেরনোর আগে মাকে বলে গিয়েছিলেন বন্ধুকে নিয়ে প্রতিমার বিসর্জন দেখতে যাচ্ছেন। কিন্তু আর ফিরলেন না। শুধু তিনিই নন, ফিরলেন না তাঁর বন্ধুও। দু’দিন নিখোঁজ থাকার পরে বুধবার সকালে বাদুড়িয়ার বাজিতপুর গ্রামে ইছামতী থেকে উদ্ধার হয়েছে দু’টি দেহ। পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার দুপুরে বন্ধু দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের (২৭) বাড়ি গিয়েছিলেন সৌম্যদীপ শুভ্র (২২)। সেখান থেকে দু’জনে ইছমতী নদীতে ভাসান দেখতে গিয়েছিলেন। এ দিন দেহদু’টি উদ্ধারের পরে সেগুলি ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দুই যুবকের এমন মৃত্যু দশমীতে দুর্গার বিসর্জনকে যেন আরও বেদনাময় করে তুলেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে।
সোমবার বেলা ১১টা নাগাদ বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে দিদি মণিদীপাকে তাড়াতাড়ি ভাত বেড়ে দিতে বলেন সৌম্যদীপ। বলেছিলেন, “তাড়াতাড়ি একমুঠো ভাত দে। বেরোবো। বিজয়া দেখেই ফিরে আসব।” একমাত্র ভাইকে হারিয়ে শোকে আর কথা বলতে পারলেন মণিদীপা।
একমাত্র ছেলের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে কী বলে সান্ত্বনা দেবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না দেবাশিসের মা সুষমাদেবীও। দুই পরিবারের এমন শোকে প্রতিবেশীরাও শোকস্তব্ধ।
স্থানীয় প্রদীপ দে, বাবুর আলি গাজি, অংশুমান দত্ত জানালেন, তারাগুনিয়ায় ইছামতীতে চরা পড়ে যাওয়ার জন্য ঘাটের কাছে নদীতে হাঁটু জল ছিল। সে জন্য অনেকেই নৌকা ছেড়ে জলে নেমে হুড়োহুড়ি শুরু করে। সন্ধ্যা নাগাদ জোয়ারে জল বাড়ার সময়ে চোরা স্রোতে দুর্ঘটনার আশঙ্কায় সকলকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। সকলকে হয় পাড়ে, নয় নৌকায় উঠে পড়তে বলা হয়। কিন্তু ওই দু’জন তখনও নদীতেই দাঁড়িয়েছিল। এর পরে আর ভিড়ের মধ্যে তাদের লক্ষ্য করা যায়নি।”
রাত দশটার পরেও ছেলে বাড়ি ফিরছে না দেখে সৌম্যদীপ ও দেবাশিসের বাড়ি থেকে খোঁজখবর শুরু হয়। রাতে তল্লাশি চালিয়ে কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। এর পর মঙ্গলবার সকাল থেকে নৌকা নিয়ে তল্লাশি চালালেও খোঁজ মেলেনি। পরে বাজিতপুর গ্রামের কাছে ইছামতীতে জেলেদের পাতা জালে দেবাশিসের দেহ মেলে। সেখান থেকে কিছুদূরে একটি ইটভাটার কাছে চরে আটকে ছিল সৌম্যদীপের দেহ। |