উপযুক্ত পরিকাঠামো এবং শিক্ষক-শিক্ষিকার অভাবে দক্ষিণ ২৪ পরগনার বেশ কিছু প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কচিকাঁচাদের পঠনপাঠনে তৈরি হয়েছে চরম সমস্যা। জেলা জুড়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল দশার জন্য ক্ষিপ্ত ছাত্রছাত্রীদের অভিভাবকরাও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাঁচটি মহকুমা আলিপুর, বারুইপুর, ডায়মন্ড হারবার, কাকদ্বীপ এবং ক্যানিংয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৩৭১০টি, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ১১০৪ জন। বহু জায়গাতেই প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত ৮০ থেকে ৯০ জন ছাত্রছাত্রীকে সামলাতে হচ্ছে একজন শিক্ষককে। বিদ্যালয় ভবনের বেহাল পরিকাঠামোর জন্যও দুর্ভোগে পড়ছেন বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। কোথাও রয়েছে জমি নিয়ে আইনি জটিলতা, আবার কোথাও রয়েছে সরকারি অর্থ সাহায্যের অভাব। শহরতলির বারুইপুর, আলিপুর মহকুমা এলাকার বিদ্যালয়ে তুলনায় রয়েছেন বেশি শিক্ষক-শিক্ষিকা। কিন্তু বাকি তিনটি মহকুমা যেমন ডায়মন্ড হারবার মহকুমার কাজিপুকুর প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাকদ্বীপ মহকুমার মৌসুনী কুসুমতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মত বেশ কিছু বিদ্যালয়ে একজন বা দু’জন শিক্ষক-শিক্ষিকা দিয়েই চলছে পঠনপাঠন।
বেহাল বিদ্যালয় ভবনেরও নমুনা দেখা গেল মন্দিরবাজার চক্রের মুলদিয়া হালদারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৫৫ সালে সরকারি অনুমোদনের পর টিনের চালের চার কামরা ঘরে ক্লাস চলত। দীর্ঘদিন বিদ্যালয় ভবন সংস্কার না হওয়ার ফলে বছর দশেক আগে ভেঙে পড়ে বিদ্যালয়ের চাল। ফের সরকারি অনুমোদনের টাকায় একটি ২০ ফুট বাই ৩০ ফুট এক ছাদের তলায় চলছে স্কুলটি। এই ভবনটির অবস্থাও ভাল নয়। বর্ষায় ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ে। অনেক সময় বারান্দাতেও বসতেও হয় কচিকাঁচাদের। বেশির ভাগ সময়ে পুুকুরের জলই ব্যবহার করতে হয় মিড-ডে মিলে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক গুরুনাথ বৈদ্য বলেন, “বিদ্যালয় ভবন এবং শিক্ষক নিয়োগের জন্য বহু বার স্কুল শিক্ষা দফতরে জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হচ্ছে না।’’
মথুরাপুর দক্ষিণ চক্রের ৬৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে তিনটি বিদ্যালয় চালাচ্ছেন একজন শিক্ষক, অন্যদিকে ৩৬টি বিদ্যালয়ে পঠন পাঠন চলছে দু’জন করে শিক্ষক। ওই চক্রের পরিদর্শক পলাশ রায় বলেন, “বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ বা পরিকাঠামোর উন্নয়নে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো ছাড়া কিছুই করার নেই।”
জেলা শিক্ষা দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, যে সমস্ত বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকার সমস্যা রয়েছে, সেখানে খুব শীঘ্রই নিয়োগ করা হবে। বিদ্যালয় ভবনের পরিকাঠামো এবং অন্যান্য সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফলে, আপাতত সেই আশ্বাসের সুতোতেই ঝুলছে কচিকাঁচাদের ভাগ্য। |