প্রকাশ্য রাস্তায় স্কুল ছাত্রীকে চুমু খাওয়ার জন্য শ্লীলতাহানির অভিযোগ হয়েছিল ১৭ বছর আগে। ফৌজদারি মামলায় বিচারাধীন থাকার সময়ে মালদহের চাঁচলের বাসিন্দা আজহার আলি নামে এক যুবক কলকাতা সশস্ত্র পুলিশে চাকরি পেয়েছেন। গত বছর মে-তে স্থানীয় আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয়। তাও তিনি চাকরিতে বহাল রয়েছেন।
সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে চাকরি প্রার্থীর পুলিশ ‘ভেরিফিকেশন’ রিপোর্ট আবশ্যিক। যে রিপোর্টে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে কোথাও কোনও অভিযোগ রয়েছে কি না, তার উল্লেখ থাকে। আজহারের ক্ষেত্রে সেই রিপোর্টে তাঁর বিরুদ্ধে ওই অভিযোগের উল্লেখ ছিল না বলে জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “১৯৯৫ সালে ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। চাকরির সময়ে পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে সে কথার উল্লেখ থাকা উচিত ছিল। কেন সেই উল্লেখ ছিল না, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” ২০০৬ সালে পুলিশে চাকরি পান আজহার। তবে মালদহ জেলা আদালতের সরকারি আইনজীবী তীর্থ বসু বলেন, “পুলিশ ভেরিফিকেশন রিপোর্টে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগের উল্লেখ থাকলেও যতক্ষণ না দোষী সাব্যস্ত হচ্ছেন, তিনি চাকরি পেতে পারেন। কিন্তু এক বার দোষী সাব্যস্ত হয়ে গেলে, তিনি আর চাকরি করতে পারেন না।” আজহারের নামে অভিযোগ হয় ১৯৯৫ সালে। স্থানীয় আদালতে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন ২০১২ সালের মে মাসে। কেন এত দেরি? তীর্থবাবু বলেন, “অনেক মামলারই এমন দেরি করে রায় হয়।” সেই রায়ে স্থানীয় আদালত ৬ মাসের কারাদণ্ড দেয় আজহারকে। তিনি তা চ্যালেঞ্জ করে জেলা দায়রা আদালতে যান। সেখানেও তাঁর সাজা বহাল রাখা হয়। আজহার সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যান, সেখানেও সাজা বহাল থাকায় তিনি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট একই রায় হয়েছে। আজহার বলেন, “দেশের শীর্ষ আদালতের রায় মানতে হবে। তবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্ট সময় দিয়েছে। এর মধ্যে আদালতে রিট পিটিশন করব।” কিন্তু গত বছর মে-তে তাঁর সাজা ঘোষণা হয়ে যাওয়ার পরেও কী করে তিনি এত দিন ধরে চাকরিকে বহাল থাকলেন? পুলিশ সুপার কল্যাণবাবু বলেন, “সম্প্রতি বিষয়টি নজরে এসেছে। রিপোর্ট তৈরি করে কর্তৃপক্ষকে পাঠাচ্ছি। তাঁরা তা কলকাতা পুলিশকে পাঠিয়ে দেবেন।”
আজহারের দাবি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই তাঁকে এই মামলায় ‘ফাঁসানো’ হয়েছে। তাঁর কথায়, “যে ছাত্রীর অভিযোগে ভিত্তিতে এই সাজা হয়েছে সে আমার আত্মীয়া। ওদের পরিবারের সঙ্গে আমাদের দীর্ঘদিন ধরে গোলমাল ছিল। সেই বদলা নিতে চুম্বনের ঘটনা সাজিয়ে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” |