কোথাও জল জমে গিয়েছে। আবার কোথাও জলের তোড়ে নষ্ট হয়েছে জমি। সোমবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে কোচবিহার জেলায় সব্জি চাষে ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকেরা। জেলার দিনহাটা থেকে মাথাভাঙ্গা, তুফানগঞ্জের বিভিন্ন এলাকাতে সব্জি চাষ করেই সংসার চালান বহু পরিবার। শীতের আগে অক্টোবর মাসেই সব্জি চাষের প্রধান সময়। এই সময়ে বৃষ্টিতে তাঁরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন, আরও বৃষ্টি হলে পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা। সব্জি চাষ ক্ষতির মুখে পড়লেও ধান চাষে কৃষকরা লাভের মুখ দেখবেন বলেই আশ্বস্ত করেছেন কৃষি আধিকারিকরা। |
কোচবিহার জেলার কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “এবারে জেলায় বৃষ্টি প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হয়েছে, ফলে ধান চাষের শুরুতে ও পাট চাষে কিছু সমস্যা হয়েছিল। এবারের বৃষ্টিতে ধান চাষে কোনও ক্ষতি হবে না, উল্টে লাভ হবে। কারণ, এই জল ধান চাষের ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। সব্জির ক্ষেত্রে বৃষ্টি কিছু সমস্যা তৈরি করেছে, কিন্তু খুব বেশি কিছু ক্ষতি হবে বলে আমরা মনে করছি না।” কোচবিহার জেলায় মূলত দিনহাটার পেটলা, সিতাই, মাতালহাট, পখিহাগা, ব্রহ্মত্তরচাতড়া, কোচবিহার সদরের দেওয়ানহাট, নাককাটি, কলাকাটা সহ একাধিক এলাকায় কয়েক হাজার হেক্টর জমিতে সব্জি চাষ হয়। কয়েক লক্ষ মানুষ পুরোপুরি ভাবে সব্জি চাষের উপর নির্ভরশীল। কৃষকদের অনেকেই জানান, অক্টোবরের শুরুতে সব্জি চাষ শুরু হয়। এই সময় খেত তৈরি করে বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, ঝিঙা, শশা, পালং শাক সহ বিভিন্ন সব্জি চাষ শুরু করেন কৃষকরা। তাঁরা জানান, জমি তৈরির কাজ শেষ করে ফসল রোপনের কাজ শুরু করেছেন তাঁরা, এই সময় বৃষ্টি হওয়ায় তৈরি জমি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পাশাপাশি যে সব জমি নিচু সেখানে জল জমেছে ফলে সব্জি চাষ প্রায় পনের দিন পিছিয়ে গেল। দেওয়ানহাটের কৃষক রমেশ বর্মন বলেন, “দুই বিঘা জমিতে সব্জি চাষ করছি, জমি তৈরি থেকে বীজ বপন মিলিয়ে সাত হাজার টাকা খরচ হয়েছে এই পরিস্থিতিতে বৃষ্টি হওয়ায় সমস্যায় পরে গিয়েছি।”
জেলার সমস্ত এলাকাতেই কমবেশি কৃষকরা ধান চাষ করেন। কৃষকরা জানান, ধান চাষের শুরুতে জল না থাকায় সমস্যায় পড়তে হয়েছিল তাঁদের। বর্তমানে ধান গাছে ফুল (শিষ) হওয়ার সময় হয়েছে আর কয়েক দিন পরে বৃষ্টি হলে শিষের ক্ষতি হত। কিন্তু এই সময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ধান চাষের সহায়ক হয়েছে। কৃষি দফতরের এক কর্তা বলেন, “বৃষ্টি কয়েকদিন ধরে চললে বড় ধরনের ক্ষতি হবে।”
দশমীর বাজার বৃষ্টিতে লাটে উঠেছে হলদিবাড়িতে, শশা এবং অন্যান্য সব্জি চাষে ক্ষতি হয়েছে। হলদিবাড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক সঞ্জীব মৈত্র বলেন, “বৃষ্টিতে চাষের ক্ষতি হবে, মাটিতে জল দাঁড়িয়ে থাকলে শশা গাছ মরে যাবে।” হলদিবাড়ি পাইকারি সব্জি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি তরুন দত্ত বলেন, “হলদিবাড়ি থেকে এখন শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়ির বাজারে নানা ধরনের শাক যায়। দুদিন বৃষ্টি থাকার কারণে হাট বসতে পারেনি, ক্ষতি হয়েছে কৃষক এবং ব্যাবসায়ীদের। দশমীর দিন বৃষ্টি থাকায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা। হলদিবাড়ি মিষ্টি ব্যবসায়ী সমিতির মুখপাত্র নিখিল ঘোষ বলেন, “প্রতি বছর দশমীর দিনটির দিকে আমরা তাকিয়ে থাকি ভাল বিক্রি হয়, এবারও লাড্ডু, জিলিপি, খুরমার ভাল বিক্রি আশা করেছিলাম। বৃষ্টিতে লোক না হওয়ায় কোন কিছুই বিক্রি না হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে।” |