মহাসমারোহে শুরু দেবী ভান্ডানির আরাধনা
ধুনিকতা কেড়ে নিতে পারেনি এই প্রাচীন গোষ্ঠী জীবনের পরম্পরা। তাই স্বমহিমায় তিস্তা পাড়ের মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত রাজবংশী সমাজের শস্য রক্ষার দেবী ভান্ডানি। একাদশী তিথি মঙ্গলবার থেকে ওই দেবী আরাধনাকে ঘিরে উত্তরবঙ্গে শুরু হল অন্য শারদ উত্‌সব। এ দিন উত্‌সবের সূচনায় বৃষ্টি ভেজা জনস্রোতে ভাসল ময়নাগুড়ির বার্নিশ গ্রাম পঞ্চায়েতের গাবুরের বাড়ি এলাকার প্রাচীন ভান্ডানি মণ্ডপ।
একাদশীতে পুজো দিতে ভিড়।
শিলিগুড়ি, কোচবিহার এবং উত্তর দিনাজপুর থেকেও প্রচুর মানুষ এখানে ভিড় করেন। থিক-থিকে জল-কাদায় দাঁড়িয়ে প্রত্যেকে পুজো দেন, প্রার্থনা করেন। জনস্রোতের কোথাও ব্যক্তিগত বাসনা পূরণের আকুতি ছুঁয়ে যায়নি কৃষিভিত্তিক জীবন থেকে তৈরি বিলুপ্ত প্রায় যৌথ পরিবারের ভাবনাকে। কিছু সময়ের জন্য তা আকড়ে ধরে আধুনিক আত্মকেন্দ্রিকতার বাঁধন ছেঁড়ার অদম্য ইচ্ছা হয়ে ওঠে। হয়তো তাই সপরিবার মেলায় হাজির পেশায় চাষি শিলিগুড়ি মহকুমার টামবাড়ি বাসিন্দা বিমল সরকার বলেন, “খেতের সবজির যেন ভাল ফলন হয়, আমরা প্রত্যেকে যেন মিলেমিশে শান্তিতে চলতে পারি তাই প্রার্থনা করেছি। এর বেশি দেবীর কাছে আর কী চাওয়ার আছে?”
কোথাও একাদশী থেকে তিন দিন, আবার কোথাও লক্ষ্মী পূর্ণিমার দিন। এ ভাবে দেবী ভান্ডানির কাছে শস্যরক্ষা ও সমাজের মঙ্গল কামনা করবেন রাজবংশী চাষি পরিবারের লোকজন। দেবী ভান্ডানি দ্বিভূজা ব্যাঘ্রবাহিনী। রক্তিম বর্ণ। তিনি পশ্চিম মুখে বসেন। সময়ের সঙ্গে নানা এলাকায় দেবীর গড়নে পরিবর্তন এসেছে। এই ভাবেই কোথাও বাহন কখনও বাঘ হয়েছে। কখনও সিংহ। কোথাও দেবী দ্বিভূজা, কোথাও চতুর্ভুজা ভাবনাও পাল্টেছে। শস্য রক্ষার দেবীকে দুর্গা অথবা বনদুর্গা রূপে কল্পনার চল হয়েছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা শিক্ষক গবেষক দীপক রায় বলেন, “ভান্ডানিকে দেবী দুর্গা কল্পনা করা হলেও তিনি আদতে শস্যের দেবী। শব্দটির উত্‌স ভাণ্ডার শব্দ থেকে। যেমন, শস্য ভাণ্ডার। তাই ওই দেবী যে শস্য ভাণ্ডার রক্ষার দেবী সেই বিষয়ে বিতর্ক থাকার কথা নয়।”
বার্নিশ গ্রামে ভান্ডানি পুজো।
ময়নাগুড়ি কালামাটির দীনেশ রায় বলেন, “রোজগার বেড়ে চলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জীবন পাল্টে যাচ্ছে। যৌথ পরিবার নেই বললে চলে। ছেলেরা বিয়ে করে বাবা মাকে ছেড়ে যাচ্ছে। বৃদ্ধ বাবা মাকে দিনমজুরি খেটে ভাত জোটাতে হচ্ছে। উবে যাচ্ছে শান্তি। ওই শান্তি ফিরে পাওয়ার আশা নিয়ে এ বার আমরা দেবীর চরণে ফুল দিয়েছি।” ময়নাগুড়ির গাবুরবাড়ি ছাড়া খাসিমচরা ও মাধবডাঙায় দশমীর রাতে পুজো প্রস্তুতি শেষ। রাজবংশী পুরোহিত বা দেউসি দুধ, দই, চিনি আর বাতাসা নৈবেদ্যে পুজো করেন। বেলা বাড়লে সব ক’টি মণ্ডপে ভিড় উপচে পড়ে।

ছবি: দীপঙ্কর ঘটক।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.