বৃদ্ধাবাসে নানা আপত্তিকর কাজকর্মের প্রতিবাদ করায় এক সত্তরোর্ধ্ব দম্পতিকে মানসিক এবং শারীরিক হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কাছে মাটিগাড়ার একটি বৃদ্ধাবাসে ঘটনাটি ঘটেছে। ওই ঘটনায় বৃদ্ধাবাসের পরিচালন সমিতির এক কর্তা ও কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে মহকুমাশাসকের কাছে অভিযোগও জমা পড়েছে। সম্প্রতি অভিযুক্তরা লোকজন নিয়ে বৃদ্ধাবাসে ওই দম্পতির ঘরে চড়াও হন বলে অভিযোগ। অভিযোগকারী দম্পতি সমরেশ নাগ এবং মমতাদেবীর অভিযোগ, তাঁদের কাছে থাকা একটি মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়ার জন্য লাঠিসোটা নিয়ে ঘরে ঢুকে মারধরের ভয় দেখানো হয়। স্ত্রীকে তাঁরা গালিগালাজ করছে দেখে সমরেশবাবু বাধা দিলে ধস্তাধস্তি হয়। নানা রোগে আক্রান্ত ওই দম্পতি তাতে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েন। কর্মকর্তারা তাদের বৃদ্ধাবাস থেকে চলে যেতে বলেন। এই পরিস্থিতিতে বৃদ্ধাবাসে ঠিক মতো ওষুধ দেওয়া হচ্ছিল না বলে অভিযোগ। এমনকী তাঁদের একঘরে করে রাখা হয়েছে খবর পেয়ে সোমবার দার্জিলিং জেলা লিগাল এড ফোরামের কর্মকর্তা এবং ওই দম্পতির পরিচিত এক বন্ধু বৃদ্ধাবাসে গিয়ে তাঁদের সেখান থেকে নিয়ে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান। মহকুমাশাসকের ফোন নম্বর জোগাড় করে সমরেশবাবু ফোনে তাঁকেও ঘটনা জানিয়েছেন। মঙ্গলবার লিগাল এড ফোরামের তরফে মহকুমাশাসককে অভিযোগ জানানো হয়।
এ দিন মহকুমাশাসকের তরফে একজন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। মহকুমাশাসক দীপা প্রিয়া পি বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বৃদ্ধাবাসের ম্যানেজার উমেশানন্দ মিশ্র বলেন, “ওই দম্পতিকে মারধরের অভিযোগ ঠিক নয়। আবাসিকদের কেউ অসুস্থ হলে আমরাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। কিন্তু সমরেশবাবুর পরিচিত কয়েকজন বৃদ্ধাবাস থেকে তাকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন।”
বৃদ্ধাবাসের কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর অভিযোগ তুলেছেন ওই দম্পতি। ২০০৯ সাল থেকে তারা ওই বৃদ্ধাবাসে রয়েছেন। সমরেশবাবুর দাবি, বৃদ্ধাবাসের আবাসিকদের কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন না। তবে কর্মকর্তাদের একজন তাঁকে ওই ফোন ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছেন। বৃদ্ধাবাসের কাজকর্ম নিয়ে কোথাও কিছু অন্যায়, আপত্তিকর ব্যাপার ঘটলে ওই কর্মকর্তাই তাঁকে ফোনে সে সব জানাতে বলেছেন। সম্প্রতি বৃদ্ধাবাসে নতুন এক মহিলা কর্মী যোগ দেন। তাঁর সঙ্গে কর্মকর্তা, কর্মীদের কয়েকজনের সম্পর্ক নিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাকে জানিয়েও ছিলেন। তা টের পেয়েই বৃদ্ধাবাসের পরিচালন কমিটির সদস্য অশোক গোয়েঙ্কা এবং তাঁর গোষ্ঠীর লোকজন সমরেশবাবুকে হেনস্থা করেন বলে অভিযোগ। অশোকবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “ওই অভিযোগ ঠিক নয়। ওই দম্পতি গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করছেন। তাঁকে কর্মকর্তাদের কেউ ফোন ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বলে জানা নেই।” অশোকবাবুর দাবি, যে দিন সমরেশবাবুর কাছ থেকে কর্মীরা ফোন নিতে গিয়েছিলেন সে সময় তিনি বৃদ্ধাবাসে ছিলেন না।
বৃদ্ধাবাস চালানোর ক্ষেত্রে প্রশাসনিক নিয়ম নীতি সঠিক ভাবে মেনে চলা হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। লিগাল এড ফোরামের অন্যতম কর্মকর্তা অমিত সরকার বলেন, “ওই বৃদ্ধাবাসে নানা ধরনের কাজকর্ম নিয়ে ওই দম্পতি অভিযোগ তুলেছেন। আগেও বেশ কিছু ঘটনা আমরা শুনেছি। তা নিয়ে মুখ খুলতেই কর্মকর্তাদের একাংশ দম্পতিকে বৃদ্ধাবাস থেকে বার করতে চাইছেন।” |