অতীতে সিঙ্গুরে যা হয়েছিল, এ বার অনেকটা সেই কায়দাতেই দলহীন মঞ্চ গড়ে আন্দোলনের তৎপরতা শুরু হল রাজ্যের বিরোধী শিবিরে।
বামফ্রন্টের শরিক দলগুলির বাইরে আরও বৃহত্তর বাম ঐক্য গড়ে তোলার জন্য বেশ কিছু দিন ধরেই সরব বাম নেতারা। সেই লক্ষ্যকেই আরও প্রসারিত করে লোকসভা ভোটের আগে আন্দোলনের বৃহত্তর মঞ্চ গড়ার চেষ্টা গতি পেয়েছে এ বার। পুজোর মধ্যেই রাজ্যের এক প্রভাবশালী সিপিএম নেতার উপস্থিতিতে এই মর্মে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। মঞ্চের উদ্যোক্তাদের বক্তব্য, শুধু বামপন্থীরাই নন। কংগ্রেস, এমনকী, তৃণমূলের অনুগামীরাও এই মঞ্চে সামিল হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে দলের কাজকর্মে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মঞ্চে সামিল করাও উদ্যোক্তাদের লক্ষ্য।
মঞ্চ গড়ার উদ্যোক্তা এক বাম নেতার কথায়, “সিঙ্গুরের আন্দোলন শুরু হয়েছিল কৃষিজমি, জীবন ও জীবিকা রক্ষা কমিটি দিয়ে। নানা দলের প্রতিনিধিরা সেই মঞ্চে ছিলেন। এখনও চেষ্টা হচ্ছে এমন মঞ্চ গড়ার, বাম-কংগ্রেস বা তৃণমূল অনুগামীরা দল নির্বিশেষেই যাতে সেখানে থাকতে পারেন।” কোন কোন বিষয় নিয়ে আন্দোলনে এগোনো যেতে পারে, তা চিহ্নিত করার কাজও শুরু হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে সিপিএম-সহ কয়েকটি বাম দল এবং পিডিএসের মতো কিছু ছোট দল এই উদ্যোগে সামিল। এর পরে আরও কিছু দলের সঙ্গে কথা বলার পরিকল্পনা রয়েছে উদ্যোক্তাদের।
সিপিএমের একাংশের মতে, নানা ঘটনায় রাজ্য সরকারের উপরে মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। শাসক দলের কাজকর্মে অসন্তুষ্ট মানুষ স্থানীয় ভাবে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রতিবাদ করছেন। কিন্তু তৃণমূলের বিকল্প হিসাবে বামফ্রন্টকে ফের বিশ্বাস করতে অধিকাংশ মানুষ এখনও তৈরি নন। আবার কংগ্রেসও সেই বিশ্বাসযোগ্য বিরোধীর জায়গায় পৌঁছতে পারেনি। ফলে, প্রতিবাদ আন্দোলন দানা বাঁধছে না। এমতাবস্থায় সরাসরি কোনও দলের পতাকার বদলে যৌথ মঞ্চ গড়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করলে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনে সুবিধা হতে পারে বলে বামেদের একাংশের ধারণা। সিপিএমের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “বাম জমানায় সিঙ্গুর বা নন্দীগ্রামে আন্দোলনের কমিটি হয়েছিল। সব সময় আন্দোলনের যৌক্তিকতা একই রকম ছিল, তা অবশ্য বলা যায় না। সরকার পরিবর্তনের পরে বীরভূমের লোবায় অনেকটা একই কায়দায় আন্দোলন হয়েছে। এ বার সেই কাজই আরও নির্দিষ্ট ভাবে ও পরিকল্পনামাফিক করার চেষ্টা হচ্ছে।” মঞ্চের শরিক বাড়াতে সমন্বয়ের দায়িত্বে রয়েছেন বামফ্রন্টের বাইরের একটি দলের নেতা।
দলের গণ্ডির বাইরে আন্দোলনের তৎপরতার পাশাপাশিই দলীয় স্তরে কর্মসূচিও লোকসভা ভোটের আগে জোরালো করতে চাইছে সিপিএম। এবং এ ব্যাপারে এগিয়ে গৌতম দেবের উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সিপিএম। জেলা নেতৃত্ব ঠিক করেছেন, কালীপুজোর আগেই ২৯ অক্টোবর থেকে উত্তর ২৪ পরগনা জুড়ে ৪০টি সমাবেশের প্রক্রিয়া শুরু করে দেওয়া হবে।
ধারাবাহিক সমাবেশের সূচনা হবে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রকে দিয়ে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ১ নভেম্বর যাবেন দেগঙ্গা এলাকায়। রাজ্য ও জেলার নেতাদের সঙ্গে সঙ্গেই সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট, তাঁর ঘরণী তথা পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারকেও আমন্ত্রণ করা হয়েছে ওই ৪০টি সমাবেশের মধ্যে কয়েকটির জন্য। থাকছেন কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্যও। |