পাঁচ বছর আগে এমনই হয়েছিল। “এই পুজোয় ২০০৮ সালের সেই স্মৃতি যেন আবার ফিরে এল!” প্রায় কোমর সমান জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে মঙ্গলবার এ কথা বলছিলেন দাঁতন ব্লকের তররুই পঞ্চায়েতের প্রধান পুতুল দাস। জানালেন, এই পঞ্চায়েত এলাকাতেই প্রায় ১২০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত।
‘পিলিন’ এ রাজ্যে ঢোকেনি। কিন্তু, তার পরোক্ষ ধাক্কাতেই কুপোকাত তররুই-সহ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বির্স্তীণ অঞ্চল। মাঝ অক্টোবরেও এই জেলায় বন্যার ভ্রূকুটি! গ্রামের পর গ্রাম জলের তলায়। পুজোর ক’দিন আবহাওয়া বিরূপই ছিল। রবিবার থেকে শুরু হয় দুর্যোগ। ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে বিভিন্ন জলাধারের ছাড়া জল। মঙ্গলবার সকাল থেকে কংসবাতী, সুবর্ণরেখা, শিলাবতীপরের পর নদী ছাপিয়ে হু হু করে জল ঢুকতে শুরু করে লাগোয়া গ্রামগুলিতে। গত দুই-তিন দিনে গাছ পড়ে, দেওয়াল চাপা পড়ে বা নদীতে ভেসে এই জেলায় পাঁচ জনের মৃত্যু হয়েছে। |
জলমগ্ন পানিটুনিয়া গ্রাম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সদ্যোজাতকে। —নিজস্ব চিত্র। |
ঘাটাল মহকুমার শতাধিক গ্রাম ছাড়াও খড়্গপুর মহকুমার দাঁতন ও কেশিয়াড়ি ব্লকের বেশ কিছু গ্রাম জলের তলায় চলে যায়। ঘাটালের দাসপুর ১ ব্লকের বালিপোতা গ্রামে কংসাবতী নদীর বাঁধ ভেঙে নাড়াজোল ও রাজনগর পঞ্চায়েতের প্রায় ২৫-৩০টি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়ে। প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ। বালিপোতার মাঝপাড়ার লক্ষ্মী দোলই, সামাটের পুতুল সামন্তরা বলেন, “প্রশাসনের কারও দেখা নেই। বাড়ি থেকে যা বের করতে পেরেছি, তা নিয়ে উঁচু রাস্তায় এসে উঠেছি।”
একই অবস্থা দাঁতন ব্লকের সুবর্ণরেখা নদী ঘেঁষা আলিকষা, তররুই, দাঁতন-২, আঙ্গুয়া ও চকইসমাইলপুর পঞ্চায়েত এলাকার। পুন্দড়া গ্রামের বাসিন্দা বসন্তকুমার প্রামাণিকের কথায়, “সোমবার সকালে হঠাৎ করে নদীর জল ঢুকতে শুরু করে। ঘর ভেঙে পড়ে। হাতের সামনে যে জিনিসপত্র পেয়েছি নিয়ে সরে এসেছি। বাকি চোখের সামনে ভেসেই গেল!” ক্লাবঘরে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছেন পুন্দড়ার কল্পনা জানা। বললেন, “পুজোর মধ্যে এই দুর্যোগে সংসারটা শেষ হয়ে গেল।” দাঁতন লাগোয়া ওড়িশা অবশ্য ‘পিলিনের’ দাপট পুরোমাত্রায় টের পেয়েছে। খড়্গপুর-ভুবনেশ্বর জাতীয় সড়কের দু’ধার নদীর চেহারা নিয়েছে! ভেসে যাচ্ছে খড়ের চালা, বিদ্যুতের খুঁটি। সংলগ্ন গ্রামগুলি থেকে বাসিন্দারা উঠে এসে আশ্রয় নিয়েছেন সড়কের উপরে। বৃষ্টির মধ্যেই খোলা আকাশের নীচে মানুষ আর গবাদি পশুর সহাবস্থান। বালেশ্বর, জলেশ্বর, দাঁতনের একাংশ জুড়ে প্লাবনের চিহ্ন।
কংসাবতীর জল উপচে বিপদের মুখে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁকুড়া পুরসভা এলাকার একটি অংশ। চলতি অগস্টেই ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে নদীবাঁধ ভেঙে পাঁশকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছিল। মেরামতির কাজ চলাকালীন মঙ্গলবার দুপুরে ফের ওই বাঁধ ভেঙে ৫টি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়ে। |