এক দিনের বৃষ্টিতেই ভেঙে পড়ল সেতু
হাষ্টমীর রাত থেকে টানা বর্ষণের জেরে বান্দু নদীর ভেলাইডি সেতু ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে আড়শার একাধিক গ্রাম। জেলা আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অষ্টমীর রাত থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় পুরুলিয়া জেলায় গড়ে বৃষ্টি হয়েছে ১৬৫ মিলিমিটার। ওই বৃষ্টিতে আড়শারই আরও দু’টি কজওয়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নবমীতে মণ্ডপে যাওয়ার পথে পুরুলিয়া মফস্সল থানার চাকলতোড়ে দেওয়াল চাপা পড়ে করম বাউরি (৮) নামে এক বালকের মৃত্যু হয়। সে মায়ের সঙ্গে যাচ্ছিল। মহিলাকেও স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়।
মাত্র বছর চারেক আগে তৈরি হওয়া ভেলাইডি সেতুটি কী ভাবে এক দিনের বৃষ্টিতেই ভেঙে গেল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে। আড়শার ব্লক সদর শিরকাবাদ থেকে হাড়মাডি, নুনিয়া, সোনাহারা, সাপারামবেড়া, মিশিরটাঁড়, সাহারজুড়ি, তানাসি-সহ বিভিন্ন গ্রামে যোগাযোগের সুবিধার জন্য দীর্ঘদিন ধরে এই নদীটির উপরে সেতু নির্মাণের দাবি ছিল। এই গ্রামগুলির অবস্থান অযোধ্যা পাহাড়ের নীচে। হাড়মাডির বাসিন্দা মদন মাহাতো, বীরধর মাহাতো, নুনিয়া গ্রামের শান্তিরাম মাহাতোদের কথায়, “নদীর ও-পারের গ্রামগুলির মানুষজনকে বর্ষাকালে খুবই দুর্ভোগ পোহাতে হত। খরস্রোতা পাহাড়ি নদীতে জল থাকলে এ-পারে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যেত। হাট-বাজার, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্লক ও পঞ্চায়েত অফিস সব এ পারে।” তাঁদের আক্ষেপ, “নবমীর দিন সারাদিন বৃষ্টি হল। বিকেলে সেতুটা পুরোপুরি ভেঙে গেল। সেতুটা হয়ে বছর তিন-চারেক যোগাযোগ ভাল হয়েছিল। ফের সেই আগের অবস্থা ফিরে এল।”
জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য অপর্ণা সেন বলেন, “এই সেতুটা হয়েছে বছর চারেক। কী ভাবে এত কম সময়ের মধ্যে ভেঙে গেল, তা নিয়ে তদন্ত হোক।” সেতু ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার খবর পেয়ে দশমীর দিন এলাকায় যান মহকুমাশাসক (পুরুলিয়া পশ্চিম) নিমাইচাঁদ হালদার। তিনি বলেন, “আমি বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দফতরকে জানিয়েছি। এই সেতু নির্মাণে ত্রুটি ছিল কি না, তা তদন্ত করে দেখার দাবি উঠেছে। সেই দাবিও খতিয়ে দেখা হবে। কেন না সেতুটি খুব বেশি দিন তৈরি হয়নি।”
আড়শার বিডিও মাধব বিসাই জানিয়েছেন, অযোধ্যা পাহাড়ে ওঠার পথে বান্দু নদীর একটি কজওয়ে এবং মানকিয়ারি গ্রামের কাছে আর একটি কজওয়ে জলের তোড়ে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আড়শা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি শেখ সালে মহম্মদ বলেন, “বিভিন্ন এলাকা থেকে কাঁচা বাড়িঘর ভেঙে পড়ার খবর পাচ্ছি। ঠিক কত ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তার রিপোর্ট মেলেনি।”
কংসাবতী নদীর দু’পাশে ছড়িয়ে থাকা পুরুলিয়া ১ ও আড়শা ব্লকের দামদা, লুসাবেড়া, সাতশিমুলিয়া এবং বীরচালি গ্রামে নবমীর রাতে জল ঢুকে পড়ে। লুসাবেড়ার একাধিক পরিবারকে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়। অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) সবুজবরণ সরকার জানিয়েছেন, অনেক গ্রামে জল ঢুকলেও বর্তমানে জল নেমেছে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। টানা বর্ষণে কংসাবতীতে জল বেড়ে তেলেডি পাম্পিং স্টেশনে বালি ঢুকে যাওয়ায় বিঘ্নিত হয়েছে পুরুলিয়া শহরের পানীয় জল সরবরাহ। পুরপ্রধান তারকেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, তেলেডি ও শিমুলিয়া পাম্পিং স্টেশন থেকে শহরে পানীয় জল সরবরাহ হয়। তেলেডিতে প্রবল জলের তোড়ে বালি ঢুকে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শিমুলিয়া পাম্পিং স্টেশনও। দ্রুত বালি সরিয়ে পানীয় জলের সরবরাহ আগের মতো স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালাচ্ছে পুরসভা।
অন্য দিকে এই বৃষ্টিতে বেশ কয়েক হাজার হেক্টরের ধান নষ্ট হতে পারে বলে কৃষি দফতর আশঙ্কা করছে। জেলা উপ কৃষি-অধিকর্তা দিব্যেন্দু দাস জানান, বিভিন্ন ব্লকে ফসলের ক্ষতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেওয়া শুরু হয়েছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.