|
|
|
|
|
পুজোয় কাজ পেলেন
সিভিক পুলিশের কর্মীরা
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
|
দুর্যোগের জেরে পুজোর সময় সকলের যখন মন খারাপ, ঠিক তখনই মুখে হাসি ফুটল সিভিক পুলিশের সফল পরীক্ষার্থীদের। সপ্তমী থেকে এঁদের সকলকে রোটেশন পদ্ধতিতে কাজ দেওয়া শুরু হয়েছে। মূলত, রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজই করছে সিভিক পুলিশ। প্রায় ছ’মাস আগে পরীক্ষার পর ফল প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে কাজ মিলছিল না। পরিস্থিতি দেখে আন্দোলনে নামেন সফল পরীক্ষার্থীরা। গত মাসেই গড়ে ওঠে ‘সিভিক পুলিশ সংগ্রাম কমিটি’। কাজ দেওয়ার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হওয়ার কথাও ভাবছিল এই কমিটি। এ নিয়ে আলোচনাও হয়। তবে, তার আগেই কাজ দেওয়া শুরু হল সিভিক পুলিশের সফল পরীক্ষার্থীদের। আন্দোলনের চাপে পড়েই কী এই সিদ্ধান্ত? প্রশ্নের সদুত্তর এড়িয়ে মেদিনীপুরের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান মৃগেন মাইতি বলেন, “সফল পরীক্ষার্থীরা কাজ পেতে শুরু করেছেন। এটা সকলের কাছেই সুখবর।”
আপাতত, ঠিক কত দি ন কাজ পাবেন সফল পরীক্ষার্থীরা?
জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, এ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোনও দিন নেই। যখন পুলিশের সংখ্যা কম থাকবে তখনই সিভিক পুলিশদের কাজ দেওয়া হবে। গত বছর রাজ্য জুড়েই সিভিক পুলিশ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয় রাজ্য সরকার। সব মিলিয়ে ১ লক্ষ ৩০ হাজার যুবক-যুবতীকে এই কাজে নিয়োগ করার কথা। এর মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলার ৬ হাজার ২০০ জন। জেলা পুলিশের ওই সূত্র জানিয়েছে, গোড়ায় সিভিক পুলিশে নিয়োগের জন্য বেকার যুবক-যুবতীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছিল। পশ্চিম মেদিনীপুর পুলিশ জেলার আবেদন জমা পড়ে ২৩ হাজার ১৪৩টি। এর মধ্যে ১৭ হাজার ৯৬৫ জনকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়। বাকি ৫ হাজার ১৭৮টি আবেদন বিভিন্ন কারণে বাতিল হয়। জেলা পুলিশ সূত্রে খবর, সিভিক পুলিশের চাকরিটা কোনও সরকারি চাকরি নয়। তাই নিয়োগের পর কোনও যুবক-যুবতী বছরে একদিনও কাজ না পেতে পারেন। বিশেষ কিছু সময়ই হয়তো বেশ কয়েকজনকে কাজ দেওয়া হবে। যেমন, কোনও নির্বাচন বা পুজোর সময়ে পুলিশের সংখ্যা কম থাকায় কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এই সব সময়ে যদি এক হাজার অতিরিক্ত পুলিশের প্রয়োজন হয়, তখন সিভিক পুলিশ থেকে এক হাজার জনকে কাজ দেওয়া হবে। পাশাপাশি, কোথাও প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে সেখানেও সিভিক পুলিশ পাঠানো হতে পারে। কাজ করলে দিনপিছু মিলবে ১৪১ টাকা। নিয়োগের জন্য আবেদন করার ক্ষেত্রে কিছু শর্তও ছিল। যেমন, প্রার্থীকে নূন্যতম মাধ্যমিক পাশ হতে হবে। বয়স হতে হবে ২০ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। ঠিক ছিল, নিয়োগের পর ১০ দিনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারা চাকরি পাচ্ছেন, তার একটা ‘ডেটা ব্যাঙ্ক’ও তৈরি থাকবে পুলিশের কাছে। ভবিষ্যতে এই সব যুবক-যুবতীরা পুলিশের অন্য পরীক্ষায় আবেদন করলে কিছুটা সুবিধে পেতে পারেন।
পরীক্ষার পর চলতি বছরের এপ্রিলে ইন্টারভিউ হয়। মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ইন্টারভিউ চলে। পরবর্তী সময়ে সফল পরীক্ষার্থীদের তালিকাও প্রকাশিত হয়। কিন্তু, কাজ মিলছিল না। এ নিয়ে ক্ষোভও দানা বাঁধতে শুরু করে। শেষমেশ, পুজোর সময়ে থেকেই সফল পরীক্ষার্থীদের কাজ দেওয়া শুরু হল। জেলা পুলিশের এক সূত্রে খবর, আপাতত সিভিক পুলিশের কর্মীদের একটি পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে। যেখানে কর্মীর নাম, থানার নাম লেখা রয়েছে। কাজ শেষে ওই পরিচয়পত্র থানায় জমা দিতে বলা হয়েছে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী এই তিন দিন শহর এবং শহরতলির বিভিন্ন পুজো মণ্ডপে এঁদের মোতায়েন করা হয়েছিল। সিভিক পুলিশের কর্মীরা মূলত রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণের কাজই করেন। কোন দিক দিয়ে মণ্ডপে প্রবেশ করতে হবে, কোন দিক দিয়ে বেরোতে হবে, দর্শনার্থীদের তা দেখিয়ে দেন। দশমীর দিন বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে মোড়ে এঁদের মোতায়েন করা হয়।
তবে, সফল পরীক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তা এখনও কাটেনি। কেন? খড়্গপুর টাউন থানা এলাকায় কর্মরত এক সিভিক পুলিশের কর্মীর কথায়, “কত দিন কাজ পাব, জানি না! শুনেছি, আপাতত এক মাস না কি কাজ দেওয়া হবে। তারপর?” শালবনি থানা এলাকায় কর্মরত এক কর্মীর কথায়, “সপ্তমী থেকে দশমী, এই চার দিন কাজ করেছি। তারপর তো আর থানা থেকে কিছু বলাই হচ্ছে না!” মেদিনীপুর কোতয়ালি থানা এলাকায় কর্মরত এক সিভিক পুলিশের কর্মীর কথায়, “শুনেছি, আপাতত এক মাস না কি কাজ দেওয়া হবে। তারপর বসিয়ে দেওয়া হলে আমরা খাব কী? আমরা তো ফের বেকার হয়ে যাব।” কী বলছে ‘সিভিক পুলিশ সংগ্রাম কমিটি’? কমিটির সম্পাদক হিঙ্কু দাস বলেন, “পুজোর সময়ে থেকে কাজ দেওয়া শুরু হয়েছে। আমরা সকলে কাজের মধ্যে থাকতে চাই। আচমকা
বসিয়ে দেওয়া হলে সকলেই খুব সমস্যায় পড়ব।” |
|
|
|
|
|