দীর্ঘ সিরিজের প্রেক্ষিতে ব্যাপারটা যথেষ্ট ‘বালখিল্য’ মনে হতে পারে।
ওয়ান ডে সিরিজ সবে শুরু, মাত্র দু’দিন বয়স। মোটে একটা ম্যাচ হয়েছে, বাকি আরও ছ’টা। যুক্তির বিচারে ‘শর্ট বল’ নামক বহু পুরনো এক রোগকে এখনই টেনে হাজির করা বোধহয় অবান্তর। করলে, সেটা অপ্রাসঙ্গিকও বলা চলে স্বচ্ছন্দে। কিন্তু ওই একই ‘রোগ’ যদি টিমের বাস্তব আর যুক্তির মধ্যে বিস্তর ফাঁকফোঁকরের সৃষ্টি করে দেয়, তা হলে?
মরু-শহরে মহেন্দ্র সিংহ ধোনিদের কিন্তু ঠিক সেটাই হয়েছে!
মিডিয়া প্রসঙ্গটা তুলতে প্রায় খিঁচিয়ে উঠলেন বিরাট কোহলি। শাসানির সুরে বলে ফেললেন, “আশ্চর্য। অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ম্যাচ পড়লেই আপনারা কেন শর্ট বল, শর্ট বল করে লাফিয়ে পড়েন জানি না। স্ট্যাটস খুলে দেখুন না। সাম্প্রতিকে ক’জন আমাদের শর্ট বলে আউট হয়েছে?” |
পাঁচ মিনিটও পেরোল না। আরসিএ অ্যাকাডেমির নেটে দেখা গেল ব্যস্ত যুবরাজ সিংহকে। এক মনে ট্রেভর পেনি বল ছুড়ে যাচ্ছেন যুবরাজকে টার্গেট করে এবং প্রায় প্রত্যেকটা শর্ট!
কোন দৃশ্যটা তা হলে সত্যি? বিরাট যেটা বললেন, সেটা? নাকি যুবরাজেরটা?
এবং দ্বিতীয়টাকে উত্তর হিসেবে ব্যবহার করাটা বোধহয় ভুল হবে না। ভারতের ভবিষ্যৎ অধিনায়ক যা-ই বলুন না কেন, ক্রিকেট-বিশেষজ্ঞদের কথাবার্তা থেকে শুরু করে স্ট্যাটসবুক সবই তো পুরনো রোগের ইঙ্গিতবাহী! বেশি দূর পিছোতে হবে না। সদ্য সমাপ্ত পুণে ম্যাচকেই ধরা যাক। রায়না শর্ট বল সামলাতে না পেরে ক্যাচ তুলেছেন। স্বয়ং বিরাটকেই ওয়াটসন ঘায়েল করেছেন ওই এক ওষুধে! সঙ্গে জুড়েছে ভয়াবহ পেস। পুণের স্লো উইকেটেই এক-একটা ডেলিভারি ঘণ্টায় দেড়শো কিলোমিটার গতিতে তুলে ছেড়েছেন মিচেল জনসন। ভারতকে হারতেও হয়েছে বড় বিশ্রী ভাবে। এবং বুধবারের জয়পুর ম্যাচের আগে অস্ট্রেলীয় শিবির থেকে যা পূর্বাভাস, তাতে রোহিত-রায়নাদের জন্য শর্টের সঙ্গে আগুনে পেসও বরাদ্দ থাকছে।
আদতে যা স্বাভাবিক।
পুণে-র মন্থর পিচ থেকে ও রকম পেস বার করে আনতে পারলে, সওয়াই মান সিংহ স্টেডিয়ামের বাইশ গজ পেসারদের ভূস্বর্গ হওয়া উচিত। আইপিএল বা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টি টোয়েন্টির সময় যা দেখা গিয়েছে, এখনও তাই। অর্থাৎ পিচ ঢাকা ঘাসের চাদরে। জয়পুরের বাঙালি পিচ কিউরেটর মনে করিয়ে দিলেন যে, উইকেটে পেস-বাউন্স দু’টোই থাকবে আর তিনশো প্লাসও এখানে হবে না। ২৭০-ই নাকি যথেষ্ট। এবং টস জিতলে অবশ্যই আগে ফিল্ডিং। নইলে শিশিরের দাপটে পরে কপালে ভোগান্তি থাকতে পারে। |
ধোনিরা সেটা বুঝতেও পারছেন। বুঝতে পারছেন, পুণেতে পরাভূত হওয়ার পর যদি রাজস্থানে ‘রক্তপাত’ আটকাতে হয়, তা হলে তিনটে জিনিস করা দরকার। টিমের ‘থিঙ্কট্যাঙ্ক’ থেকেও তার একটা আভাস দিয়ে দেওয়া হল। এক) জয়পুরে আন্দাজে ব্যাট চালানো চলবে না। যা খেলতে হবে, ক্রিকেটীয় শট খেলতে হবে। দুই) অজি পেসারদের ‘বাড়তি পেস’ সামলানোর জন্য আগাম প্রস্তুত থাকতে হবে। তিন) ডেথ ওভারে বোলিং। মহাষষ্ঠীর টি টোয়েন্টি কিংবা মহানবমীর পুণে ওয়ান ডে দু’টো ফর্ম্যাটেই যা ডুবিয়েছে ধোনিদের। আরও ভাল করে বললে, ইশান্ত শর্মা। যাঁর বোলিং দেখার পর টিমের সঙ্গে জড়িত কারও কারও মনে হচ্ছে বুধবারের ম্যাচে বাংলার মহম্মদ সামির প্রথম এগারোয় ঢুকে পড়া উচিত। স্পিনেও সেই চেনা বিষ নেই এখনও।
যা পরিস্থিতি, তাতে জয়পুরে যদি শর্ট বলের পাল্টা দাওয়াই বার করে ফিরতে পারেন ধোনিরা, তা হলে বাকি সিরিজেও বাড়তি অক্সিজেন পেয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু আবার হেরে ০-২ মানে নিজেদের অনন্ত চাপের মহাসমুদ্রে ঠেলে দেওয়া। মরু-শহরে আজ শেষ পর্যন্ত কী হবে না হবে সময় বলবে। শুধু একটা জিনিস বোধহয় লিখে ফেলা যায়।
বছরের গোড়ায় নির্বিবাদে চূড়ান্ত থেতলানি হজম করা ব্যাগি গ্রিন এরা নয়। এটা সত্যিকারের এক বনাম দুই-ই হচ্ছে। |