এশিয়ান স্কুল চাম্পিয়ানশিপে সোনা, রুপো, ব্রোঞ্জ একাধিক পদক জেতার পর এবার দেশের হয়ে স্কুল অলিম্পিকে খেলতে যাচ্ছে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া কালিয়াগঞ্জের বাসিন্দা ক্রীড়াবিদ স্বপ্না বর্মন। আগামী বছর নভেম্বর মাসে ব্রাজিলে হবে স্কুল অলিম্পিকের প্রতিযোগিতা। রিকশা চালকের মেয়ে স্বপ্না সেখানে সুযোগ পাওয়ায় খুশি এলাকার বাসিন্দারাও। গত ১৭-২২ সেপ্টেম্বর মালেশিয়ায় হয়ে যাওয়া এশিয়ান চাম্পিয়ানশিপে সাফল্যের জন্য মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জের বাড়িতে গিয়ে স্বপ্নাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন সদর পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রাখি বর্মন। স্কুল অলিম্পিকে লং জাম্প এবং হাই জাম্পে স্বপ্না অংশ নেবে।
কালিয়াগঞ্জ স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না চলতি বছরে এশিয়ান স্কুল চাম্পিয়ানশিপে হাই জাম্পে সোনা জিতেছে। জ্যাভলিন থ্রোতে রুপো এবং হামার থ্রোতে ব্রোঞ্জ জিতেও নজর কাড়ে। ওই সাফল্যের সুবাদেই আগামী বছর স্কুল অলিম্পিকে অ্যাথলেটিক বিভাগে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ এসেছে স্বপ্নার সামনে। ওর কথায়, “কোচ থেকে শুরু করে সহ-খেলোয়াড়, শিক্ষক, বাড়ির সকলের সাহায্য ছাড়া এই সাফল্য পেতাম না। আশাকরি স্কুল অলিম্পিকেও জয় পাব।”
পরিবার সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাবা পঞ্চাননবাবু পেশায় রিকশা চালক। স্বপ্না তাঁর ছোট মেয়ে। গ্রামের স্কুলে পড়ার সময় থেকেই স্বপ্না বিভিন্ন খেলায় পুরস্কার পেতে শুরু করে। শহরের রায়কত পাড়া স্পোর্টিং আসোসিয়েশনের হয়েও বিভিন্ন চাম্পিয়ানশিপেও অংশ নিয়ে থাকে। হাই জাম্প এবং লং জাম্পেই বেশি পুরস্কার জিতেছে। চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে রিকশা চালক পঞ্চাননবাবুর সংসারে অভাব রয়েছে। বাড়িতে থেকে খেলাধূলার চর্চা চালাতে পারবে না দেখে স্কুল এবং জলপাইগুড়ির একটি ক্লাব উদ্যোগী হয়ে বছর দু’য়েক আগে স্বপ্নাকে পাকাপাকি ভাবে সল্টলেকে সাই ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়। যদিও কালিয়াগঞ্জের স্কুলে একাদশ শ্রেণিতে এখনও পড়াশোনা চালাচ্ছে স্বপ্না। তবে খেলার জন্য পড়াশোনার দিকটি কিছুটা অবহেলিত হয়ে থাকে। তবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় সে।
বয়সের কারণে পঞ্চাননবাবুর এখন কার্যত রিকশা চালাতে পারেন না। দরমার বেড়ার ঘরের সামনে নিকোনো উঠোনে দাঁড়িয়ে স্বপ্না বলেন, “শত অভাব সত্ত্বেও বাড়ি থেকে সব সময়ে আমাকে সাহায্য করেছে। আমিও কিছু করে পরিবারকে সাহায্য করতে চাই।” স্বপ্নার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তথা আরএসএ ক্লাবের কর্মকর্তা সমীর দাস বলেন, “বাড়িতে অভাব. খেলার সরঞ্জাম কেনার টাকা নেই। একসময়ে এমনও গিয়েছে একটি জুতো কেনারও টাকা পায়নি ও। সেখান থেকে যে লড়াই চালাচ্ছে তা কমই দেখা যায়। সরকারি সাহায্য পেলে স্বপ্না আরও ভাল ফল করবে।” |