|
|
|
|
শিক্ষকের ঘাটতি নেই, তবু বহু স্কুলেই একজন ভরসা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
স্কুলে খাতায় কলমে ছাত্র সংখ্যা ১২ জন। গড়ে হাজির থাকে ৫ জন। শিক্ষকের সংখ্যা দুই! আবার এমন স্কুলও রয়েছে যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা ১ জন। ছাত্রও একজন!
চমকপ্রদ হলেও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শহরাঞ্চলের স্কুলগুলির এখন এমনই দশা। অথচ জেলাতেই এমন বহু স্কুল রয়েছে, যেখানে একশো জন ছাত্রের জন্য শিক্ষক সংখ্যা মাত্র এক। এমন নয়, যে জেলায় ছাত্র শিক্ষকের আনুপাতিক হার কম। তবু বহু স্কুলে একজন শিক্ষক থাকার পিছনে রয়েছে শহরাঞ্চলের স্কুলগুলি। যেখানে ছাত্র নেই কিন্তু পর্যাপ্ত শিক্ষক রয়েছেন।
প্রশ্ন উঠছে, কেন এই সব স্কুলগুলি বন্ধ করে দিয়ে পাশের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে না?
প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের ব্যাখ্যা, ওইসব স্কুল বন্ধ করে দিলে জেলায় সরকার অনুমোদিত শিক্ষকের সংখ্যা কমে যাবে। সেক্ষেত্রে জেলার বেকার যুবক-যুবতীরা কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত হবেন। সেই কারণেই স্কুলগুলি চলছে! তবে স্কুলগুলির পরিকাঠামোর অবস্থাও তথৈবচ। কোনও স্কুলে শৌচাগার নেই তো কোথাও নেই রান্নাঘর। শিক্ষার অধিকার আইন লঙ্ঘন করে বেশিরভাগ স্কুলই চলে ভাড়া বাড়িতে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতি স্বপন মুর্মুু বলেন, “কোন স্কুলে ২০ জনের কম ছাত্র রয়েছে তা জানতে সমীক্ষা শুরু হয়েছে। তারপর সেগুলি যাতে পাশের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে।”
অলিগঞ্জ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কথাই ধরা যাক। একটি মাত্র ছোট্ট ঘর। যেখানে খাতায় কলমে ছাত্র সংখ্যা ৩৭ জন। কিন্তু গড়ে ১৫ জনের বেশি ছাত্রের দেখা মেলেনি। শিক্ষক রয়েছেন ৪ জন। আর এলেও বা উপায় কী। বসার তো জায়গা নেই। পাটনাবাজারের রামচন্দ্র বিদ্যানিকেতনে সকাল ও দুপুরে রয়েছে দু’টি বিভাগ। সকালে ৩৭ জন ছাত্র ও ২ জন শিক্ষক রয়েছেন। আর দুপুরে ৫ জন ছাত্র নিয়ে ২ জন শিক্ষক স্কুল চালাচ্ছেন। মেদিনীপুর, খড়্গপুর শহর জুড়ে এমন বহু স্কুল রয়েছে। সম্প্রতি জেলখানার পুকুরে চলা কস্তুরবা প্রাথমিক বিদ্যালয়কে পাশের স্কুলের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সেটিও হয়েছে ওই স্কুলের শিক্ষকের ইচ্ছেতে। অনেক স্কুলেই শিক্ষকেরা ছাত্র না পেয়েও স্কুল চালিয়ে যাওয়ায় সরকারি অর্থ অপচয় হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ হচ্ছে না। কিন্তু ছাত্র না মেলার কারণ কী? এ ব্যাপারে রামচন্দ্র বিদ্যানিকেতনের দুপুর বিভাগের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক অর্ঘ্য চক্রবর্তী বলেন, “লটারির মাধ্যমে বর্তমানে পঞ্চম শ্রেণিত ভর্তির একটা সমস্যা রয়েছে। তাই নাম করা স্কুলগুলির প্রাথমিক বিভাগেই ভিড় বাড়ছে। এছাড়াও অনেকেই এখন বেসরকারি স্কুলে ছেলেমেয়েদের ভর্তি করতে আগ্রহী। তাই চেষ্টা করেও স্কুলে ছাত্র জোগাড় করা যাচ্ছে না।”
এ দিকে, জেলার প্রায় ১৫০টি স্কুলে এখনও একজন শিক্ষক রয়েছেন। যেখানে ২-৩ জন শিক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। ওইসব স্কুলে শিক্ষক না পাঠানো সম্পর্কে সংসদের বক্তব্য, প্রাথমিক শিক্ষার সার্বিক পরিকাঠামোই ধুঁকছে। তার সঙ্গে রয়েছে রাজনীতি। বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শিক্ষকেরা। কাউকে একটু দূরে বদলি করলেই আন্দোলন শুরু হয়। এই ঝক্কি এড়াতে কেউ কোনও ঝুঁকি নিতে চায় না। তাই এক শিক্ষকের স্কুলে দ্বিতীয় শিক্ষক পাঠানো যায় না। আর কর্মী সঙ্কটের কারণেও সমস্যা তৈরি হয়। জেলায় ৬৯টি চক্রের প্রতিটিতে ১ জন করে স্কুল পরিদর্শক থাকার কথা। কিন্তু রয়েছেন মাত্র ৩৮ জন। বাকি পদগুলি ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সংসদ অফিসে সরকার অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০৮। সেখানে রয়েছেন মাত্র ৭০ জন! সংসদের কর্মীদের কথায়, “এ বিষয়ে পরিকল্পনা করা, পদক্ষেপ করার জন্য তো লোকের প্রয়োজন। একজন ব্যক্তিকে একাধিক চক্রের দায়িত্ব সামলাতে হলে তিনি সাধারণ কাজ করতেই তো হিমসিম খাবেন। বাকি কাজ করবেন কী ভাবে।” কিন্তু তাই বলে কী শিক্ষক থাকা সত্ত্বেও ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হবেন। জেলায় প্রায় সাড়ে ৪ লক্ষ ছাত্রছাত্রী। যেখানে শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার। সংসদ সভাপতি অবশ্য জানিয়েছেন, “এক শিক্ষকের স্কুলেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক দেওয়া হবে।” |
|
|
|
|
|