টানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ায় গাছ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে মৃত্যু হল ১৫০টি পাখির। মঙ্গলবার সকালে রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষীনিবাসে ঘটনাটি ঘটেছে। এদিন পক্ষীনিবাসে বিভিন্ন এলাকায় পাখিদের মৃতদেহ যত্রতত্র ছড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। খবর পেয়ে বন দফতরের কর্মীরা পাখিগুলির মৃতদেহ উদ্ধার করে মাটিতে পুঁতে দেন। জখম অবস্থায় ১৪টি পরিযায়ী পাখিকে উদ্ধার করেছে বন দফতর। তাঁদেরকে পক্ষীনিবাসের পুনর্বাসন কেন্দ্রে রেখে চিকিৎসা শুরু করা হয়েছে। |
মৃত পাখি দেখাচ্ছেন এক কর্মী। |
বন দফতর সূত্রের খবর, গাছ থেকে আছড়ে পড়ে জখম পাখিগুলির পা ও ডানা ভেঙে গিয়েছে। মৃত ও জখম পাখিগুলির প্রত্যেকের বয়স দেড় থেকে আড়াই মাস। তারা ঠিকমত উড়তে না পারায় বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ায় শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে ৫০ থেকে ২০০ ফুট উঁচু গাছ থেকে মাটিতে আছড়ে পড়ে। বহু পাখি আবার গাছের ডাল-সহ মাটিতে আছড়ে পড়ে। আছড়ে পড়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই অনেক পাখির মৃত্যু হয়।
রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দ্বিপর্ণ দত্ত বলেন, “রবিবার গভীর রাত থেকে সোমবার গভীর রাত পর্যন্ত টানা বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়ার কারণে ১৫০টি পরিযায়ী পাখির ছানা নানাভাবে গাছ থেকে পড়ে মারা গিয়েছে। জখম ১৪টি পরিযায়ী ছানাকে উদ্ধার করে চিকিৎসা করা হচ্ছে।” প্রতি বছর জুন-জুলাই মাস নাগাদ দেশের বিভিন্ন রাজ্য-সহ বিভিন্ন দেশ থেকে ওপেন বিলস্টক, নাইট হেরন, করমোন্যান্ট ও ইগ্রেট প্রজাতির পরিযায়ী পাখি কুলিক পক্ষীনিবাসে আসে। প্রজননের পর ছানারা ওড়া শিখলে তাদেরকে নিয়ে পাখিরা জানুয়ারি-ফ্রেব্রুয়ারি মাস নাগাদ ফিরে যায়। পরিযায়ীদের দেখতে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি বহু পর্যটক পক্ষীনিবাসে ভিড় জমান। পাখিরা পক্ষীনিবাসের কয়েকশো বড় বড় গাছে বাসা বেঁধে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখানে ডিম পাড়ে। |
বন দফতরের গণনার তথ্য অনুযায়ী এবছর পক্ষিনিবাসে ৬৫ হাজার ৩১১টি পরিযায়ী পাখি এসেছে। এবছর নাইট হেরন, করমোন্যান্ট ও ইগ্রেট প্রজাতির পরিযায়ীদের প্রজনন আগে হওয়ায় তারা কিছুদিন আগে ছানাদের নিয়ে পক্ষিনিবাস ছেড়ে চলে গিয়েছে। শুধু ওপেন বিলস্টর প্রজাতির পরিযায়ীরাই পক্ষিনিবাসে রয়েছে।
পশুপ্রেমী সংগঠন পিপল ফর অ্যানিমেলের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক গৌতম তান্তিয়া বলেন, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিযায়ীদের মৃত্যুর ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে একমাস আগে নাইট হেরন, করমোন্যান্ট ও ইগ্রেট প্রজাতির পরিযায়ীরা প্রজনন করে ছানাদের নিয়ে পক্ষীনিবাস ছেড়ে চলে না গেলে এদিন আরও বহু পাখির মৃত্যু হতে পারত।”
|