চোরাশিকারেই কোটিপতি রতিরাম
কটা-দু’টো নয়, ১৪০টা গন্ডারের চামড়া মিলেছিল তার বাড়িতে। উদ্ধার হয় বাঘ-চিতাবাঘের চামড়া-খুলিও। গ্রেফতার করা হলেও বারবার সে জামিন পেয়ে যায়।
এ ভাবেই কার্যত প্রশাসনকে ‘বুড়ো আঙুল’ দেখিয়ে বন্যপ্রাণীর দেহাংশের আন্তর্জাতিক চোরাপাচার চক্র চালায় রতিরাম শর্মা। ‘রাইনো ম্যান অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া’ বলেই সে পরিচিত। পূর্ব এবং উত্তর-পূর্ব ভারতই শুধু নয়, নেপাল, ভুটান, মায়ানমারে ওই পাচার চক্রের জাল ছড়িয়েছে রতিরাম। সম্প্রতি কার্বি আংলং থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ জানায়, প্রচুর টাকার মালিক ওই দুষ্কৃতী এখন জামিনের জন্য লড়াই চালাচ্ছে। অসম পুলিশের আশা, ২০০৯ সালে সংশোধিত ‘অসম বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন’ অনুযায়ী এইবার তাকে কঠোর শাস্তি দেওয়া যাবে।
২০০২ সালে গণেশ গুরুং নামে এক শিকারির কাছ থেকে রতিরামের কথা প্রথম জানতে পারে পুলিশ। ধৃত ওই চোরাশিকারি জানিয়েছিল, বহু বছর ধরে মোটা টাকা দিয়ে তাদের কাছ থেকে গন্ডারের খড়্গ, অন্য প্রাণীর দেহাংশ কেনে রতিরাম। সে নেপালের আদি বাসিন্দা। নেপাল সীমান্ত দিয়েই ওই সব জিনিস পাচার করে। ২০০৩ সালে তেজপুরের একটি হোটেলে চোরাশিকার-চক্র ধরতে হানা দেয় পুলিশ। দু’জন ধরা পড়লেও পালায় রতিরাম। এরপরই তার বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
২০০৬ সালে কোচবিহারের চিলাপাতা রেঞ্জের বনকর্তা এবং পুলিশের যৌথ অভিযানে, ভুটান সীমান্তের জয়গাঁওয়ের বাড়ি থেকে ধরা পড়ে রতিরাম। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় ৪টি চিতাবাঘের চামড়া, একটি বাঘের মাথা ও হাঁড় এবং ১৪০টি গন্ডারের চামড়া! আন্তর্জাতিক চোরাবাজারে সে সবের মোট দাম কয়েক কোটি টাকা। আলিপুরদুয়ার আদালত বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইন অনুযায়ী তাকে ৫ বছরের কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা সাজা দেয়। তাকে জেরা করে পুলিশ জানতে পারে, রতিরামের বিরুদ্ধে অসমের গোলাঘাট, তেজপুর, শিবসাগর ও পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়িতে মামলা ঝুলছে।
বন দফতর সূত্রে খবর, আলিপুরদুয়ার আদালত সাজা দিলেও কলকাতা হাইকোর্ট তার জামিন মঞ্জুর করে। সেই সুযোগে ফের উধাও হয় রতিরাম। বাংলা-নেপালের মধ্যে পাচার চক্রের জাল ছড়ানোর পরিবর্তে অসম-নাগাল্যান্ড-মণিপুরের দিকে নজর দেয় সে। মোরে সীমান্ত দিয়ে খড়্গ পাচার করতে শুরু করে। গত বছর কার্বি আংলং পুলিশ তাকে ডিমাপুর থেকে গ্রেফতার করে।
এরমধ্যে অসম বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনে সংশোধনী পাশ হয়েছে। যেখানে, প্রথমবার বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধে কমপক্ষে ৭ থেকে ১০ বছর কারাবাস এবং দ্বিতীয়বার ধরা পড়লে ১০ বছর থেকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। পাশাপাশি, এ ধরনের অপরাধ জামিন অযোগ্য ধারার অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু গত বছর ধৃত চোরাশিকারি বা খড়্গ-ব্যবসায়ীদের মধ্যে সবার আগে জামিন পেয়ে রতিরামই।
এ বার ফের কার্বি আংলং পুলিশই তাকে গ্রেফতার করল। এসপি মুগ্ধজ্যোতি মহন্ত বলেন, “আমাদের হাত থেকে আর সে বের হতে পারবে না। অভিযুক্তকে জেল হাজতে রাখা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এবং বন দফতরের কাছে রতিরামের পুরনো মামলাগুলির বিবরণ চেয়ে পাঠিয়েছি। চিন্তার কারণ একটাই, অভিযুক্তের টাকার অভাব নেই। জামিনের জন্য মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে সে।”
কাজিরাঙার অধিকাংশ গন্ডার-হত্যা এবং খড়্গ পাচারে রতিরামের নামই জড়িত। উত্তরবঙ্গের প্রধান বনপাল বিপিন সুদ বলেন, “রতিরামের বিষয়ে বিস্তারিত জানি না। খোঁজখবর নিচ্ছি।” কাজিরাঙার অধিকর্তা এন কে ভাসু বলেন, “গত বার কার্বি আংলং পুলিশ শর্মাকে গ্রেফতার করার সময় তার পুরনো অপরাধের নথিপত্র সম্ভবত দেখেনি, তাই ডিফু আদালতে সে জামিন পেয়ে যায়। এ বার পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। আমাদের সাহায্য চাইলে অবশ্যই করা হবে।”
উত্তরবঙ্গে চোরাশিকার-রোধ সংক্রান্ত কাজে নিযুক্ত রাজ বসু বলেন, “রতিরামদের কর্মকাণ্ড কেবল একটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অসম, নেপাল, মায়ানমার, চিনের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ রয়েছে। এ নিয়ে আন্তর্রাজ্য যৌথ মঞ্চ না গড়লে সমাধান সম্ভব হবে না।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.