পদপিষ্ট হয়ে মন্দিরে মৃত ১১৫, লুঠের দায়ে পুলিশ
লাপাকানো দেহগুলো ঘিরে স্বজনদের কান্না, মাটিতে শুকনো রক্ত, বাতাসে অ্যাম্বুল্যান্সের শিস আর চিতার ধোঁয়া সব মিলিয়ে রতনগড় মন্দির চত্বর আজ যেন মৃত্যুপুরী।
সরকারি হিসেব বলছে, ওই মন্দির লাগোয়া সেতুতে রবিবার হাজারো মানুষের ভিড়ে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১১৫ জন পুণ্যার্থীর। অধিকাংশই মহিলা ও শিশু। সেতুর নীচ দিয়ে বয়ে যাওয়া সিন্ধ নদীতেও মিলেছে কয়েকটি দেহ। তাঁরা প্রাণ বাঁচাতে সেতু থেকে ঝাঁপ দিয়েছিলেন বা পড়ে গিয়েছিলেন বলে প্রশাসনের দাবি। কর্তব্যে গাফিলতির দায়ে সাসপেন্ড হয়েছেন জন ২১ পুলিশ।
বিপর্যয়ের পর
রতনগড় মন্দির লাগোয়া সেতুতে মৃতদেহের স্তূপ। ছবি: এ পি।
এই ঘটনায় আগাগোড়া পুলিশকেই কাঠগড়ায় তুলেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। নবরাত্রি উপলক্ষে রবিবার যাঁরা পুজো দিতে গিয়েছিলেন ভোপাল থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে দাতিয়া জেলার ওই মন্দিরে। গুজব ছড়িয়ে বিপর্যয় ঘটানো থেকে শুরু করে আহতদের গা থেকে গয়না খুলে নেওয়া, এমনকী পদপিষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা কমিয়ে দেখাতে সেতুর উপর থেকে নদীতে মৃতদেহ ছুড়ে ফেলার মতো অভিযোগে পুলিশকে যে ভাবে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছে, তা কিছুটা নজিরবিহীন। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের অভিযোগ, রবিবার সকালে লাইন দিয়ে পুণ্যার্থীরা যখন প্রায় ৫০০ মিটার দীর্ঘ সেতুটি পার হচ্ছেন, তখন এক পুলিশই ‘যে কোনও মুহূর্তে সেতু ভেঙে পড়তে পারে’ বলে গুজব রটিয়েছিল। তার পরেই শুরু হয় দৌড়দৌড়ি। অন্যদের ঠেলে, পায়ে মাড়িয়ে সেতু পেরোনোর চেষ্টাতেই ঘটে যায় বিপত্তি। ইতিমধ্যে পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে বলে অভিযোগ। পুলিশের অবশ্য দাবি, বাধ্য হয়েই লাঠি চালিয়েছিল তারা।
এর চেয়েও মারাত্মক অভিযোগ তুলেছেন অনেকে। গীতা মিশ্র নামে আহত এক পঞ্চাশোর্ধ্বা হাসপাতালে শুয়ে বলেছেন, “আমি দেখেছি, পুলিশ বাচ্চাদের দেহ নদীতে ছুড়ে ফেলছিল।” তাঁর এ-ও অভিযোগ, উদ্ধারের সময় অচৈতন্য অবস্থার সুযোগ নিয়ে তাঁর দুল, মঙ্গলসূত্র ও আংটি খুলে নিয়েছে উর্দিধারী পুলিশ।
জখমের তালিকায় রয়েছেন ভিন্দের রামনরেশ শিবহরে। রবিবারের দুর্ঘটনায় ছোট ছেলে গোলুকে হারিয়েছেন তিনি। তিন ছেলেকে নিয়ে রতনগড়ের মন্দিরে যাচ্ছিলেন তিনি। ভিড়ে হঠাৎই হাত ফসকে বেরিয়ে যায় গোলু। পরে সেতু থেকেই উদ্ধার হয় তার দেহ। শিবহরের অভিযোগ, আহতদের পকেট হাতড়াচ্ছিল পুলিশ। স্থানীয় দোকানি তারা সিংহ ও লক্ষণ সিংহের সরাসরি অভিযোগ, পুলিশ দেখাতে চাইছে, ভিড় থেকে বাঁচতে পুণ্যার্থীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে অধিকাংশের। উদ্ধারকর্মীরাও সে দিন দেরি করে এসেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
ডিআইজি (চম্বল রেঞ্জ) ডি কে আর্যর বক্তব্য, “পুলিশের ঘরেও ছেলে-ভাই আছে। গাফিলতি থাকতেই পারে, কিন্তু এমন অমানবিক আচরণের অভিযোগ মিথ্যে।” ডিজি নন্দন দুবের কথায়, “বিচার বিভাগীয় কমিশন গঠন হয়েছে, তাঁরা সব খতিয়ে দেখবেন।” নাসিকের কুম্ভমেলা, জোধপুরের চামুণ্ডা মন্দির, উত্তরপ্রদেশের প্রতাপগড়ে কৃপালু মহারাজের আশ্রম, দেওঘরে ঠাকুর অনুকুলচন্দ্রের আশ্রম ধর্মস্থানে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা মাঝেমধ্যেই ঘটেছে এ দেশে। উঠে এসেছে গুজব থেকে হুড়োহুড়ির তত্ত্ব। নাশকতার সন্দেহও মাথাচাড়া দিয়েছে। রতনগড়ের এই মন্দিরে কিন্তু ঠিক সাত বছর আগে একই দিনে (১৩ অক্টোবর) পদপিষ্ট হয়ে মারা যান ৫৬ জন। সে দিন হেঁটে নদী পেরোতে গিয়েও ভেসে যান অনেকে। তার পরে তৈরি হয় সেতু। এ বার বিপত্তি সেই সেতুতেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.