একতলার তালা লাগানো ফ্ল্যাটটি থেকে দুর্গন্ধ বেরোতে দেখে পরিচারিকা ডেকে এনেছিলেন বাড়ির মালিককে। ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে তালা খুলে দেখা গেল, ঘরের বিছানায় পড়ে রয়েছেন এক যুবক। তাঁর গলায় রুমালের ফাঁস। পচেগলে গিয়েছে দেহটি।
মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটেছে লেক থানা এলাকার পঞ্চাননতলা লেনে। পুলিশ জানায়, মৃতের নাম রাকেশকুমার যাদব (২৮)। বাড়ি বিহারের সমস্তিপুরে। ওই গেস্ট হাউসের মালিক শ্রীনাথ সিংহকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবকই নবমীর সকালে দিন কয়েকের জন্য ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়েছিলেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরও এক যুবক এবং এক তরুণী। তাঁদের কোনও খোঁজ মিলছে না। প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, ওই যুবককে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে। তাঁর দুই সঙ্গীর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বন্ধ ঘরের ভিতরে যুবকের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে লেক থানায় খবর দেন শ্রীনাথবাবু। এর পরেই লেক থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। যায় লালবাজারের পুলিশকর্তারাও। দেহটিকে ময়না-তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতদেহের গলায় একটি সাদা রুমাল ফাঁস লাগানো অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। পুলিশের অনুমান, খুন করার উদ্দেশ্যেই রাকেশকে বিহার থেকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। পুলিশ সূত্রের খবর, সিঁড়ির মুখে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। ঘটনার দিনের ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে একটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করা হয়েছে।
শ্রীনাথবাবু এ দিন জানান, তিনতলা ওই বাড়িটির দোতলা এবং তিনতলায় তিনি সপরিবার থাকেন। বহুতলের একতলায় দু’টি ফ্ল্যাট ভাড়ায় দেওয়া হয়। রবিবার সকালে রাকেশ নামে ওই যুবক আরও দুই সঙ্গীকে নিয়ে ঘর ভাড়া নিয়েছিলেন। সঙ্গে থাকা অন্য যুবক ও তরুণী চিকিৎসা করিয়েই ফিরে যাবেন বলে রাকেশ নিজের নামেই ঘর নেন বলে জানান শ্রীনাথবাবু। বাড়ির পরিচারিকা বিন্দুরানি বেরা এ দিন বলেন, “সোমবার সকালে কাজ করতে এসে দেখি ঘরের বাইরে থেকে তালা দেওয়া। ভাবলাম, পুজোর দিনে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন।” এ দিন সকালেও একই ভাবে ঘর বন্ধ দেখেছিলেন তিনি। ভিতর থেকে তীব্র দুর্গন্ধ পেয়ে বাড়ির লোকজনদের ডেকে আনেন।
শ্রীনাথবাবু এ দিন বলেন, “এর আগেও অনেক বার ঘর ভাড়া দিয়েছি। এ রকম ঘটনা ঘটতে পারে কখনও ভাবিনি।” তিনি জানান, পুলিশ ওই ঘরটি থেকে বেশ কিছু চিকিৎসা সংক্রান্ত কাগজপত্র উদ্ধার করেছে। কলকাতা পুলিশের ডিসি (এসইডি) দেবব্রত দাস বলেন, “প্রাথমিক ভাবে খুন বলেই অনুমান করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হবে। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” এ দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ৯০ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর বৈশ্বানর চক্রবর্তী। একটি বসত বাড়ি কী ভাবে দিনের পর দিন বাণিজ্যিক কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে, এই প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “বাড়ির নথি পুলিশ নিয়ে গিয়েছে। সেগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” |