পুজোর শহর ২ অটো না থাকার ফাঁক
ভরাতে ব্যর্থ বাস

পুজোর ক’দিন সন্ধ্যার পরে বড় রাস্তায় অটো চালানো নিয়ে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই পরিবহণ পরিষেবার সেই ফাঁক পূরণ করার দায়িত্ব চেপেছিল সরকারি বাসের উপর। পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্রও আশ্বাস দিয়েছিলেন, সন্ধ্যা থেকে সারা রাত কলকাতার রাস্তায় প্রচুর বাস মিলবে। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতির সঙ্গে বাস্তব পরিস্থিতির ছিল বিস্তর ফারাক।
যার নিট ফল, সন্ধ্যার পরে পরিবারের লোকজনকে নিয়ে প্রতিমা দেখতে বেরিয়ে নাকাল হয়েছেন অজস্র দর্শনার্থী। একে অটো নেই, তার উপরে বাস অমিল ফলে এক ঘণ্টার পথ পেরোতে লেগে গিয়েছে দ্বিগুণ সময়। কার্যত মেলেনি ট্যাক্সিও। মিটারে যাওয়া তো দূরের কথা, ট্যাক্সিচালকদের চাহিদা এত বেশি ছিল যে বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েকে কোলে নিয়ে হেঁটে এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে পৌঁছেছেন অনেকে। যেমন খড়দহের বিপ্লব বসু। নিউ আলিপুরের একটি প্রতিমা দেখার পরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দরদাম করছিলেন এক ট্যাক্সিচালকের সঙ্গে। শেষে স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে হাঁটা লাগিয়েছিলেন চেতলার উদ্দেশে।
সাধারণ মানুষের এই হয়রানির দায় অবশ্য নিজেদের ঘাড়ে নিতে চাননি বিভিন্ন সরকারি পরিবহণ নিগমের একাধিক কর্তা। উল্টে তাঁরা ওই দায় চাপিয়েছেন পুলিশের ঘাড়ে। তাঁদের দাবি, বিকেল ৪টে থেকে রাত ১টা পর্যন্ত কলকাতার প্রায় সব রাস্তায় প্রচুর বাস ছিল। তার পরে একটু কমিয়ে দেওয়া হয়। তাঁদের দাবি, পুলিশ ঠিকমতো যানজট সামাল দিতে না পারায় এক মণ্ডপ থেকে অন্য মণ্ডপে যেতে বেশি সময় লেগেছে দর্শনার্থীদের। কলকাতা পুলিশ অবশ্য ওই পরিবহণকর্তাদের এই দাবি মানেনি। এক পুলিশকর্তার কথায়, “সন্ধ্যার পরে কোনও রাস্তাতেই তেমন যানজট ছিল না। বহু মানুষ ফেসবুকে সে কথা লিখেছেন।” পুলিশের পাল্টা অভিযোগ, রাস্তায় বাস কম থাকায় গভীর রাতেও মোড়ে মোড়ে দর্শনার্থীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে।
পুজোর ক’দিন যাত্রী-সংখ্যা বেশি থাকায় বাস চালিয়ে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকে। কলকাতা ট্রাম কোম্পানির এক কর্তার হিসেবে, সাধারণ দিনে যেখানে বাস চালিয়ে ১৫ লক্ষ টাকা আয় হয়, পুজোয় সেটাই বেড়ে ১৮ লক্ষে দাঁড়িয়ে যায়। তা হলে রাতের দিকে বাসের দেখা পেলেন না কেন সাধারণ মানুষ?
একাধিক পরিবহণকর্তার ব্যাখ্যা, সার্বিক ভাবে বাস কমে যাওয়াই এর কারণ। ওই পরিবহণকর্তা বলেন, “অটো যাত্রীর চাপ অনেকটাই নেয়। কিন্তু এ বছর সেই সুযোগ ছিল না।” বাসের সংখ্যা যে দিনদিন কমছে, সে কথা বিধানসভায় স্বীকার করেছেন পরিবহণমন্ত্রী নিজেই। ফলে গত বছরে পুজোর ক’দিন যে সংখ্যক বাস রাস্তায় নেমেছিল, এ বছর তা কমেছে। তারই খেসারত দিতে হয়েছে দর্শনার্থীদের। এ বার পুজোর ক’দিন প্রতিদিন গড়ে ৩৮০টি করে সরকারি বাস চলেছে বলে পরিবহণ সূত্রের খবর।
একই যুক্তি বেসরকারি বাস মালিক সংগঠনগুলিরও। জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেট্স-এর নেতা তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সরকার গোঁ ধরে বাসভাড়া বাড়াচ্ছে না। জ্বালানি খরচ বাড়ছে, বাসও কমে যাচ্ছে।” মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির নেতা অবশেষ দাঁ-র বক্তব্য, “পুজোয় বাস চালিয়ে মালিকদের লাভ হয়, এ কথা সত্যি। কিন্তু বাস না থাকলে চলবে কোথা থেকে?” দুই সংগঠনের হিসেব অনুযায়ী, এ বার পুজোয় প্রায় আড়াই হাজার বেসরকারি বাস কম চলেছে। আর মিনিবাস কম চলেছে সাতশোর মতো।
রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র অবশ্য পুজোর সময় রাতের রাস্তায় সরকারি বাস কম থাকার বিষয়টি মানতে রাজি নন। তাঁর বক্তব্য, “পুজোর ক’দিন যথেষ্ট সংখ্যায় সরকারি বাস রাস্তায় ছিল।” পাশাপাশি এ-ও বলেছেন, “রাতারাতি দ্বিগুণ বাস রাস্তায় নামানো সম্ভব নয়। তবে যে সংখ্যক বাস আছে, তার সবই চালানো হয়েছে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.