পুজোর শহর ১ ট্রাফিক স্বাভাবিক রেখে ‘কৃতিত্বের’
মুকুট পুলিশের মাথায়

পুজোর ক’দিন শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে এতকাল দড়ি ধরে জন-স্রোত নিয়ন্ত্রণ করতেন থানার কর্মীরা। এ বার সেই কাজ নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে সাফল্য পেল কলকাতার ট্রাফিক পুলিশ।
ট্রাফিক কর্তাদের দাবি, কখন দড়ি খুলে রাস্তা পার করাতে হবে, কখন দড়ি ধরে জনতাকে আটকে রাখতে হবে তা ট্রাফিক কর্মীরাই ভাল বোঝেন। তাই এ বার সিদ্ধান্ত হয়, ট্রাফিক কর্মীদের উপরেই যান-চলাচল, রাস্তা পারাপারের বিষয়টি ছেড়ে দেওয়া হবে। লালবাজারের এক ট্রাফিক কর্তা জানান, গড়িয়াহাট মোড়, রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, দেশপ্রিয় পার্ক, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ-মহাত্মা গাঁধী মোড়, কলুটোলা, রাসবিহারী কানেক্টর-সহ ২০টি ব্যস্ত মোড়ে ওই ব্যবস্থা চালু হয় চতুর্থী থেকেই। দেখা যায়, আগের বারের চেয়ে মসৃণ হচ্ছে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ।
গত বছরের মতোই নির্দিষ্ট পার্কিং ছাড়া অন্যত্র গাড়ি দাঁড় করাতে দেওয়া হয়নি। ট্রাফিক কর্মীরা জানান, সকাল ৮ থেকে বিকেল ৩টে এবং রাত ১টা থেকে পরের দিন সকাল ৭টা পর্যন্ত দু’টি দল শুধু পার্কিংয়ের উপরেই নজর দিয়েছে। এক ট্রাফিক কর্তা জানান, ষষ্ঠীর রাতে লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের এক অফিসার সপরিবারে দক্ষিণ কলকাতার একটি মণ্ডপের সামনে দাঁড়িয়েছিলেন। তাঁর গাড়ি রাস্তার ধারে ছিল। এক ট্রাফিক কর্মী ওই অফিসারকে রাস্তা থেকে গাড়ি সরাতে অনুরোধ করেন। অফিসার তাঁর পরিচয়পত্র দেখালেও ট্রাফিক কর্মী তাঁকে জানিয়ে দেন, তিনি যে-ই হোন না কেন, গাড়ি তাঁকে সরিয়ে নিতেই হবে। পুজোয় কলকাতাকে সচল রাখতে লালবাজারের ট্রাফিক কর্তাদের এই নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনেছেন কর্মীরা। তাঁরা জানান, বড় রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিংয়ের অনুমতি না থাকায় যানজট হয়নি।
দক্ষিণ কলকাতার একটি ট্রাফিক গার্ডের ওসি জানান, পঞ্চমীর সন্ধ্যা থেকে ষষ্ঠীর সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় স্তরে আলোচনা করে হকারদের বুঝিয়ে শহরের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার ফুটপাথ হকারমুক্ত করা গিয়েছিল। ফলে মানুষ ফুটপাথ ব্যবহার করতে পেরেছেন। কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) সুপ্রতিম সরকার বলেন, “মানুষের সহযোগিতা ছাড়া কোনও কাজই সম্ভব নয়। মানুষ সাহায্য করেছেন। তাই সাফল্য মিলেছে।”
ট্রাফিক কর্তাদের মাথাব্যথা ছিল অটো নিয়েও। বড় রাস্তায় বাস, মিনিবাস, ট্যাক্সির পাশাপাশি অটো চলতে থাকলে যানজট বাড়ে। পুজোর সময়ে সেই যানজট ছাড়াতে বেগ পেতে হয়। সে কথা মাথায় রেখে এ বার ট্রাফিক কর্তারা সিদ্ধান্ত নেন, পুজোর ক’দিন বিকেলের পরে বড় রাস্তাগুলিতে অটো চলাচল বন্ধ থাকবে। অটো চলতে পারে অলিগলিতে।
পুলিশ জানায়, রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ের ধারে একটি মাঠে দক্ষিণ কলকাতার নামী একটি পুজোমণ্ডপে সপ্তমীর রাতে ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। তাই তাঁরা রাসবিহারী অ্যাভিনিউয়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও দেখান। পরিস্থিতি সামলাতে ঘটনাস্থলে হাজির হন ট্রাফিক কর্তারা। তাঁরা জানান, ওই পুজোর উদ্যোক্তারা প্রবেশ ও নির্গমনের নকশা ঠিকমতো করেননি। তার ফলে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। পুলিশ নকশা বদলে দেওয়ার পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
শুধু তা-ই নয়, পুজোয় কলকাতা পুলিশ তারিফ কুড়িয়েছে রোমিওদের ধরপাকড়েও। পুজোর ক’দিনে সারা শহরকে কার্যত মুড়ে ফেলা হয়েছিল প্রায় ৭৫০ সিসিটিভি দিয়ে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই ক্যামেরা ও নজরদারি কাজে লাগিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা গিয়েছে ইভ-টিজারদের। এ ক’দিনে শ্লীলতাহানি ও ইভ-টিজিং-এর অভিযোগে ধরা পড়েছে মোট ২৪ জন।
তবে কলকাতা পুলিশের অফিসারেরা মনে করছেন, পুজোর ক’দিন সব কিছু ঠিকঠাক চলার মূলে রয়েছে পুলিশকর্মী ও অফিসারদের মনোবল বাড়াতে পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ করপুরকায়স্থ-র পাঠানো এসএমএস। ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত নিয়ম করে ইনস্পেক্টর ও তার উপরের পদের অফিসারদের এসএমএস পাঠিয়েছেন সিপি। এক অফিসার বলেন, “আগের দিনের কাজের প্রশংসা করে, সেই দিনের দায়িত্ব পালনের জন্য তৈরি থাকার অনুরোধ খোদ পুলিশ কমিশনার পাঠালে পুলিশ তো পুজোর সময়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেই।” তবে সকলের অলক্ষ্যে কিন্তু ছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুজোর দিনগুলিতে রাতভর জেগে থেকে তিনি শহরের প্রতি মুহূর্তের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নিয়েছেন এবং যোগাযোগ রেখেছেন কমিশনার-সহ অন্যান্য পদস্থ অফিসারদের সঙ্গে। ‘বাড়তি’ উৎসাহের সেটাও একটা বড় কারণ।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.