পুজো উপলক্ষে শহরের সব রাস্তা-সহ অলিগলিতে মোতায়েন ছিল পুলিশবাহিনী। সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পঞ্চমী থেকেই দেখা মিলেছে পুলিশকর্মীদের। তা সত্ত্বেও পুজোর সময়ে চুরি ঠেকাতে পারল না পুলিশ-প্রশাসন।
নিঝুম রাত নয়। দুষ্কৃতীরা তাদের অপরাধের জন্য বেছে নিয়েছিল কখনও দুপুর, কখনও বা ভরসন্ধ্যে। বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগে সল্টলেক থেকে পাটুলি, শহরের বিভিন্ন জায়গায় একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে উৎসবের দিনগুলিতে। যা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে পুজোর দিনগুলিতে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। যদি চুরির মতো অপরাধ ঠেকানো না যায়, তা হলে ঢাকঢোল পিটিয়ে ওই কদিনের এত নিরাপত্তা কীসের জন্য, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ির সামনে একটি ঝিলে প্রতিমা বিসর্জন দেখতে গিয়েছিলেন বৈষ্ণবঘাটা পাটুলি টাউনশিপের বাসিন্দা পোর্ট ট্রাস্টের কর্মী বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য। পুলিশ জানায়, ঘণ্টা দুয়েক পরে তাঁরা বাড়ি ফিরে দেখেন দরজার তালা ভাঙা। আলমারি-সহ ঘরের সব কিছু লণ্ডভণ্ড। রাতেই পাটুলি থানায় অভিযোগ করেন বিশ্বজিৎবাবু। তাঁদের দাবি, নগদ টাকা-সহ কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না খোয়া গিয়েছে।
মঙ্গলবার বিশ্বজিৎবাবু বলেন, “রাত দশটা নাগাদ বাড়ি ফিরে দেখি দরজার তালা ভাঙা। ভিতরে আলমারি-সহ সব কিছু তছনছ। বাড়িতে থাকা সোনার গয়না ও টাকা উধাও।”
সোমবার রাতে বিশ্বজিৎবাবুর বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্য একটি বাড়িতেও একই কায়দায় চুরির ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, বৈষ্ণবঘাটা বাই লেনের বাসিন্দা সমর দাস সোমবার দুপুরে সপরিবার ঠাকুর দেখতে বেরোন। রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ ফিরে দেখেন লোহার গ্রিল কাটা। তদন্তকারীরা জানান, গ্রিল কেটে বাড়িতে ঢোকে দুষ্কৃতীরা। ওই পরিবারের দাবি, কয়েক লক্ষ টাকার সোনা নিয়ে গিয়েছে চোরেরা। তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, দু’টি ঘটনার পিছনে একই দুষ্কৃতীরা আছে। তারা প্রথমে বৈষ্ণবঘাটা বাই লেনে, পরে পাটুলি টাউনশিপের ওই বাড়ির একতলায় হানা দেয়।
দশমীর দিন পরপর দু’টি বাড়িতে চুরির ঘটনায় উদ্বিগ্ন বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, কয়েক মাসের ব্যবধানে এলাকায় একের পর এক চুরি ডাকাতি ঘটছে। পুলিশ প্রশাসন নির্বিকার।
পুলিশ সূত্রের খবর, শুধু দশমীই নয়, পঞ্চমী থেকে দশমীর মধ্যে বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে শহরের বুকে। সব ক্ষেত্রেই দুষ্কৃতীরা বেছে নিয়েছিল ফাঁকা বাড়ি। সপ্তমীর দুপুরে তালা ভেঙে নগদ এক লক্ষ টাকা ও সোনার গয়না চুরির ঘটনা ঘটে সল্টলেকের বিচিত্রা আবাসনে। বাধা দিতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের আক্রমণে আহত হন গৃহকর্তা ও তাঁর মেয়ে। দু’জনের মাথাতেই লোহার রড দিয়ে আঘাত করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশ জানায়, ওই আবাসনে একটি ফ্ল্যাটের তিনতলায় মেয়েকে নিয়ে থাকেন সাংবাদিক অরুণোদয় ভট্টাচার্য। সপ্তমীর দিন দুপুর তিনটে নাগাদ মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন, দরজার তালা ভাঙা। এবং দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। মঙ্গলবার অরুণোদয়বাবু বলেন, “দরজা ভিতর থেকে বন্ধ দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়। কলিংবেল বাজাতেই দুই যুবক দরজা খুলে বেরিয়ে এসে আমার ও মেয়ের মাথায় লোহার রড দিয়ে মেরে পালিয়ে যায়।”
পুলিশকর্তাদের দাবি, ওই বাড়িতে নগদ টাকা এবং সোনার গয়না রাখা আছে, দুষ্কৃতীরা তা জানত। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় কেউ সাহায্য করে থাকতে পারে বলে অনুমান গোয়েন্দাদের। দুষ্কৃতীদের স্কেচ আঁকানো হয়েছে।
সপ্তমীর রাতে চুরি হয় শ্রীনাথ মুখার্জি লেনের একটি বাড়িতেও। বাড়ির সদস্যদের অনুপস্থিতির সুযোগে দুষ্কৃতীরা জানলার গ্রিল কেটে ল্যাপটপ নিয়ে চম্পট দেয় বলে জানায় পুলিশ।
অন্য দিকে, ষষ্ঠীর রাতে বাড়ির ফাঁকা থাকার সুযোগে চুরি হয় গরফা থানা এলাকার গীতাঞ্জলি পার্কে। অভিযোগ, এখানেও দরজার তালা ভেঙে দুষ্কৃতীরা নিয়ে যায় বাড়িতে রাখা কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না ও নগদ টাকা। পুজো দেখে ফিরে চুরির ঘটনা টের পেয়ে বাড়ির লোকেরা গরফা থানায় খবর দেন। এ ছাড়া, পঞ্চমীর রাতে হরিদেবপুরের ব্যানার্জিপাড়ার একটি বাড়ি থেকে দুষ্কৃতীরা নিয়ে যায় একটি সোনার চেন সহ কয়েক হাজার টাকা।
লালবাজার সূত্রে খবর, পুজোর রাতে চুরির ঘটনা নতুন নয়। মূলত বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে ওই দিনগুলিতে দুষ্কৃতীরা হানা দেয়। তদন্তকারীদের দাবি, স্থানীয় মানুষের কাছ থেকে খবর পেয়েই ফাঁকা বাড়িতে হানা দেয় চোরেরা। |