ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যে সাতটা ছুঁইছুঁই। টালিগঞ্জ থেকে দমদমগামী মেট্রো রেলের অধিকাংশ কামরাই তখন দমদম স্টেশনে ঢুকে পড়েছে। হঠাৎই বিকট শব্দ করে থেমে গেল ট্রেন। পিছনে দিকের তিনটি কামরায় তখন নিভে গিয়েছে আলো। বন্ধ হয়েছে শীতাতপ যন্ত্রও। মিনিট কয়েক এই অবস্থা চলার পর কাচবন্ধ কামরায় হাঁসফাঁস করতে থাকেন যাত্রীরা। মঙ্গলবার একাদশীর সন্ধ্যায় এই পরিস্থিতি ক্রমেই ধুন্ধুমার কাণ্ডের আকার নেয় দমদম মেট্রো স্টেশনে। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের হাতে মার খান রেলপুলিশের কর্মীরাও। চলে ট্রেনের জানলা ভাঙচুর। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের অভিযোগে আট জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মেট্রো সূত্রের খবর, বৈদ্যুতির বিভ্রাট থেকে এই সমস্যা।
পুজো মিটে গিয়েছে। কিন্তু এখনও কলকাতার অনেক মণ্ডপে ঠাকুর রয়েছে। ফলে অনেকে এখনও ঠাকুর দেখতে বেরোচ্ছেন। তার উপর পুজোর পরে এ দিনই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসও খোলে। যার জেরে ভর সন্ধ্যায় যাত্রী নিয়ে ঠাসাঠাসি অবস্থায় ফিরছিল দমদমগামী ওই গাড়িটি। দমদম স্টেশনে ঢুকেই যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে থেমে যায় ট্রেনটি। তার পরেই প্রথমে আতঙ্ক এবং পরে তা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। এ দিকে এই ঘটনার জেরে বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার-সহ বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়েন নিত্যযাত্রীরা।
ক্ষুব্ধ যাত্রীরা জানাচ্ছেন, শীতাতপ যন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল অনেকেরই। আটকে পড়া যাত্রীদের উদ্ধার করতে অনেকক্ষণ কেউ আসেননি বলেও অভিযোগ। যদিও আরপিএফ ঠিক সময়ই গিয়েছিল বলেই দাবি মেট্রো কর্তৃপক্ষের।
শেষের একটি কামরায় আটকে থাকা রিনা বসাক বলেন, “কোলে বাচ্চা। গরমে ওরও শরীর খারাপ লাগছিল। ভিড়ে দাঁড়ানো যাচ্ছিল না। তার উপরে এই অবস্থা। বাচ্চার কথা ভেবেই খুব ভয় পেয়ে যাই।”
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, আরপিএফ চালকের দরজা দিয়ে ট্রেনের ভিতর ঢুকে যাত্রীদের বার করে আনার কাজ শুরু করে। কিন্তু ইতিমধ্যেই যাত্রীদের একাংশ গুলি চালিয়ে জানলার কাচ ভাঙার জন্য আরপিএফ-কে জোরাজুরি করতে থাকেন। কিন্তু তাতে বিপদ হতে পারে এই ভেবে আরপিএফ সে কথায় কান দেয়নি। তার পর যাত্রীরা নিজেরাই কয়েকটি জানলার কাচ ভেঙে দেন। তাঁদের ঠেকাতে গেলে উত্তেজিত যাত্রীরা আরপিএফের উপরে চড়াও হন। অভিযোগ, রেলপুলিশের লোকজনকে মারধর করেন তাঁরা। যাত্রীদের মারে আহত হন বেশ কয়েক জন রেলকর্মী।
মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র জানান, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই গাড়ি আটকে যায়। ঘটনার জেরে সাতটা দশ থেকে সাতটা তেত্রিশ পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়। ওই সময় দমদম থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত মেট্রো চলাচল বন্ধ ছিল। কবি সুভাষ থেকে গিরিশ পার্ক পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করেছে। |