বিবাদ মেটাতে গিয়ে যুবক খুন
বিজয়া দশমীর রাতে দুই পাড়ার বিবাদের জেরে খুন হয়ে গেলেন এক যুবক। সোমবার গভীর রাতে সাঁইথিয়া শহরের ঘটনা। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতের নাম শিশু বাগদি (২৬)। নিহতের বাড়ি ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লেট পাড়ায়। ওই ঘটনায় স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর গণেশ দাস-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহতের স্ত্রী। পুলিশ অন্যতম অভিযুক্ত প্রতিবেশী পাড়ার যুবক অজয় দাসকে গ্রেফতার করেছে। জেলার পুলিশ সুপার সি সুধাকর জানিয়েছেন, বাকি অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত কয়েক দিন ধরেই সাঁইথিয়ার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লেট পাড়ার সঙ্গে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের তুর্কি পাড়ার বিবাদ চলছিল। বিজয়া দশমীর রাতে যা চরম রূপ নেয়। লেট পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ, তুর্কি পাড়ার কয়েক জন যুবক মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের পাড়ায় ঢুকে বেশ কিছু দিন ধরে গণ্ডগোল বাধাচ্ছিল। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরে দুই পাড়ার মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। নিহত যুবকের ভাই গোবিন্দ বাগদি-র দাবি, “বিবাদের মীমাংসা করার নাম করে সোমবার রাতে আমার ভাইপো-সহ কয়েক জনকে তুর্কি পাড়ার কিছু যুবক বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যায়। পরে তারা ভাইপোদের উপরে আচমকা আক্রমণ করে। বাকিরা ছুটে পালাতে পারলেও আমার ভাইপো রক্ষা পায়নি। তাঁকে তুর্কি পাড়ার ছেলেরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে।” পালিয়ে আসা যুবকদের থেকে খবর পেয়েই লেট পাড়ার বাসিন্দারা ঘটনাস্থলে যান। সেখান থেকে গুরুতর জখম শিশুকে উদ্ধার করে প্রথমে সাঁইথিয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ও পরে সিউড়ি জেলা হাসপাতালে তারা ভর্তি করেন। রাতে ওই যুবককে সিউড়ি থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হলে পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। অন্য দিকে, তুর্কি পাড়ার বাসিন্দাদের একাংশের পাল্টা দাবি, ঘটনার রাতে লেট পাড়ার লোকেরাই তাঁদের আক্রমণ করেন। ঘঠনায় তাঁদের কয়েক জন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বলে তুর্কি পাড়ার লোকেরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি শিশু বাগদির খুনেও তাঁরা কেউ জড়িত নন বলে দাবি করেছেন। তুর্কি পাড়ার ওই সব দাবি অবশ্য লেট পাড়ার বাসিন্দারা মানেননি।
গত প্রায় দু’ বছর ধরে ওই পরিবারের ছোট ছেলে তুফান বাগদি নিখোঁজ। স্বামী মারা গিয়েছেন আগেই। কয়েক বছর আগেই বিয়ে করেছিলেন নিহত শিশু বাগদি। তাঁর দু’টি ছোট ছোট সন্তানও রয়েছে। বড় ছেলের খুনে দৃশ্যতই ভেঙে পড়েছেন নিহতের মা মমতা বাগদি। “আমার এই ছেলে কোনও ঝুট ঝামেলায় থাকত না। দু’পাড়ার গণ্ডগোল মেটানোর কথা বলে ওকে ছেলেগুলো ডেকে নিয়ে গেল। তাঁকে এ ভাবে খুন করবে আমি স্বপ্নেও ভাবিনি!” বলতে বলতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন মমতাদেবী। আর কোনও কথাই বলতে পারলেন নিহতের স্ত্রী কৃষ্ণা বাগদি।
এ দিকে লেট পাড়ার বাসিন্দাদের দাবি, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গণেশ দাসের নেতৃত্বে এই ঘটনা ঘটেছে। তাঁরা ওই তৃণমূল কাউন্সিলর-সহ ঘটনায় প্রত্যেক অভিযুক্তকে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন। কংগ্রেসের টিকিটে জিতলেও গণেশবাবু সম্প্রতি তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তিনি অবশ্য নিহতের পরিবারের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “কংগ্রেস ত্যাগ করায় রাজনৈতিক চক্রান্ত করে আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে।” এ নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে কংগ্রেস পরিচালিত সাঁইথিয়া পুরসভার পুরপ্রধান বীরেন্দ্রকুমার পারেখ বলেন, “যদি কারও বিরুদ্ধে খুনে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে তাহলে তিনি যে-ই হন না কেন, তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশের আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা কাউন্সিলর শান্তনু রায়ের অবশ্য দাবি, “ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। তবে যে বা যারা শিশু বাগদির খুনে জড়িত হন না কেন, আমরা চাই পুলিশ নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নিক।” পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতকে বুধবার সিউড়ি আদালতে হাজির করানো হবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.