ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক ব্লক, ত্রাণের ব্যবস্থা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বোলপুর |
রবিবার সকালের কয়েক সেকেন্ড ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হল বীরভূমের একাধিক ব্লক এলাকা। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইলামবাজার ব্লক এলাকা। ওই ব্লকের ইলামবাজার ও পাড়ুই থানা এলাকার একাংশ জেলার অন্যান্য এলাকা থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর। জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী বলেন, “ঝড়ে জেলার বেশ কিছু এলাকায় প্রভূত ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত ও জেলা প্রশাসনকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পরিষদের তরফ থেকে ত্রাণ সামগ্রী-সহ আনুসঙ্গিক ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। যে সব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেখানে ত্রিপল, চাল, পোশাক, ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে। আমরা সব দিক নজর রাখছি।” বিদ্যুৎ সংযোগ বিছিন্ন থাকা এলাকায় যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে বলে সভাধিপতি জানিয়েছেন। |
মঙ্গলবার ইলামবাজার ব্লকের ভরতপুর গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র। |
সেচ দফতরের নির্বাহী (ময়ূরাক্ষী উত্তর) আধিকারিক সুজিত কোনার বলেন, “মশানজোড়ের ড্যাম অনেকটা ভর্তি হয়েছে। ধান চাষে এই জল দিতে পারব। এই মুহূর্তে কোথাও কোনও বাঁধ ভাঙা বা এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্ক নেই। যে পরিমাণ জল ছাড়া হয়েছে তা চাষের জন্য।” সেচ দফতর সূত্রে খবর, সোমবার বিকেল থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত তিলপাড়া জলাধার থেকে ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। আবহাওয়ার উন্নতি হওয়ায় মঙ্গলবার এই জলাধার থেকে ১০ হাজার ৮০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়। এই জল মূলত কুশকর্ণিকা, ময়ূরাক্ষী, সিদ্ধেশ্বরী নদী (মশানজোড় পরবর্তী) এলাকার।
জেলা পুলিশ ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল ১১.১৫ নাগাদ ঝড় শুরু হয়। জেলায় ওই ঝড়ের কবলে পড়ে ইলামাবাজার ব্লকের ঘুড়িশা, শীর্ষা পঞ্চায়েত-সহ বোলপুর ব্লকের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়েত, লাগোয়া বর্ধমান জেলার আউসগ্রাম ব্লকের বোনকুল গ্রাম-সহ আশপাশের বেশ কয়েকটি গ্রাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বীরভূম জেলা পরিষদের জনস্বাস্থ্য কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি জাফারুল ইসলাম জানান, ব্লকের শীর্ষা পঞ্চায়তের উত্তরকোনা গ্রামে কমপক্ষে ৬০টি মাটির বাড়ির টিনের, খড়ের চালা এবং অ্যাসবেসটস উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। ঘুড়িশা পঞ্চায়তের কানুর গ্রামের ১৫৬ এবং ভরতপুর গ্রামের ১২৬ বাড়ি-সহ লাগোয়া পাড়ুই থানা এলাকা নিয়ে প্রায় আরও ৫৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভরতপুর গ্রামের গোঁসাইচন্দ্র দাস, গোপাল মণ্ডল, কানুরের বাসিন্দা শেখ নবিরুল, শেখ নফিজুলরা, মন্দিরা বিবি, আসরফ মল্লিকেরা বলেন, “রবিবার বেলা ১১টা নাগাদ আচমকা চারদিক অন্ধকার হয়ে এল। কিছু চিন্তাভাবনা করার আগেই দমকা হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে গেল বাড়ির চাল। কিছুক্ষণের মধ্যে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেল শতাধিক বাড়ি। গোয়ালঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গাছ-গাছালি, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়ে রাস্তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে যায়। স্থানীয় পঞ্চায়েত এবং প্রশাসনের কাছে বিষয়টি জানানো হয়েছে”
এ দিকে বোলপুর ব্লকের রাইপুর-সুপুর পঞ্চায়তের দেউলি গ্রামে শতাধিক বাড়ি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ইলামবাজার থানা এলাকার ৪ জন বাসিন্দা জখম হয়েছেন। তাঁদের স্থানীয় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করিয়ে প্রাথিমক চিকিৎসা করানো হয়েছে। আপাতত সকলে সুস্থ। জেলার সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের খটঙ্গা পঞ্চায়তের খটঙ্গা গ্রামের শতাধিক মাটির বাড়ির টিনের ছাদ, খড়ের চালা উড়ে গিয়েছে এই ঝড়ে। রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা একরকমের বিছিন্ন। একই রকম অবস্থা খয়রাশোল থানা এলাকার ভাসুনিয়া, দুবরাজপুর থানা এলাকার তরুলিয়া গ্রাম। ওই দু’টি গ্রামের প্রায় দুশোর কিছু বেশি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। গৃহপালিত পশুপাখি মারা গিয়েছে এই ঝড়ে। বিদ্যুৎ দফতরের ইলামবাজার গ্রাহক পরিসেবা কেন্দ্রের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র সৌমেন্দ্র পালের নেতৃত্বে দফতরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ করছেন।
বীরভূম জেলাশাসক জগদীশপ্রসাদ মিনা বলেন, “ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব রকম সুযোগ সুবিধা দেওয়া হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীও সরবরাহ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার এলাকার বাসিন্দাদের যাতে কোনও রকম অসুবিধা না হয়, সে দিকে প্রশাসনের নজর আছে।” |