ফের ভূমিকম্প ফিলিপিন্সে। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সকাল আটটা নাগাদ তীব্র ভূকম্পনে কেঁপে উঠল মধ্য ফিলিপিন্স। রিখটার স্কেলে কম্পনের মাত্রা ছিল ৭.২। ক্ষয়ক্ষতির ছবিটা এখনই স্পষ্ট না হলেও ইতিমধ্যে ৯৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এর মধ্যে বোহোলেই মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের।
আমেরিকার ভূতত্ত্ব বিভাগ জানিয়েছে, এ বারের ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল সেবু প্রদেশের সৈকত-শহর বোহোলের কারমেনে। উৎসস্থল মাটি থেকে প্রায় ৫৬ কিলোমিটার গভীরে। প্রথম বড় ধাক্কার পরেই সারা দিনে আরও চার বার কেঁপে উঠেছে মাটি। এই সব ‘আফটার শকে’র মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ বা তার কাছাকাছি। |
ভেঙে পড়েছে শতাব্দী প্রাচীন বাসালিকা গির্জার ঘণ্টা মিনার। |
সরকারি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এ পর্যন্ত ধ্বংসস্তূপের তলা থেকে ও পদপিষ্ট হয়ে মৃত ৯৩ জনের দেহ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। আহতের সংখ্যা শতাধিক। হতাহতের মধ্যে রয়েছেন বেশ কিছু পর্যটকও। রাত নেমে আসায় উদ্ধারের গতি কমে গিয়েছে। কাল উদ্ধার এগোলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে প্রশাসনের আশঙ্কা। বোহোলে যে দিকে তাকানো যায়, শুধুই ধ্বংসস্তূপ। পথ চিরে চলে গিয়েছে খাদ। ধ্বংসের হাত থেকে বাদ পড়েনি শতাব্দী-প্রাচীন গির্জা থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়। জায়গায় জায়গায় দোতলা বাড়িগুলি একেবারে মাটিতে মিশে গিয়েছে।
দেশের জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা জানিয়েছে, ভূমিকম্প টের পেয়ে অনেকেই আতঙ্কে এ-দিক ও-দিক উদভ্রান্তের মতো দৌড়তে থাকেন। তাতেই সেবু স্পোটর্স কমপ্লেক্সের কাছে পদপিষ্ট হয়ে মারা যান তিন জন। বোহোলের গর্ভনর এডগার্ডো ছাট্টো জানিয়েছেন, সিটি হলও ভূকম্পের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। ভেঙে গিয়েছে ওই ভবনের বেশ কিছু অংশ।
|
বিধ্বস্ত বোহোল দ্বীপের প্রাচীন লোবোক গির্জাও। |
আতঙ্ক যায়নি বছর তেইশের জেসা অরিওলা-র। সাংবাদিকদের বললেন, “দেশে আজ ছুটির দিন। তাই একটু বেলা পর্যন্ত ঘুমোচ্ছিলাম। কিন্তু তার মধ্যেই বুঝলাম খাটটা খুব জোরে কেঁপে উঠল। বুঝলাম ভূমিকম্প। ছুটে গেলাম রেঁস্তরাঁর দিকে। ওখানেই আমি হিসাবরক্ষকের কাজ করি। গিয়ে দেখি রেঁস্তরাঁর জানলার কাচগুলো সব ভেঙে গিয়েছে। জিনিসপত্র সব মাটিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে।”
ভূমিকম্পে বোহোল ও তার আশপাশের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক সম্পত্তি ও জীবনহানির খবর এসেছে। সেবুর কিছুই যেন আর আগের অবস্থায় নেই। ভূকম্পনের তাণ্ডবে বাড়িঘর-রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত সবই। কয়েক মুহূর্তের ঝাঁকুনিতেই সমুদ্রঘেরা দ্বীপগুলি পরিণত হয়েছে মাটি আর মৃতের স্তূপে। সরকারি সূত্রে খবর, সেবুতে ১৬ জনের দেহ পাওয়া গিয়েছে।
|
কাঁপছে মাটি। সবার আগে বাঁচাতে হবে শিশুদের।
তাদের নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসছেন নার্সরা। ফিলিপিন্সের সেবু শহরে। |
এ বছরই ৩১ অগস্ট ফিলিপিন্সে যে ভূমিকম্পটি হয়েছিল তার উৎস ছিল সৈকত-শহর গুইয়ান থেকে প্রায় ১০৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, সমুদ্রপৃষ্ঠের ৩২ কিলোমিটার গভীরে। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পের তীব্রতা ছিল ৭.৬। বেশ কিছু পথঘাটের ক্ষতি হয়। ভেঙে পড়ে কয়েকটি সেতুও। তবে সে বার কোনও প্রাণহানি ঘটেনি। সেবুর মেয়রের সহকারি জাদে পোন্স বলেন, “ঈদ উপলক্ষে আজ সারা দেশে ছুটি ছিল। এটাই যা রক্ষে। না হলে স্কুল-কলেজগুলির যে ভাবে ক্ষতি হয়েছে, তাতে বাচ্চাদের প্রাণহানির আশঙ্কা থাকত খুব বেশি।”
বোহোলের এক বাসিন্দা বলেন, “সকাল আটটার সময় আমি মারিবোজকের একটি হলের ভিতরে ছিলাম। হঠাৎ আলো নিভে যায়। তার পরই কেঁপে ওঠে গোটা বাড়িটা। আমরা ছুটে আসি রাস্তায়। দেখি, বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন। তখন কিছু লোককে বলতে শুনলাম দেশের সব চয়ে পুরনো বাসালিকা গির্জাও ক্ষতির হাত থেকে বাঁচেনি।” ভূমিকম্পের জেরে ক্ষতি হয়েছে সেবুর আর্ন্তজাতিক বিমানবন্দরটিরও। বেশ কয়েকটি বিমান বাতিল করা হয়েছে। উদ্ধারের কাজে সেনাবাহিনীর বেশ কিছু বিমান ও জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে আপাতত। |